February 14, 2025, 5:07 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: 1linenewsagency@gmail.com
পানি দিবস: উপকূলবাসীর প্রত্যাশা

পানি দিবস: উপকূলবাসীর প্রত্যাশা

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে কোন না কোন দূর্যোগে লন্ড ভন্ড হয়ে যায় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল। নড়বড়ে বাঁধে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়িবাঁধ উপচে লোনা পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। যার ফলে এসব জায়গায় দেখা দেয় তীব্র খাবার পানির সংকট। সারাবছরই এখানে খাবার পানির সংকট থাকলেও দুর্যোগ কিংবা বর্ষাকালে ভাঙনের ফলে এটি আরো প্রকট আকার ধারণ করে। যে কারনে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশ পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় জনপদে নিরাপদ পানির অভাবে দেখা দিয়েছিলো নানা চর্ম রোগ। দু বছর আগে আম্ফানের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পরের বছর ইয়াশ যেন উপকূলীয় মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। সুপার সাইক্লোন আম্পানে উপকূলের বেড়িবাঁধ ভেঙে সর্বত্র লোনা পানি ঢুকে পড়ে। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় জনপদের একমাত্র পানির উৎস পুকুরগুলো। যার ফলে খাওয়া কিংবা অনন্য কাজের জন্য ব্যবহারিত পানির ব্যাপক সংকট দেখা গেছে। দূর গ্রাম থেকে এক কলস পানি আনতে একজন নারীর প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। দেখা যায়, শুধু মাত্র পান করার কাজে ব্যবহার করলেও পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি থাকায় দিনে দু’বার পানি আনতে যেতে হয়। এসময় অনন্য কাজে এই পানি কাজে লাগানো তাদের কাছে বিলাসিতা বা কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। পরিমিত পানির যে ব্যবহার সেটিও তারা করতে পারে না। একজন মানুষের যে পরিমান পানি পান করার কথা সংকট থাকায় সেটিও তারা পারে না। দেখা গেছে, সংকটকালীন সময়ে সরকারী বা বেসরকারি ভাবে পানির জীবানু কাটানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্তু কথা হলো সেই পানযোগ্য পানিই যদি না থাকে তাহলে এসব সামগ্রী দিয়ে কি হবে! তবে ভালো লাগার বিষয় হলো দূর্যোগকালীন টিম পজেটিভ নামে একটি সংগঠন এই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। তারা এসমস্ত জনপদের মানুষদের নিরাপদ পানি সরবারাহের জন্য একটি ব্যবস্থা করে। যানবহনে করে পানি নিয়ে সেখানে তারা বিতারন কর। নিশ্চয় সবকিছুর উর্দ্ধে ছাত্রলীগের কেন্দীয় সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানীর এ কাজটি প্রসংশিত হয়েছে। আসলে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের এসব মানুষ সারা বছরই অবহেলিত। তাদের দু’বেলা আহারই মাঝে মাঝে তাদের কাছে অনেক বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তার উপর সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এই বিশেষ নিয়ামতই পান করা যখন অলীক স্বপ্ন হয়ে সামনে আসে তখন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই যেন আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। এ জনপদের মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে সারা বছর কিংবা দূর্যোগকালীন সময়ে সরকারি বেসরকারী ভাবে ত্রাণের পাশাপাশি সুপীয় পানি দেওয়া শুরু করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জনপদে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করলে দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়। উপকূলীয় গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ শ্যামনগর আশাশুনির বেশ কয়েকটি জায়গায় খাওয়ার পানির অতীব প্রয়োজন। তবে আশার খবর হলো এসব বিষয় নিয়ে টনক নড়েছে জেলা প্রসাশন, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় এনজিও কর্মকর্তাদের৷ জেলা প্রসাশন থেকে বলা হয়েছে, উপকূলীয় দুই উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে খাবার পানির তীব্র সংকট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এসব এলাকায় সরকারি একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খাবার পানির সংকট কিছুটা কমবে। তবে এলাকায় সুপেয় পানি সংকট দূর করতে পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দুর্যোগপ্রবণ বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে খাবার পানির সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে প্রতিঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি রিভার্স অসমোসিস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আরো কয়েকটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে যে যাই বলুক না কেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া এই বিপুল সংখ্যাক মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য সরকারকে উপকূলীয় জনপদ নিয়ে কাজ করার সময় সুপেয় পানির কথাটাও ভাবতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনার ফলে এ সংকট দূর করা সম্ভব।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com