April 24, 2024, 8:10 pm
স্টাফ রিপোর্টার: মহামারি করোনাকে পুজি করে সাতক্ষীরায় হিট বাংলাদেশের নামে চলছে অভিনব কায়দায় প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। দির্ঘদিন যাবৎ এমনটা করে আসছে সোনিয়া বর রজনী। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দহকুলা বাগানবাড়ী নামক গ্রামের বাবলু বর ও অন্জলী বরের কন্যা। ঘটনার সুত্রে জানা যায়, সোনিয়া বর রজনী দির্ঘ্যদিন ধরে এলাকার গরীব অসহায় মানুষদেরকে করোনা সহায়তা উপলক্ষে হিট বাংলাদেশের দেওয়া চাল, ডাল, তেল ও নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে জন প্রতি ৫শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। এই করোনা সহযোগিতা বা করোনা অনুদান পাওয়ার আসায় সোনিয়া বরের কাছে প্রতারিত হওয়া সাতক্ষীরা সদরে মুনজিতপুর গ্রামের এক অসহায় নারী আসমাউল হুসনা(২৭) জানান, এলাকাবাসি ও সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায় মুনজিতপুরের একাধিক ব্যক্তি তাদের দেওয়া টাকা ফিরে পেলেও আমি এখনও পর্যন্ত কোন টাকা পায়নি। এছাড়াও সাবিনা খাতুন (৩৬), সারমিন (২০), মর্জিনা(৫০), রতœা (২২), সোনিয়া (২৪), গোলাম (৬০) সহ আরো অনেকে তাদের টাকা ফিরে পায়নি। মুনজিতপুরের আমের আলীর ছেলে রানা (৩০), বলেন, আমরা তো ওর সহজ সুন্দর কথা শুনে সব কিছু সহজেই বিশ্বাস করেছি। আমি এইপ্রতারক কে বিশ্বাস করে আমার চাকুরির জন্য তাকে নগদ ৬০০০/-(ছয় হাজার)টাকা দিয়েছে। এছাড়াও আরো অনেকে তাকে টাকা দিয়েছে। সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের আরো দু’জন অসহায় নারী নুরুন নাহার(২৫) ও কোহিনুর খাতুন জানান, তাদেরকেও ত্রান সহোযগিতা দেওয়ার কথা বলে জন প্রতি ৫০০/-(পাঁচ শত) টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে এই সোনিয়া বর রজনী। সোনিয়া বর রজনীর পার্শ্ববর্তী এলাকার আরো এক অসহায় বিধবা নারী শাকিলা খাতুন (২২) বলেন, আমার বাড়ি বাগানবাড়ি দহকুলায়। আমি একজন গরীব অসহায় বিধবা নারী ও আমার একটি এতিম শিশু মেয়ে সন্তান আছে, এই সোনিয়া আমার কাছ থেকে এবং ফরিদা পারভিন (৪৩), পিতা- সোবহান মোল্লা, ফেরদৌস (৩৮), পিতা- এরফান আলী, রঔশন আরা (৫৭), পিতা- কাশেম গাজি, রীনা পারভিন (৩৬), পিতা মোহাম্মদ আলী, ফরিদা বেগম (৩৩), পিতা- গোলাম হোসেন, ছালমা খাতুন(৩৬), স্বামী- হাফিজুল গাজি, জুলেখা খাতুন (৩৩), পিতা- রমজান আলী, হাসিনা বেগম (৫১), পিতা- কাশেম গাজি, ছালমা খাতুন (৩১), পিতা ওয়াজেদ আলি, আমিরুন (৬৪), পিতা- পরেশ তুল্লা, নাছরিন সুলতানা(৩০), পিতা- আজগর আলী, নাজনীন সুলতানা (২৯), পিতা- আজগর আলী, রহিমা বেগম (৬৪), পিতা ইউসুফ কারিগর, কামরুন্নাহার (৪১), পিতা জামির আলী, সাহিদা খাতুন (৪৯), পিতা মানিক কারিগর, খুকুমনি (৩৪), পিতা ইসহাক আলী গাজী, মনোয়ারা বেগম (৬০), পিতা হাজি রশিদ মিয়া, মনিরা খাতুন (৩০), পিতা মফিজুল ইসলাম, রোকসানা বেগম (৩২), পিতা নজরুল ইসলাম, ফাতেমা খাতুন (৪৬), পিতা নুর মোহাম্মদ মৃধা, হোসনে আরা বেগম (৪৩), পিতা আব্দুস সাত্তার, মরিয়ম বেগম (৪৩), পিতা- মাদার ঢালী, ফিরোজা বেগম (৫৩), পিতা মোকসেদ আলী মোল্লা, আছিয়া বেগম (৫১), পিতা সালামাতুল্লাহ, জহুরা বেগম (৩৬), পিতা আব্দুল মান্নান, মারুফা খাতুন (৩৫), পিতা আব্দুল মালেক মোল্লা, ছকিরন খাতুন (৩২), পিতা আলমগীর হোসেন, শাহনারা জামান (৩৮), পিতা মতিয়ার রহমান, খুকু (৪৭), পিতা হারান সরদার, তাহমিনা বেগম (৫০), পিতা হরোস মিস্ত্রী, মহিমা বেগম(৫৮), পিতা কেরামত আলী, জুলেখা বিবি (৪২), পিতা নাজিমুদ্দিন