September 10, 2024, 10:54 am
প্রাকৃতিক দূর্যোগে বার বার বিধ্বস্ত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল। নদীর পানি বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দেয় এই উপকূলজুড়ে। আবারো নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চরামুখা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর দূর্গাবাটি গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রামে। আবারো মানবেতর জীবনযাপন করছে শতশত পরিবার। দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। বিগত দিনে আঘাত করা আয়লা, সিডর, আম্ফানে বিধ্বস্ত এসব মানুষ আজও উঠে দাঁড়ানোর সাহস পায়নি। এর উপর প্রতি বছর সামান্য ঝড়-ঝঞ্ঝা তো রয়েছেই। সাম্প্রতিক সময়ে এসব অঞ্চলজুড়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে এবং আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। জোয়ারের প্রভাবে নদীর পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে ভেঙে গেছে এসব অঞ্চলে থাকা নড়বড়ে বেড়িবাঁধ। যার ফলে আবার নতুন করে ডুবেছে মৎস্য ঘের, পুকুর, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি। পানিবদ্ধতায় স্থবির হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধের বেশকিছু অংশ নড়বড়ে ছিলো। যার ফলে পানির তীব্র চাপ সহ্য করতে না পেরে সেসব বেড়িবাঁধ ভেসে চলে গেছে। ভেঙে বিস্তৃত অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুরু হয়েছে আয়লা, আম্ফানের মতো মানবেতর জীবনযাপন। কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের সাতটি গ্রামে বর্তমান পাঁচশতাধিকের বেশি পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। আগের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবার এমন বিপর্যয় তাদেরকে সর্বশান্ত করে ফেলেছে। ছোট ছেলেমেয়ে, পরিবারে বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরিত করতেও তারা বেশ ভোগান্তিতে পড়ছে। প্রায় একযুগ আগে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় বিধ্বস্ত উপকূলের এসব অঞ্চলে আজ-অব্দি খাবার পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর উপর অতিবৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জলাবদ্ধতায় দক্ষিণ পশ্চিম উপকূল এলাকায় লবণ পানির প্রভাবে এবং সুপেয় পানির উৎস না থাকার কারণে উপকূল অঞ্চলের মানুষ খাবার পানির চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর ফলে তারা টাইফয়েড জ্বর, রক্ত আমাশয়, ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসমস্ত রোগ তাদের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পশ্চিম ও পূর্ব পোড়াকাটলা, দূর্গাবাটি, কলবাড়ি, আড়পাঙ্গাসিয়া গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসমস্ত অঞ্চলে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে যে কোনো মুহূর্তে আবারো বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। আর বছর না ঘুরতেই যদি আবারো এমন বিপর্যয়ে পড়ে তাহলে তাদের দুঃখ দুর্দশার সীমা অতিক্রম করবে। ইতোমধ্যে তারা বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে নিজেরা সংস্কারের কাজে নেমে পড়েছে। কিন্তু তাদের আক্ষেপ, প্রতিবছরই এমন ভাবে কাজ করতে করতে তারা ক্লান্ত। তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহের আর কোন পথ তারা খুঁজে পাচ্ছে না। গত বছরের ২৬ শে মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশের প্রভাবেও কিন্তু তাদের উপর পড়েছিল। যার রেশ কিন্তু আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। এজন্য উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে তা নাহলে মানচিত্র থেকে এসব অঞ্চল অতিদ্রুত বিলীন হয়ে যাবে।
তবে এতো দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও তারা আশা করে পথ চেয়ে বসে আছে তাদেরকে ঘিরে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার দিকে। কিছুদিন আগে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় উপকূলীয় এলাকায় পুরোনো বাধ সংস্করের পাশাপাশি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ (শ্যামনগর) পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা উপজেলায় একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে যার পোল্ডার নং- ১৪/১। এখানে এক হাজার ৭২ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ দুটি বাজেটের ফলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন নদী ভাঙনে নি:স্ব হওয়া উপকূলীয় অঞ্চলের এসব মানুষ। তবে এ জনপদের মানুষকে বাঁচাতে, জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে ইতোমধ্যে যে প্রকল্প দুটি পাশ হয়েছে সেটি সুপরিকল্পিতভাবে এবং স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের খাবার পানির সংকট, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থায় সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে উপকূল থেকে উদাত্তকণ্ঠে আহব্বান জানাচ্ছি।
Comments are closed.