March 29, 2024, 2:08 pm

Notice :
সাতক্ষীরা প্রবাহ পত্রিকায় নিউজ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
সাতক্ষীরায় ১০ লক্ষ মানুষ মাছ চাষের উপর নিরর্ভরশীল

সাতক্ষীরায় ১০ লক্ষ মানুষ মাছ চাষের উপর নিরর্ভরশীল

জেলায় দিনের পর দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এ সম্পদ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার প্রধান পেশা কৃষির পরই মাছের অবস্থান। প্রায় ১০ লক্ষ নারী ও পুরুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ চাষের উপর নিরর্ভরশীল। চাষীদের অভিমত মৎষ্য উৎপাদনে সাতক্ষীরায় যেন নীরব বিপ্লব চলছে। জেলার জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়ে চলতি বছর অতিরিক্ত ৮১ হাজার মেট্রিক টন মাছ দেশের অন্যান্য জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে। মৎস্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ফলে জেলাতে একদিকে যেমন নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি সমৃদ্ধি হয়েছে জেলার অর্থনীতি। সব মৎস্য চাষিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারলে জেলায় মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে কয়েকগুণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বর্তমানে মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ জড়িত থাকলেও সাতক্ষীরা জেলায় মৎস্য খাতে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ জড়িত দাবী সংশ্লিষ্টদের।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে মানুষের মাছ খাওয়া বেড়েছে ১২২ শতাংশ। বিশ্বের সাতটি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকের বেশি আসে মাছ থেকে। বাংলাদেশ প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ আসে মাছ থেকে। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে উঠে এসেছে-বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। বিশ্বে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মাছ উৎপাদন হয়েছে দেশে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যার অপার সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরার মৎস্য খাত ও সমুদ্রম্পদ।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় এক লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। যেখানে জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার ৫৪৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত ৮১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টনের মধ্যে একাংশ বিদেশে রপ্তানি এবং অবশিষ্ট মাছ দেশের অন্যান্য এলাকায় সরবরাহ করা হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে জেলাতে ৫০ হাজার ১৮টি পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের চাষ হচ্ছে। এছাড়া জেলায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর লবণাক্ত জমিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। জেলায় মৎস্য হ্যাচারি রয়েছে ২৫টি, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে ৪টি, মৎস্য আড়ৎ রয়েছে ৩২টি। এছাড়া ২৮৫টি মৎস্য ডিপো, ৪৪টি বরফকল, ১৫টি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ৫৮টি পাইকারী মৎস্য বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা বছর মাছ বাজারজাত করা হয়।

জেলা মৎস্য বিভাগের বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, সাতক্ষীরার চিংড়ি বিদেশে রপ্তানির বাজার দখল করেছে। এখানে উৎপাদিত হচ্ছে সব ধরনের সুস্বাদু সাদা মাছ। চিংড়ির পাশাপাশি কৈ, মাগুর, শিং, শোল, পাঙ্গাস, মনোসেক্স তেলাপিয়া, কার্প জাতীয় মাছ ছাড়াও জেলাব্যাপী কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার ৫৫ হাজার ১২২টি বাগদা চিংড়ি ঘের ও ১১ হাজার ৬৩৮টি গলদা চিংড়ি ঘেরের এক চতুর্থাংশে আধা নিবিড় ও নিবিড় চিংড়ি চাষ করা গেলে জেলার চিংড়ি উৎপাদন ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে বলে জানানো হয়। বেসরকারি হিসাবে বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা আরো বেশি। এসব ঘেরের মিষ্টি পানিতে ধান ও মাছ এক সাথে চাষ করা গেলে সাতক্ষীরায় মৎস্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হতে পারে এ খাতে সংশ্লিষ্টদের দাবি। সূত্র জানায় জেলায় বাগদা ও গলদা পোনার চাহিদা প্রায় সাড়ে ৩৪৪ কোটি। এর মধ্যে বাগদা পোনার চাহিদা ৩৩৪ কোটি এবং গলদা পোনার চাহিদা ১০ কোটি ৫৫ লক্ষ। জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় নিবন্ধিত ৪৯ হাজার ১৭৫জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।

এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় দুই হাজার ১০৫টি, তালায় এক হাজার ২৯৫টি, দেবহাটায় দুই হাজার ৮২৯টি, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২১৭টি, কালিগঞ্জে ১৪ হাজার ৫৫৯টি ও শ্যামনগরে ১৩ হাজার ১৫৮ এবং কলারোয়ায় দুই হাজারটি। সূত্র জানায়, জেলায় ৮১ হাজার ৪৩২জন মাছ চাষি রয়েছে। মৎস্য খাতকে আরো উন্নত করে তুলতে জেলার ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ জমির মালিককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের মাছ চাষে আগ্রহী করে তুলতে জেলা মৎস্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৈ, মাগুর, শিং, শোল, পাঙ্গাস, মনোসেক্স তেলাপিয়া ছাড়াও জেলাব্যাপী কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার ৫৪ হাজার ৯৩৫টি বাগদা চিংড়ি ঘের ও সাড়ে ১১ হাজার গলদা চিংড়ি ঘেরের এক চতুর্থাংশে আধা নিবিড় ও নিবিড় চিংড়ি চাষ করা গেলে জেলার চিংড়ি উৎপাদন ৮ থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বেসরকারি হিসাবে বাগদা ও গলদা চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা আরো বেশি। এসব ঘেরের মিষ্টি পানিতে ধান ও মাছ এক সাথে চাষ করা গেলে সাতক্ষীরায় মৎস্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হতে পারে বলেও জানানো হয়।
প্রকৃত মাছ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া, মৎস্য বিভাগের তদারকি বাড়ানো, মৎস্য খাদ্যের দাম একটু কমলে এ চাষে আরও অধিক লাভবান হবে চাষিরা।


Comments are closed.

© সাতক্ষীরা প্রবাহ ইমেইল: ‍arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com