গাইন, জুলইয়া সরদার (৫২), পিতা ফ্রান্সিস বরসহ আরো অনেক মানুষের কাছ থেকে একই ভাবে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও এই রজনী হিট বাংলাদেশে চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও অনেকের কাছ থেকে ৫,০০০/-(পাঁচ হাজার) টাকা থেকে ১৫,০০০/-(পনের হাজর)টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছে। এ প্রতিবেদক ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে সোনিয়া বর রজনীর একাধিক ভাড়া বাড়ির একটি মুনজিতপুরে ওমর আলীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে, সোনিয়া মাঝে মাঝে সেখানে থাকতে আসে। এক দু’দিন থেকে আবার চলে যায়। সোনিয়াকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সঠিক কাগজপত্র ও জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি দেখতে চাইলে, বাড়ির মালিক ওমর আলীর স্ত্রী তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারনে এসব কাগজ পত্র নেওয়া হয় নি। এলাকাবাসি ও ভুক্তভূগীদের সহযোগিতায় এ প্রতিবেদক ও আরো কয়েকজন আঞ্চলিক পত্রিকার সাংবাদিক একই গ্রামে থাকা শাহানুরের বাড়িতে (রজনীর আর একটি ভাড়া বাসা) গিয়ে লুকিয়ে থাকা সোনিয়া বর রজনী কে খুঁজে পায়। এসময় এলাকবাসি তার উপর চড়াও হলে, রজনী সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই তার সমস্ত অপকর্ম ও এলাকাবাসি এবং ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে এবং সাময়িকভাবে সে সব ফিরিয়েও দেওয়ার অঙ্গিকার করে। এসময় সোনিয়া বর (রজনী)কে তার ভাড়া বাসায় একাই পাওয়া যায়। তার কাছে হিট বাংলাদেশের পরিচয়পত্র বা উক্ত সংস্থার কোন প্রকার কাগজ পত্রের কপি সাংবাদিকসহ এলাকাবাসিরা দেখতে চাইলে, তিনি তা দেখাতে অক্ষম হয়। এই প্রতারনা চক্রের সাথে আর কে কে জড়িত আছে তা জানতে চাইলে, সোনিয়া বর রজনী বলেন, আমি এখন একটু অসুস্থ বোধ করছি, আমার কাছে আপনারা যা কিছু জানতে চান, ২-৩ দিন পরে আমার বাড়িতে আসেন, আমি আপনাদের সব কিছুই বলবো এবং আপনাদের যাদের কাছ থেকে আমি যতো টাকা নিয়েছি, সব টাকাই আমি আপনাদের ফিরিয়ে দেবো। পরবর্তিতে, সোনিয়ার নিজ বাড়ি কারিমা স্কুলের পাশে, বাগানবািড়, ধুলিহর, সাতক্ষীরা সদরে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যায় যে, এই সোনিয়া বর রজনী একজন অত্যন্ত চতুর মহিলা, সে এর আগেও প্রায় ৪-৫ মাস আগে একই ভাবে প্রতারনা করতে গিয়ে ধরা পরে এবং এলাকার গন্যমাণ্য ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের কাছে পরবর্তীতে আর এমন টা হবে না বলে অঙ্গীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেয় এবং বিষয়টির একটি সহজ সমাধান। কিন্তু বর্তমানে তিনি পুনরায় একই ভাবে তার পরিবারের সহযোগিতায় হিট বাংলাদেশের নামে এই প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনিয়ার এক প্রতিবেশি চাঁ দোকানদার জানায়, সোনিয়া হুবহু মহিলা পুলিশদের মতো দেখতে নীল শাড়ি পড়ে এলাকায় দাপুটের সাথে ঘুরে বেড়ায় এবং নিজেকে বিভিন্ন সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এদিকে সোনিয়া বর(রজনী)র বাড়িতে গিয়ে অনেক চেষ্টা করা সত্বেও সোনিয়া ও তার বাবা-মা বা তার পরিবারের অন্য কারোর সাথে কথা বলতে পারেনি এ প্রতিবেদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যান চালক সোনিয়ার এক দুঃসম্পর্কের চাচা জানায়, সোনিয়া তার পরিবারের সহযোগিতায় এমনটা করছে। ওর বাবা-মা সহ পরিবারের সবাই এর সাথে জড়িত আছে। ওরা সব কিছুই জানে।