February 11, 2025, 11:38 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
দেবহাটায় মাদক ব্যবসায়ীর ৫’শ বোতল ফেনসিডিল লুটে নিল দূর্বৃত্তরা

দেবহাটায় মাদক ব্যবসায়ীর ৫’শ বোতল ফেনসিডিল লুটে নিল দূর্বৃত্তরা

দেবহাটা সীমান্তে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাচালানিরা। পুলিশ, বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকা স্বত্ত্বেও বিস্তৃর্ন ইছামতির জলসীমা পেরিয়ে অবৈধপথে ভারত থেকে মাদকের চালান পারাপার কোনভাবেই যেন থামছেনা। বৃহষ্পতিবার (২ মার্চ) রাত দেড়টার দিকে নদী সাঁতরে ভারত থেকে আনা আসাদুল নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর ৫শ বোতল ফেনসিডিলের এমনই একটি চালান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইছামতি নদীর চরশ্রীপুর বেড়িবাঁধের ওপর পৌঁছানোর পর তা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো বাঁশি বাজিয়ে লুটে নিয়েছে একদল দূর্বৃত্ত। মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম আন্ত: জেলা ডাকাত চক্রের সদস্য দেবহাটার ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ডাকাতের ছেলে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিস্তৃর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে আসাদুল সিন্ডিকেট। আর প্রশাসন নিয়ন্ত্রনসহ চোরাকারবারিদের সাথে আর্থিক চুক্তিবদ্ধ ও নদী সাঁতরে ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশে আনায়ণের দায়িত্বে রয়েছে চরশ্রীপুরের হাচিমের ছেলে শাহিন, জাহাপুর গ্রামের সুকুমার ওরফে বাচা’র ছেলে নব মুসলিম তারেক, ঘলঘলিয়ার খালেকুল ও কোমরপুরের আনারুলের ছেলে আলমগীরসহ একদল মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে ফেনসিডিলের চালান লুটের ঘটনাটি যেন রীতিমতো ‘চোরের ওপর বাটপারি’। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এনিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তের বেশ কয়েকটি চোরাকারারি সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের দাবি, ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিরা অনেক সময় কেবলমাত্র বিশ^স্ততার ভিত্তিতে সম্পূর্ন বাকিতে এসব ফেনসিডিলের চালান বাংলাদেশে পাঠায়।

বেচাকেনার পর মাদকের মূল্য ভারতীয়দের পরিশোধসহ লভ্যংশের টাকা দু’দেশের সিন্ডিকেট ভাগাভাগি করে নেয়। ফেনসিডিলের এই চালানটির বিপুল অর্থ লোপাটের জন্য মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল সিন্ডিকেট নিজেরাই লুটের নাটকটি সাঁজিয়ে ভারতীয় সিন্ডিকেটের সামনে মঞ্চস্থ করেছে। ফেনসিডিল গুলো কাছাকাছি কোথাও তারা লুকিয়ে রেখেছে। আসাদুল ও শাহিনকে আইনের আওতায় নেয়া হলে লুট হওয়া ফেনসিডিলের চালানটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করতে সক্ষম হবে বলেও জানিয়েছে তারা। এদিকে ফেনসিডিল লুটের পর বৃহষ্পতিবার দুপুরে মাদক ব্যবসায়ী আসাদুল সিন্ডিকেটের সদস্যদের উপস্থিতিতে চালানটি নদী পারাপারে নিয়োজিতদের ধরে নিয়ে কয়েক দফায় নির্যাতনসহ একটি পালসার মোটর সাইকেল কেড়ে নেয়া এবং জোরপূর্বক তিনটি ননজুডিশিয়াল খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিলেছে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের বিরুদ্ধে। ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালানটি নদী পারাপারের দায়িত্বে থাকা আলমগীর জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা আর্থিক চুক্তিতে রাতের আধারে ভারত থেকে বিভিন্ন মালামালের চালান নদী সাঁতরে বাংলাদেশে আনায়ণের কাজ করেন। এসব মালামালের চালান দেশে পৌঁছানোর পর চরশ্রীপুরের শাহিন তাদের শ্রমমূল্য পরিশোধ করে। কয়েকদিন আগে শাহিনের কথামতো তিনি এবং তারেক অবৈধপথে ভারতে যান।

বুধবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে ভারতের শাঁকচুড়োর রিয়াজুল, মোমেন ও বারাসাতের আকরাম নামের তিন চোরাকারবারি বস্তাভর্তি মালামালের চালানটি বাংলাদেশে পার করে শাহিনের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী আসাদুলের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তাদের হাতে দেন। বৃহষ্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তারা নদী পেরিয়ে ওই চালান নিয়ে সীমান্তের চরশ্রীপুর স্লুইজ গেইট সংলগ্ন বেড়িবাঁধে পৌঁছান। সেখানে তাদের সাথে মিলিত হয় সিন্ডিকেট সদস্য খালেকুল। এরপর তারা ফেনসিডিল নিয়ে বেড়িবাঁধ থেকে নেমে রাস্তায় পৌছাতেই একদল দূর্বৃত্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো টর্চলাইট জ¦ালিয়ে এবং বাঁশি বাজিয়ে তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা বস্তাভর্তি ফেনসিডিলের চালান ফেলে পালিয়ে যান। আলমগীর আরও জানায়, চালানটি ছিনতাইয়ের পর বৃহষ্পতিবার দুপুরে মাদক ব্যবসায়ী আসাদুলের সাঙ্গপাঙ্গরা তাদের ধরে নিয়ে পারুলিয়ায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের সামনে হাজির করে নির্যাতন করে। পরে তাদের একটি পালসার মোটর সাইকেল কেড়ে নিয়ে জোরপূর্বক কয়েকটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় মাহবুব আলম খোকন নামের সাবেক ওই জনপ্রতিনিধি। সবশেষে কয়েকদিনের মধ্যে ফেনসিডিলের মূল্য বাবদ ৬লাখ টাকা তাদের হাতে তুলে দেয়ার শর্তে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় উল্লেখ করে আলমগীর বলেন, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার পর থেকে ওই চক্রটি তাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে মোটা টাকা চাঁদা দাবি করে হুমকি দিচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব আলম খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকৃত ফেনসিডিল গুলো উদ্ধারের জন্য কয়েকজন আমার সাথে যোগাযোগ করে। পরে তারা চালান পারাপারে নিয়োজিতদের আমার কাছে ধরে আনে। একপর্যায়ে ওই শ্রমিকদের একটি পালসার মোটরসাইলে আটক রেখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিই। তাদের কোন নির্যাতন করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরে আনারুল নামের অপর আরেক চোরাকারবারির মধ্যস্থতায় আটকে রাখা মোটর সাইকেল ও স্ট্যাম্প ফেরত দিয়ে দিয়েছি’। এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, ফেনসিডিল ছিনতাইয়ের ঘটনাটি শুনেছি। ইতোমধ্যেই পুলিশ সদস্যরা ঘটনাটি তদন্তে নেমেছে। তাছাড়া নির্যাতন, মোটর সাইকেল আটকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়া বা চাঁদা দাবির ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com