April 16, 2024, 7:45 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাফিজুর রহমানকে উলঙ্গ করে মারপিট ও ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাফিজুর রহমানকে উলঙ্গ করে মারপিট ও ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ

গত ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরার একটি আবাসিক হোটেলে সাবেক এক সেনা সদস্য সাংবাদিক হাফিজুর রহমানকে উলঙ্গ করে ফিল্মি স্টাইলে শারিরীক নির্যাতন করেছে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার এই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল রাতে শহরের বৈশাখী হোটেলে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে দৈনিক সাতনদী পত্রিকার কালিগঞ্জ প্রতিনিধি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাফিজুর রহমান (৬০)কে বিবস্ত্র করে তাকে বেধড়ক মারপিটের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের ও তার সহযোগী হাফিজুর রহমান শিমুলকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সাতক্ষীরায় কর্মরত ২৯জন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠণের ১৪ জন নেতৃবৃন্দ রোববার (৩০ এপ্রিল) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন। সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, হাবিবুল্লাহ বাহার, জামালউদ্দিন, মামুনুর রহমান, গোপাল মন্ডলসহ কয়েকজন ওই আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দমধুসূধনপুর গ্রামের এলাহী বক্স গাজীর ছেলে আব্দুল কাদের একজন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। ২০১৩ সালে একই গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব সরদার, শ্রীধরকাটি গ্রামের যুবলীগ নেতা শেখ ছিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। তার ভয়ে এলাকার অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পায় না। বিগত ইউপি নির্বাচনে জয়লাভ করে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগষ্ট মাসে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের খলিশাবুনিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে এক সন্তানের জননী শারমিন আক্তার রিমাকে বিয়ে করে আব্দুল কাদের। এরপর ও অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে ও সে সংক্রান্ত ভিডিও পেয়ে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কাদেরকে শহরের ৮নং ওয়ার্ডের বিবাহ রেজিষ্টারের মাধ্যমে তালাকনামা পাঠায় শারমিন আক্তার রিমি। তালাকনামা পেয়েও তার উপর অধিকার ফলাতে যেয়ে বারবার নির্যাতনের বিষয়টি রিমির চাচা জাতীয় পার্টির নেতা সাংবাদিক আব্দুল হাকিম অবহিত করেন কালিগঞ্জের সাংবাদিক হাফিজুর রহমানকে। সে অনুযায়ি খোঁজখবর নিয়ে কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য সংগ্রহ করেন ওই সাংবাদিক। একপর্যায়ে আব্দুল কাদের তার তালাক দেওয়া স্ত্রী শারমিন আক্তারের একটি অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য দেয় সাংবাদিক হাফিজকে। শারমিন ও কাদের উভয়ের অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও চিত্র সাংবাদিকের হাতে এসে যাওয়ায় তারা বিপদ বুঝতে পেরেভেদাভেদ ভুলে হাফিজকে বিপাকে ফেলার কৌশল নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় টাকার বিনিময়ে শারমিন আক্তার ওই ভিডিও চিত্র নেওয়ার কথা বলে সাংবাদিক হাফিজকে ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে হোটেল বৈশাখীতে আসতে বলে। পরিকল্পনা মাফিক কাদের ও তার দলবল সেখানে আগে থেকে উপস্থিত থাকে। হোটেলে ঢোকার সাথে সাথে মোবাইলে ভিডিও চালু রেখে হাফিজকে জোরপূর্বক জামা প্যান্ট খুলতে বাধ্য করে শারমিন ও কাদেরসহ তাদের ভাড়াটিয়া বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে নির্যাতনের মুখে হাফিজ তার পোশাক খুলতে বাধ্য হয়। তখন তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ভিডিও ফুটেজ কোথায় বল এমন কথা বলতে বলতে রক্তাক্ত জখম করে কাদের। প্রতিবাদের একপর্যায়ে শারমিন জুতো দিয়ে পেটায় হাফিজকে। টানা ৪১ মিনিট বিবস্ত্র অবস্থায় হাফিজকে মারপিটের চিত্র ধারণ করে তা বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় কাদের ও তার গ্রামের বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান শিমুল। একপর্যায়ে পুলিশ হাফিজ ও শানরমিনকে থানায় নিয়ে যেয়ে আব্দুল কাদেরের দায়েরকৃত ২০১২ সালের পর্ণগ্রাফি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরদিন আদালতে পাঠানো হয়। