February 14, 2025, 5:13 am
পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে কোনমতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না বাঘ ও হরিণ শিকার ও নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাঁকড়া আহারণ ও মূল্যবান কাঠ পাচার। সাতক্ষীরা রেঞ্জের মধ্যে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন হওয়ায় রেঞ্জ কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম একটি দালাল চক্রের সিন্ডিকেট তৈরি করে সুন্দরবন উজাড়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রেকর্ড সৃষ্টি করে চলেছে। ওই দালাল চক্রের মাধ্যমে সুন্দরবনের চলছে বাঘ হরিণ নিধন মূল্যবান কাট পাচার ও নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ কাঁকড়া আহরণ। এ সমস্ত ঘটনায় স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছে নিরব ভূমিকায়। এলাকাবাসী বলছে, নুরুল আলমের খুঁটির জোর কত দূর। তার সহযোগিতা পেয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে শিকারীরা। সম্প্রতি বন বিভাগ ও সিপিজির সদস্য সহ র্যাব ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের হাতে হরিণ ও বাঘের চামড়া আটক হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবনের কয়েকটি এলাকায় একাধিক চোরাই শিকারি চক্র সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে। এদের একদল সুন্দরবনে, আরেক দল পরিবহনে ও আরেক দল বেচাকেনার জন্য লোকালয়ে থাকে। বনের মধ্যে থাকা দলটি জবাইকৃত হরিণের ছবি ভিডিও অনলাইনের মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে ক্রেতাদের কাছে। যার কারনে হরিণের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ দলের সদস্যরা ধরা পড়ায় বেরিয়ে এসেছে এ রকম তথ্য। বন বিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী বন বিভাগের কাছে হরিণ শিকারিদের ১০৮ জনের একটা তালিকাও রয়েছে। এর মধ্যে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনে ৪২ জন,কোবাদক স্টেশনে ৩০ জন,কদমতলা স্টেশনে,২০ জন ও কৈখালী স্টেশনে ১৬ জন। তালিকা ছাড়াও আরো অনেকে জড়িত রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপকূলীয় এলাকায় অনেকে জানিয়েছে। হরিনগর ও গাবুরা এলাকার অনেকে জানান,অনেকেই বন থেকে হরিন শিকার করে লোকালয়ে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বললে উল্টো তাদের হয়রানি করা হয়। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চায় না। সম্প্রতি গাবুরা গ্রামবাসী এক শিকারীকে হরিণ সহ আটক করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় তাদেরকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে, আবার কখনো তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে হরিণ শিকার করে আসছে। বর্তমানে হরিণের মাংস খুলনা বাগেরহাট সহ ঢাকাতেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তথ্য মিলেছে। তবে বন বিভাগ বলছে, আগের তুলনায় হরিণ শিকারি অনেক কমে গেছে। তারা আরো বলেছে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী রক্ষায় তথ্য প্রদানকারী কে পুরস্কার বিধিবালা২০২০ অনুমোদনের ফলে সুন্দরবনে অনেক অপরাধ কমে গেছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে বাঘ গননার কাজ। বন বিভাগের তথ্য মতে সাতক্ষীরা রেঞ্জে ৩ শত ৭৬টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৮টি ক্যামেরা চুরি করে চোরারা। বিষয়টি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বন বিভাগের নজরে আসে। ১২ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী সুন্দরবনের অভিযান শুরু করে ৫টি নৌকা ও ১৪ জেলেকে নিষিদ্ধ এলাকা থেকে আটক করে ১৪ ফেব্রুয়ারি,বন মামলা প্রদান পূর্বক তাদেরকে জেল হাজতে পাঠান। অভিযোগ রয়েছে আটককৃতদের নৌকা থেকে জব্দকৃত মাছ কাঁকড়ার সামান্য কিছু জব্দ দেখাইয়ে বেশিরভাগ বিক্রি করে দেওয়া সহ লুটপাট করে নেওয়া হয়। একই দিনে জেলেদের সংবাদের ভিত্তিতে সুন্দরবনের মুরালি খাল থেকে বন বিভাগ মৃত বাঘের কঙ্কাল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শ্যামনগর থানায় জিডি হয়েছে বলে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বাদল স্বীকার করেছেন। এলাকাবাসীর মতে চোরা শিকারীরা বাঘ মেরে চামড়া ছাড়িয়ে ফেলে গেছে। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা হরিণের মাংস আটক করার খবর রয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি নিষিদ্ধ এলাকা থেকে ৩ জন জেলেকে আটক করে বন মামলায় কোটে চালান দেওয়া হয়েছিল। নিষিদ্ধ এলাকা থেকে আটকৃত জেলেরা ও তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে,তারা দালালদের মাধ্যমে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সহকারী বন সংরক্ষক মহোদয়ের সাথে মুঠো ফোন বার বার ফোন দিয়ে রিসিব না হওয়ায় মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলমের সাথে কথা হলে,তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন। সুন্দরবন রক্ষায় শ্যামনগরের সুধীজন বন বিভাগ সহ আইন প্রয়োগ কারী সংস্থাকে আরো তৎপর হওয়া ও তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি করেছে।
Comments are closed.