দেশের খবর: দেশ থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ভারতে পাচার, ঘুষ আদায় ও চোরাই গবাদিপশুর অবৈধ হাট বসিয়ে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সিলেটের আলোচিত ওসি আহাদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।সোমবার (১৪ অক্টোবর) সিলেটের সিনিয়র স্পেশাল জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ বজলুর রহমান মামলা আমলে নিয়ে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সিলেটকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর আইনজীবী এম মঈনুল হক বুলবুলের দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে বিচারক এ রায় দিয়েছেন।আদালতসূত্র জানায়, ১০ ও ১৩ অক্টোবর মামলার দুদফা শুনানি শেষে সোমবার সিনিয়র স্পেশাল জজ এবং সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান এ মামলা আমলে নিয়ে দুদক সিলেটের উপপরিচালককে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।মামলার আসামিরা হলেন- কানাইঘাটের দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল, দর্পনগর পশ্চিম গ্রামের তাজিম উদ্দিন, জহিরুল ইসলাম জহির, মো. আবু রায়হান পাভেল, মুসলিম উদ্দিন, মাছুগ্রাম গ্রামের এম মামুন উদ্দিন, দক্ষিণ কুয়রেরমাটি গ্রামের শাহাব উদ্দিন এবং কানাইঘাট থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ ও গোয়াইনঘাট থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল আহাদ।
এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল আহাদ দুই মাস আগে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় যোগদান করেন। রোববার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখায় পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে জেলার শ্রেষ্ঠ ওসির সম্মাননা দেন পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। সম্মাননা পাওয়ার একদিন পরই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হলো। এর আগে তিনি কানাইঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। সেখানেই আবদুল আহাদ দুর্নীতি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজারে আবদুল গফুর ওয়াকফ স্টেটের ভূমি ব্যবহার করে কানাইঘাট থানার তৎকালীন ওসি মো. আবদুল আহাদের প্রত্যক্ষ মদদে দীঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এম মামুন উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে দীঘিরপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো আবু রায়হান পাভেলকে বাজারের হাসিল আদায়কারী সাজিয়ে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে পুলিশ ও বিজিবির নামে ঘুষের টাকা আদায় করেন।এ বাজারে ভারত থেকে গবাদিপশু চোরাইভাবে আনতে বাংলাদেশি ৪৫০ কোটি টাকা আলী হোসেন কাজল ও তাজিম উদ্দিন তাদের নিযুক্ত লোকজন দিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন। টাকা পাচার ও চোরাচালানের পশুর হাট পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকা এ অবৈধ বাজার থেকে আদায় করা হয়।
মামলার বাদী এম মঈনুল হক বুলবুল জানান, গত ১ আগস্ট এ বাজারে কোরবানির পশু কিনতে গেলে তার কাছেও আসামিরা পুলিশের লাইনের (ঘুষ) নামে ৮০০ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটি হলে বিষয়টি ওসি মো. আবদুল আহাদকে জানালে তিনি এর কোনো প্রতিকার না করে ম্যানেজ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এর পরই বিশাল দুর্নীতির বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি ১৮ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আদালতে মামলা করেন।বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব হুসাইন জানান, এটি একটি বড় দুর্নীতির মামলা। এ মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় চোরাচালনের গরুর হাট এটি। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে এ বাজার থেকে সিলেট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাচালানের গরু সরবরাহ করা হয়।অভিযোগের বিষয়ে ওসি আবদুল আহাদ বলেন, আদালত কী আদেশ দিয়েছেন, অভিযোগের ভিত্তি কী তা আপনাদের যাচাই করে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। বাদীর সঙ্গে আমার একটু দূরত্ব রয়েছে।আমি যদি ৪৫০ কোটি টাকা পাচার করে থাকি, তা হলে এখনই আমাকে নজরবন্দি করা উচিত।তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।