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. আব্দুস সামাদ, অ্যাড. জিয়াউর রহমানসহ কয়েকজন সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল কাদের মামলায় শারমিন আক্তার রিমিকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও আসামীর কলামে তাকে খলিষাবুনিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের মেয়ে হিসেবে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া অনৈতিক সম্পর্ক করার জন্য শারমিন ও হাফিজুর রহমান হোটেল বৈশাখীতে এলে তাদের বিরুদ্ধে ২৯০ ধারায় মামলা হওয়ার কথা। অথচ অনৈতিক সম্পর্কের বাস্তবতা না পাওয়ায় পুলিশ ২৯০ ধারায় মামলা না নিয়ে শারমিনকে নিজের স্ত্রীর দাবিদার দেখানো আব্দুল কাদেরের দায়েরকৃত পর্ণগ্রাফি মামলার আসামী করেছে হাফিজকে। তবে কাদেরের মোবাইল ফোনে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শারমিনের আপত্তিকর ছবি থাকা ও তা ব্লাকমেইল করতে সাংবাদিক হাফিজকে সরবরাহ করার কারণে তার বিরুদ্ধে পুলিশ কেন পণ্যগ্রাফি আইনে মামলা নিলো না ? এ ছাড়া হোটেলে বিবস্ত্র করে হাফিজের উপর নির্যাতন ও তা বিভিন্ন সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে আব্দুল কাদের, শারমিন আক্তার, হাফিজুর রহমান শিমুল, ইয়ারব হোসেন, আরিফ হোসেন, আব্দুস সালামদের বিরুদ্ধে কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ও পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা হবে না? জামায়াত নেতা আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরিতে তার আপত্তিকর ভিডিও চিত্র সাংবাদিকের ডকুমেন্ট সংগৃহীত থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তি প্রকৃত দোষিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিংকন নামে এক ব্যক্তির পোস্ট হবুহু তুলে ধরা হলো: এ কেমন নির্যাতন? এরা কি মানুষ না অন্য কিছু? একটা মানুষ কে ডেকে নিয়ে রুমের ভেতর সংঘবদ্ধভাবে পশুর মত পিটিয়ে উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এটা কি অপরাধ নয়? মোঃ হাফিজুর রহমান হাফিজ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৯৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন। আমি যতটুকুই জানি তিনি একজন প্রতিবাদী সাংবাদিক। সেই কারণে তিনি অনেকের কাছেই অপ্রিয়। যে ব্যক্তি তাকে নির্যাতন করছেন তিনি কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের একজন ইউপি সদস্য। আর ঐ মহিলার সঙ্গে এই মেম্বারের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। যাহার অনেকগুলো তথ্য সাংবাদিক হাফিজ এর কাছে ছিল। যার নিষ্পত্তি করার জন্য তাকে কৌশলে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে একটি সঙ্ঘবদ্ধ টিম তার উপরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ করে এবং সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে। হাফিজ যদি আপত্তিকর অবস্থায় থাকেন তাহলে মহিলা কেন বোরকা পরা ছিল? হোটেল রুমের বেডে কোন বেডশীট নাই কেন? আর সেখানে ইউপি সদস্য কি করছিল? আর ভিডিও বা কে করলো? বিষয়টি নিয়ে মহিলা যদি পর্ণগ্রাফি মামলা করতে পারে? তাহলে যাহারা সাংবাদিক হাফিজ কে উলঙ্গ করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করলো এবং সেটি ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলো। এটা কি পর্নোগ্রাফির আইনে পড়ে না? হাফিজ যদি প্রকৃত অপরাধী হয় তার সাজা হোক। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com