October 6, 2024, 10:29 pm
আব্দুর রহমান: বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখা ২১ জুন ২০২১ সোমবার নিজস্ব কার্যালয়ে – জননী সাহসিকা বেগম সুফিয়া কামালের ১১১ তম জন্ম দিবস পালন করেছে। মহিলা পরিষদের সহ সভাপতি শামীমা আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত আলোচনাসভা সঞ্চালনা করেন মহিলা পরিষদের সাধারন সম্পাদক জ্যোৎস্না দত্ত। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সম্মানীয় অতিথি সাতক্ষীরা ১,২,৩ নং ওয়াডের পৌর কাউন্সিলর নুরজাহান বেগম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,মহিলা পরিষদের সহ সভানেত্রী সালেকা হক কেয়া, কোষাধ্যক্ষ হাফিজা খাতুন, রুপা মিত্র, সোনিয়া সুলতানা সুইটি প্রমুখ।বক্তারা তাদের বক্তব্যে কবি সুফিয়া কামালের বর্ণাঢ্য জীবনী তুলে ধরেন।
কবি সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশাল জেলার শায়েস্তাাবাদ নবাব পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। বেগম রোকেয়ার আদর্শে উজ্জীবিত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ ধণ্য সুফিয়াকামাল ছিলেন কবি, সংগঠক, নারী মুক্তি আন্দোলনের যোদ্ধা এবং সকলের প্রিয় খালাম্মা।
নারী মুক্তির আদর্শ কবি সুফিয়া কামালেরকাব্য রচনা তাঁকে পরিচিতি দিয়েছিলো, কিন্তু মানুষকে তিনি আকর্ষণ করেছিলেন তার আদর্শ, কর্ম, মানবতাবোধ আর দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ দিয়ে।
৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণআন্দোলন, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে তিনি যেমন ছিলেন সক্রিয় তেমনি যুদ্ধপরবর্তি দেশ গঠনে তার ভূমিকা ছিলো অণবদ্য। সুফিয়া কামাল, তাঁর পরিচয় শুধু কবি নয় শুধু নারী আন্দোলনের নেত্রী নয়, তিনি ছিলেন জাতীয় জীবনে সকল প্রগতিশীল লড়াই সংগ্রামের অকুতোভয় নেত্রী।
সুফিয়া কামাল বেড়ে উঠেছেন কন্যা সন্তান হিসেবেই, নারী হিসেবে মুখোমুখি হয়েছেন সকল বৈষম্যের, পারিবারিক জীবনেও সহ্য করেছেন নানাবিধ বিচ্ছেদ বেদনা, কিন্তু তাই বলে মানুষ হিসেবে কখনোই ভুলে যাননি তার দায়বদ্ধতা। নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বা সংগঠক হবার জন্য পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজে ‘নারী’ পরিচয়কে প্রতিবন্ধক হিসেবে গ্রহণ করেননি বরং শক্তি হিসেবে প্রকাশ করেছেন।
তিনি নারী হিসেবে শুধু ‘মা’ এর ভূমিকা পালন করেননি, নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে নিজের আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সংগঠক হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন “বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ” সহ বিভিন্ন ধরনের সংগঠন যেমন, গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি, বেগম ক্লাব, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, ছায়ানট, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ইত্যাদি ।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তাঁর শিক্ষা তাঁকে ধর্মীয় গোড়ামি, ধর্মান্ধতা, স্বৈর ও সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার করেছিলো । নারীমুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েননি তিনি, কিন্তু কখনোই নারীর সমঅধিকার প্রশ্নে আপোষ করেননি
তাই ২০ শে নভেম্বর ১৯৯৯ সালে বাঙালি জাতি হারায় মানবমুক্তি এবং নারী মুক্তি আন্দোলনের এই মহিয়সী নারীকে।
সুফিয়া কামালের জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু মাইল ফলক
১৯১৮ সালে সুফিয়া কামাল বেগম রোকেয়ার সান্নিধ্য লাভ করেন এবং তাঁর আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন।
১৯২৩ এ তিনি প্রথম ছোট গল্প ‘সৈনিক বধূ’ লিখেন যেটা ‘তরুন’ নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯২৫ সালে তিনি বরিশালে মহাত্মা গান্ধীর সাথে দেখা করেন।
১৯২৬ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ ছাপা হয়।
১৯২৯ সালে তিনি ‘আঞ্জুমান-ই-খৈয়াতিন-ই-ইসলাম’ নামক মুসলিম নারী সমাজে যোগদান করেন।
১৯৩১ সালে তিনি ভারতীয় নারী ফেডারশনের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৩৩-১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং সেখানে তাঁর বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন কবি আব্দুল কাদির এবং কবি জসিম উদ্দীন।
১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ’ ‘সাঁঝের মায়া’ কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৪৭ সালে তিনি সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার প্রথম সম্পাদক হন।
১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্থান মহিলা সমিতির সভাপতি হন।
১৯৪৯ সালে তিনি সাপ্তাহিক সুলতানা পত্রিকার সহসম্পাদক হন।
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় ছোট গল্প ‘কেয়ার কাঁটা’
১৯৬৯ সালে তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হন।
১৯৮৮ সালে তিনি প্রথম আত্মজীবনী লিখেন ‘এ কালে আমাদের কাল’
২০০২ সালে বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত হয় ‘সুফিয়া কামাল রচনা সমগ্র’
বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত কিছু পুরষ্কার ঃ
১৯৬০ সালে পাকিস্থান সরকার আমলে পান জাতীয় পুরস্কার তমঘায়ে-ইমতিয়াজ যা ১৯৬১ সালে তিনি প্রত্যাখান করেন।
১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার।
১৯৬৪ সালে বেগম ক্লাব পুরস্কার
১৯৭৫ সালে অনন্যা নারী পুরস্কার।
১৯৭৬ সালে একুশে পদক।
১৯৭৭ সালে শেরেবাংলা জাতীয় সাহিত্য পুরস্কার।
১৯৯৮ সালে স্বাধীনতা পদক (বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা)।
উল্লেখযোগ্য কিছু সাহিত্যকর্ম:
কেয়ার কাঁটা (গল্প সংকলন)
মায়া কাজল (কাব্য)
উদাত্ত পৃথিবী (কাব্য)
একাত্তরের ডায়েরী (স্মৃতিচারণ)
Comments are closed.