April 19, 2024, 10:23 am
ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে সুপার সাইক্লোন আম্পানে ভেঙে যাওয়া সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা ও হরিষখালি বেড়িবাঁধ। শিঘ্রই শুরু হবে কোলা হিজলিয়া বেড়িবাঁধের সংস্কার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসির মধ্যে ফিরেছে স্বস্তি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এমন খবর দিয়েছে। আম্পানের আঘাতে যারা বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন তারাও ভিটায় ফিরতে শুরু করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। গাছপালা, ঘরবাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও দুমড়ে মুচড়ে পড়ে। ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ভেসে যায়। বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয় আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আম্পানে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, বাঁধ ভেঙে হয় তার শতগুণ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আগে থেকেই কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণপাশের বেড়িবাঁধটি দীর্ঘদিন ধরে খুবই জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় ছিল। এখানে প্রতি বছরই বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ভাঙনের পর বাঁধ রক্ষার্থে সংস্কার কাজ করা হলেও তা টেকসই না হওয়ায় এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করে আসছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) আলমগীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা ও খুলনার ভাঙনকবলিত ১৩টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরমধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ১১টি এবং খুলনার কয়রার দুটি পয়েন্টে কাজ করবেন সেনা সদস্যরা। এরমধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, হরিষখালি ও কোলা হিজলিয়া, শ্রীউলার হাজরাখালি পয়েন্টে বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বাকী পয়েন্টগুলোর কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ঠিকাদার সংকটে থমকে আছে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ।
তিনি আরও বলেন, প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে আশাশুনির ভেঙে যাওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৪টি পয়েন্টে কাজ করছে সেনাবাহিনী। প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুনিয়া, চাকলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। খুব শিঘ্রই কোলা হিজলিয়া বাঁধের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, হরিষখালি ক্লোজারের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে আশাশুনি সদর উপজেলার দয়ারঘাট, প্রতাপনগরের রুইয়ার বিলসহ অন্যান্য পয়েন্টগুলোর সংস্কার কাজ করছে পানি উন্নযন বোর্ড।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, সুপার সাইক্লোন আম্পানের তা-বে ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে জানান, ২০ মে রাতে সুপার সাইক্লোন আম্পানের তা-বে পাউবো’র তথ্যমতে আশাশুনি উপজেলার প্রায় ২৪ কি.মি. নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রলয়ঙ্করী ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রতাপনগর ইউনিয়নে চাকলা, কোলা হিজলিয়া, নাকনা, কুড়িকাহুনিয়া, রুইয়ারবিল, সুভদ্রাকাটিসহ বিভিন্ন এলাকা কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে যায়। শ্রীউলার হাজরাখালি বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়। আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও জেলেখালি গ্রামে খোলপেটুয়ার নদীর বাঁধ ভেঙে দয়ারঘাট, জেলেখালি, আশাশুনি দক্ষিণপাড়া ও মানিকখালী প্লাবিত হয়। এছাড়া আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট ও খাজরা ইউনিয়নেও খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ঝড়ে ৬৮০০ কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ১০৪০০ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ১০৫০ আধাপাঁকা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৫২০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন ও ৩০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে উপজেলার অর্থনৈতিক মুল ভিত্তি ৮৬৯৮টি চিংড়িঘের প্লাবিত হয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সেক্টরেও ৬০৪ হেক্টর জমির কৃষিফসল নষ্ট হয়। এছাড়া উপজেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি কলেজ ও ২০টি মাদ্রাসা আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড় বা বন্যায় ১৫,৮০০ নারী, ২৫,২০০ পুরুষ, ৩১০০ শিশু ও ৮৩৫ জন প্রতিবন্ধী বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শ্রীউলার হাজরাখালি, প্রতাপনগরের কোলা হিজলিয়া, কুড়িকাহুনিয়া ও চাকলা পয়েন্টে বাঁধ সংস্কার কাজ শুরু করেছেন। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সংস্কার কাজ। ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে বেড়িবাঁধ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব বাঁধের কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাঁধের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসি ফিরেছেন তাদের বাড়ির ঠিকানায়।