September 10, 2024, 10:39 am
স্টাফ রিপোর্টার: আপন দুই ভাই কর্তৃক পৈতৃক সম্পত্তি দখল ও হত্যা-গুমসহ নানান হুমকিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে একটি পরিবার। পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষা করতে এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পরিবারটি। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য রফিকুল হাসান বলেন, আমার এবং আমার বড়ভাই আব্দুর রকিব এর পৈতৃক রেকর্ডীয় সম্পত্তি আপন দুইভাই মো. রাজিউল হাসান ও মো. রবিউল ইসলাম কর্তৃক জোর পূর্বক দখল ও জীবননাশের হুমকি থেকে রক্ষা পেতে এবং রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে নির্বিঘেœ বসবাস করতে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন। সম্পত্তির তপশীল: আর,এস যৌথ খতিয়ান-৬৯৮, আর,এস দাগ নং-১৫৬৩, ১৮৩৫, ১৮৩৭, ১৮৪০, ১৮৪১, ১৮৪৩, ১৮৪৬, ১৮৪৮। মোট ২০৬ শতকের মধ্যে ৮২.৪ শতক। আর,এস যৌথ খতিয়ান-৩৯২, আর,এস দাগ নং- ৭৫৪৭, ৭৫৪৮, ৭৫৬৫ ও ৭৫৭৪। মোট ৮৪ শতকের মধ্যে ৩৩.৬ শতক। আর,এস খতিয়ান-৩৯১, আর,এস দাগ নং-১৮৪৭, ১৮৫৩। মোট ৪৪ শতক। আর,এস খতিয়ান-১৯৫১, আর,এস দাগ নং-১৫৬০, ১৮৫০, ১৮৫৪। মোট ৫৮ শতক। সর্বমোট ২১৮ শতক। তিনি আরো জানান, ১৯৭৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পিতার মৃত্যুর পর পুরাতন সাতক্ষীরা কলবাগানে প্রায় ২৩ বিঘা সম্পত্তি ছিল। উক্ত সম্পত্তি ১৯৭৭ সালে ওয়ারেশ সূত্রে ৯.৭৫/ ৬.২৫ অনুপাতে ১ম এবং ২য় পক্ষের মাঝে বন্টন করা হয়। ১৯৯০ সালে মাঠ জরিপের মাধ্যমে ১ম পক্ষের প্রাপ্ত পুরাতন সাতক্ষীরা কলবাগানের সব সম্পত্তি আব্দুর রউফ তার মা আকলিমা খাতুন এর সম্মতিতে সকলের উপস্থিতিতে ৫ ছেলের মাঝে সমানভাবে বণ্টন করে দেন। যার এভিডেভিট সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়াও পুরাতন বাড়ি রাজার বাগান থেকে ৩ মেয়ে ও ৫ ছেলের মধ্যে সম্পত্তির ভাগ বণ্টন করে দেয়। সেই মোতাবেক বর্তমান আর,এস রেকর্ড হয়েছে। ১৯৯৩ সালে আব্দুর রকিব ও রফিকুল হাসানের অংশ বাদ দিয়ে বাকি সাত জনের অংশ দুই বাড়ি থেকে প্রাপ্ত পিতার এস.এ রেকর্ডীয় ৩ একর ৮১ শতক সম্পত্তি বন্ধক রেখে এড. আব্দুর রউফ সুন্দরবন রাইচ মিলের নামে ১৯ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা অগ্রণী ব্যাংক সাতক্ষীরা প্রধান শাখা থেকে ঋণ নেয়। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অর্থ ঋণ আদালতে মামলা হয়। মামলা নং- ৩/২০০৩। উক্ত মামলা ২৫ মে ২০০৪ সালে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হয়। এরপর জারি মামলা হয়। মামলা নং- ২/২০১১। এই মামলা ২০১১ সালের ২৪ জুলাই নিস্পত্তি হয়। অপরদিকে ১৯৯৫ সালে মো. রাজিউল হাসান রাজারবাগানের মায়ের ৮০ শতক ও পুরাতন সাতক্ষীরা কলবাগানের ৫৩ শতক সম্পত্তিসহ মোট ১৩৩ শতক সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে নিউ সাতক্ষীরা ব্রিকসের নামে অগ্রণী ব্যাংক সাতক্ষীরা প্রধান শাখা থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নেয়। যথা সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অর্থ ঋণ মামলা হয়। মামলা নং- ২/২০০৩। পরবর্তীতে সেটা জারি মামলা হয়। মামলা নং- ৩/২০১১। এই মামলা ২৭ অক্টোবর ২০১১ সালে নিস্পত্তি হয়। পরবর্তীতে খারিজ খতিয়ানের মাধ্যমে ব্যাংক নিজ নামে নামপত্তন করে। যার খতিয়ান নং- ৮৯৯/১/১, তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১৭ এবং সেই মোতাবেক ব্যাংক ১৪২৫, ১৪২৬ ও ১৪২৭ বঙ্গাব্দের খাজনা পরিশোধ করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে রাজিউল হাসান আকলিমা খাতুনের অংশের বন্ধকীয় সম্পত্তি এবং অন্যান্য সম্পত্তি মিলে ২ একর ৬৭ শতক সম্পত্তি ছলচাতুরি ও প্রতারণার মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিস্টার অফিস হতে দলিল তৈরি করে নেয়। দলিল নং- ৩৬৩১/২০২০। এরপর তথ্য গোপন করে নামপত্তন করে। যার খতিয়ান নং-২১৮৬, জমির পরিমাণ: ২ একর ৬৬ শতক। ভূয়া নামপত্তনের বিরুদ্ধে মিস কেস করার পর এসিল্যান্ড সুমনা আইরিন ১৯/৪/২২ তারিখে উক্ত নামপত্তন বাতিল করেন। মিস কেস নং- ২১/২০২১-২০২২ এবং এই দলিলের বিপক্ষে আব্দুর রকিব ও রফিকুল হাসান বাদী হয়ে সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ১ম আদালতে দেওয়ানী মামলা করেছেন। মামলা নং- ৯০/২১। এ ছাড়া দেওয়ানী মামলা ৩০/২২ উক্ত আদালতে চলমান রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজসে রাজিউল হাসান উভয় ঋণের আওতাধীন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ বিঘা বন্ধকীয় সম্পত্তি ৩৬৩১/২০২০ নং দলিল দ্বারা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। শুধু তাই নয়, আব্দুর রকিব ও রফিকুল হাসানের সম্পত্তি ভোগ দখলের পায়তারা এবং জমির ফল-ফলাদি জোর পূর্বক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে রাজিউল হাসান ও রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। এসব অপকর্মে বাধা প্রদান এবং নিষেধ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, হত্যা, গুমসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদান করে রাজিউল হাসান ও রবিউল ইসলাম। নিরুপায় হয়ে রফিকুল হাসান সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আদালতে দুই জনের বিরুদ্ধে নন জিআর মামলা করেন। মামলা নং- ৯৩/২২। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় রাজিউল হাসান ও রবিউল ইসলাম জীবননাশের হুমকি ও গুম করার ভয়ভীতি দিয়ে যাচ্ছে। হত্যা-গুমসহ নানান ভয়ভীতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন রফিকুল হাসান। তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। রফিকুল হাসানের ছেলে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আমার পিতা রফিকুল হাসানের চাকুরির সুবাদে এবং আমার পড়াশুনার কারণে দীর্ঘদিন বাড়িতে না থাকায় আমার ছোট চাচা রাজিউল হাসান ও ন চাচা রবিউল ইসলাম আমাদের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। আমার ছোট চাচা ও ন চাচার সম্পত্তি ব্যাংকে বন্ধক থাকলেও তারা আমার পিতার ও বড় চাচার সম্পত্তি জবর দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে ছোট চাচা আমাকে আবরার ফাহাদের মতো মেরে লাশ গুম করে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং বলে সাতক্ষীরায় তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। এর পূর্বে সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে আক্রমণের শিকার হয়ে আমি গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানায় ১৭৩০ নং সাধারণ ডায়েরি করি। বর্তমানে আমার দুই চাচার ভয়ে আমাদের পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমাদের জান-মালের নিরাপত্তা ও দুই চাচার দখলদারিত্ব এবং নানান হয়রানীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।