December 2, 2023, 5:37 am
মলিন মর্ম মুছায়ে চির মঙ্গল কামনায় সাতক্ষীরায় স্কুলে স্কুলে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯কে বরণ করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বরণ উপলক্ষে সরকারি নির্দেশনায় জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজগুলোতে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুরাতন জীর্ণতাকে বিদায় জানিয়ে নতুনের জয়গানে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে সুর ও ছন্দের আবেশ। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই ছিল জাগরণের গান।
পুরোনো জরাজীর্ণকে দূরে ঠেলে নতুন আলোয় অবগাহন করে সর্বস্তরের মানুষ। ঘরে ঘরে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। হাজার বছরের ঐতিহ্যের বহমানতায় শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে বাঁধাভাঙা উল্লাসে।
মহামারিকালের প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরে যায় বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর। পহেলা বৈশাখে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো সব গ্লানিকে মুছে ফেলে সবাই গেয়ে উঠে নতুন দিনের গান। ১৪২৮-এর আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার হিসাব মিটিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের পথচলা। জাতিধর্মনির্বিশেষে সর্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে গেয়ে ওঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।
বাংলার গ্রাম, শহর, বন্দর, পথঘাট-সব জায়গায় দোলা দেয় পহেলা বৈশাখ। নাচে-গানে, ঢাকে-ঢোলে, শোভাযাত্রায় বরণ করা হয় নতুন বছরকে।
শোভাযাত্রায় গরুরগাড়ি, ঘোড়া, পালকি, ধামা, কুলো, জাল, খারা, ঢাক, ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র ও উপকরণ দেখা যায়। এ ছাড়া সাপুড়ে, ঘটক, চাষী, জেলে, কামার, কুমার, তাঁতীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের তৈরী জিনিসপত্রও দেখা যায় শোভাযাত্রায়।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিসুর রহমান জানান, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বর্ণিল পোশাক পরে সুর ও ছন্দের আবেশে শোভাযাত্রা বের করে। পুরো বাঙালিয়ানায় মেতে ওঠে স্কুল ক্যাম্পাস। বর্ষবরণের অবিনাশী গানের সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে শহরের অলিগলি।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজী মোমিনউদ্দীন বলেন, পহেলা বৈশাখে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাঙালি সাজে সেজে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কন্ঠে কন্ঠে ছিল বাংলা গানের সুর। ছিল পুঁথিপাঠের আয়োজন।
সাতক্ষীরা নবারুন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, পহেলা বৈশাখে বর্ণিল শোভাযাত্রার পাশাপাশি গ্রামীন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা নেচে-গেয়ে, অভিনয় করে এবং হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলোকে প্রদর্শন করে আমাদের শহুরে সংস্কৃতিকে মনে করিয়ে দিয়েছে ‘একদিন বাঙালি ছিলাম রে…।’
সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, জেলার ৭টি উপজেলার ১ হাজার ৯৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২ লাখ ১১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রত্যেকটি স্কুলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ করা হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আয়োজন করে আনন্দময় অনুষ্ঠানমালা।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার ৭টি উপজেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকমিলে ৬০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবমূখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়েছে। পহেলা বৈশাখে শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে। বিশেষ করে এবারের বৈশাখ বরণে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় বর্ণিল আয়োজনে। আনন্দ-উল্লাসের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা দিবসটি পালন করেছে।
Comments are closed.