September 9, 2024, 12:01 pm
ভাঙ্গন কবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কার করতে যেয়ে দু’পাশের বাঁধ বাগানসহ চরে গড়ে তোলা বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। দ্বীপ ইউনিয়ন পদ্মপুকুরকে ঘিরে থাকা ৭/২ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত ঐ বাঁধ রক্ষায় সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বহু বছরের চেষ্টায় পাশের চরে ঐ কৃত্রিম বনভূমি গড়ে তোলা উঠেছিল। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইয়াস তান্ডবের পর শুরু হওয়া সংস্কার কাজ করতে যেয়ে বাঁধ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখা সেই বনভূমিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ঘটনাটি শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুরের পশ্চিম পাতাখালি সংলগ্ন ঝাপা বেড়িবাঁধ এলাকার। পাশ দিয়ে প্রবাহিত খোলপেটুয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে থেকে উপকূলীয় বাঁধ রক্ষায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে স্থানীয়দের পাশাপাশি সামাজিক বনবিভাগ বনায়নের মাধ্যমে কৃত্রিম ঐ বনভূমি গড়ে তোলে।
অভিযোগ উঠেছে খরচ সাশ্রয় করতে সংস্কার কাজের দায়িত্বে পাওয়া ঠিকাদারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে গাছগুলো মারা হচ্ছে। বাঁধ মেরামত সংক্রান্ত পাউবোর নীতিমালা অগ্রাহ্য করে ঝুড়ি ও কোদালসহ শ্রমিকের পরিবর্তে এস্কেভেটর ব্যবহার করায় উপরিভাগসহ বাঁধের পাশে বেড়ে ওঠা নানা প্রজাতির হাজারো গাছ উপড়ে ফেলতে হচ্ছে। গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে শ্রমিকের সহায়তায় ঝুড়ি ও কোদাল দিয়ে বাঁধ সংস্কারের আবেদন জানালেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা পাউবো কর্তারা তা আমলে নিচ্ছে না বলেও দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে ঝাপা বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছে দেখা যায় দুটি এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধের ১২/১৪ ফুট দূরবর্তী চর থেকে মাটি কেটে নিয়ে ভাঙ্গনকবলিত অংশে ফেলা হচ্ছে। ঝুড়ি কোদালের পরিবর্তে এস্কেভেটর ব্যবহার করায় সেখানে থাকা গাছগুলো মাটি কাটার সময় উপড়ে ফেলা হচ্ছে। আবার কেটে নেওয়া মাটি বাঁধের উপরে নেয়ার সময় সামনে থাকা গাছগুলো মাড়িয়ে দিয়ে এস্কেভেটরকে নির্দিষ্ট জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। পরক্ষণে হাতে গোনা স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধের উপরে ফেলা মাটি সমতলের কাজ করছে।
ঝাঁপা গ্রামের সাধুচরণ মন্ডল জানান পাহারা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গাছগুলো রাখা হলেও বাঁধ সংস্কারের নামে তা উপড়ে ফেলা হচ্ছে। বারবার বলা সত্ত্বেও ঠিকাদার কিংবা পাউবোর কর্তারা তা আমলে নিচ্ছে না বলেও তিনি জানান। বিকাশ মন্ডল নামের স্থানীয় গ্রামবাসী জানান ঝুড়ি কোদাল দিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ করার কথা। কিন্তু খরচ বাঁচাতে এস্কেভেটর ব্যবহার করতে যেয়ে গাছগুলোকে মারা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া সামাজিক বন বিভাগের প্রতিনিধি পিরইয়ামিন ইসাক জানান ঝাপা বেড়িবাঁধ এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে সংস্কার কাজ করলে তাদের ১০ সিডলিং কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ২ সিডলিং জায়গা জুড়ে দুই হাজারের বেশি গাছ কাটা পড়বে। তিনি অভিযোগ করেন গাছগুলোকে রক্ষার জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে ঝুড়ি কোদাল নিয়ে কাজ করতে অনুরোধ করা হল তারা মারমুখী আচরণ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে নিযুক্ত শ্রমিকরা জানায় মাটির টেনে নেওয়ার সময় সামনে থাকা কিছু গাছ মারা পড়ছে। এস্কেভেটর এ কাজ করতে গেলে সামনে থাকা গাছগুলো বাঁচানো যায় না বলেও তারা মন্তব্য করেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান এডভোকেট আতাউর রহমান বলেন বাঁধের সংস্কার কাজ করার ক্ষেত্রে গাছের তেমন কোন ক্ষতি হবে না। এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা সামান্য কিছু বাবলা গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া এস্কেভেটরযোগে মাটি নেওয়ার সময় সামনে চলে আসা কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সামাজিক বন বিভাগের শ্যামনগর উপজেলার দায়িত্বে থাকা ফরেস্ট অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, এস্কেভেটর দিয়ে বাদ সংস্কারের ফলে হাজারো গাছ মারা পড়ছে। বিষয়টি জানাতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেবকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পাউবোর নীতিমালায় বাত সংস্কারের ক্ষেত্রে এস্কেভেটর ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানা নেই।
সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার আলমগীর হোসেন জানান কাজের দ্রুতগতির জন্য ঠিকাদার এস্কেভেটর ব্যবহার করছে। তবে গাছের ক্ষতি হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই ঠিকাদারের সাথে কথা বলছি।
Comments are closed.