November 5, 2024, 10:20 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় টানা চার সপ্তাহের বিধি নিষেধ পালনের পর এখন চলছে কঠোর লকডাউন। এরপরও থামছে না মৃত্যু ও করোনা সংক্রমণের হার। অব্যাহত রয়েছে করোনা সংক্রমণের উর্দ্ধগতি। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর ঘটনা। বৃহস্পতিবার জেলায় চারজন করোনা পজেটিভসহ সর্বোচ্চ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন করোনা শনাক্তের হার ছিল প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি।
দেশের ৬২তম জেলা হিসেবে গত বছর ২৬ এপ্রিল সাতক্ষীরাতে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে মাঝে মধ্যে দু’একজনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হতে থাকে। একপর্যায়ে করোনা ভাইরাসের কথাও জেলার মানুষ ভুলতে বসে। ঠিক এমন সময়ে গত এপ্রিলে সারাদেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমন শুরু হলে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ভারত থেকে ফিরে আসা তিন শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিককে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে কোয়ারেন্টাইনে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে তাদের মধ্যে থেকে ১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৭ মে থেকে জেলায় করোনার ব্যাপক সংক্রমন শুরু হয়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১ জুলাই পর্যন্ত ১৪ হাজার ২৩৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট প্রাপ্ত রির্পোট ১৩ হাজার ৭৬টি। এরমধ্যে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৭২ জন। শনাক্তের হার ২৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ৭৪ জন এবং উপসর্গে মারা গেছেন ৩৫৪ জন। ২ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮১৮ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৩৮ জন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১৬ জন। করোনা উপসর্গ ও পজেটিভসহ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৪১৬ জন রোগী। এর মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ১৩৭ ও সামেক হাসপাতালে ২৭৯ জন। বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৭৮০ জন। জেলায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ২ হাজার ৫৮৮ জন। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। এসময় সুস্থ হয়েছে ৪৮ জন। ১৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা কওে করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে ৪৯ জনের। সনাক্তের হার ৩৩.১১ শতাংশ।
এদিকে জেলায় এ পর্যন্ত শনাক্ত ৩ হাজার ৪৭২ জন করোনা রোগীর মধ্যে ১ হাজার ৮০৫ জন শনাক্ত হয়েছে গত জুন মাসের ৩০ দিনে। এ সময় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ৪০৫ জনের। জুন মাসে শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এর আগে গত মে মাসের ৩১ দিনে জেলায় নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১ হাজার ৩৫৫ জনের। এ সময় শনাক্ত হয় ৩০৫জনের। মে মাসে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত ২৬ এপ্রিল ২০২০ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৭ হাজার ২৬৬ জনের। ৩৭০ দিনের ওই নমুনা পরীক্ষায় জেলা করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৩১৩ জনের। শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। জুন মাসে জেলায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর এখনো সংক্রমনের উর্দ্ধগতি অব্যাহত রয়েছে। জেলার গড় শনাক্তের হার এখনো ২৬ শতাংশের উপরে। জুন মাসের ১১ দিন জেলায় গড় শনাক্ত ছিল ৫০ শতাংশের উপরে। এরমধ্যে ১২ জুন ৬৪ দশমিক ২ এবং ১৮ জুন ৬০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জুনের শেষ দিনে শনাক্তের হার ছিল ৪৯ দশমিক ০৬ শতাংশ।
এদিকে সংক্রমণের এই উর্দ্ধগতিতে জেলায় চতুর্থ সপ্তাহের লকডাউন শেষে চলছে দেশব্যাপি জারি করা কঠোর লকডাউন। সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রথমদিনে ১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে একযোগে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জেলার সাতটি উপজেলায় নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু আইনশৃখংলা বাহিনীর সদস্যদের নজর এড়িয়ে শহরে প্রধান প্রধান সড়কে মাঝে মধ্যে চলছে রিক্সা, ইঞ্জিন ভ্যান, ইজিবাইক, মটর সাইকেল ও প্রাইভেটকার। সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়েছে কিছু মানুষ। তবে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। লকডাউনে জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল প্রকার গণপরিবহন। গাড়ীর বহর নিয়ে শহরে মহড়া দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশসহ আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরও জেলায় করোনা সংক্রমণের এই উর্দ্ধগতি থামবে কিনা তা দেখতে আরো বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে এক নারীসহ আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরা পৌর শহরের রসুলপ্রর এলাকার আবু মুসার স্ত্রী সীমা (৩০), কামালনগর এলাকার আবু তালেবের ছেলে নাছির (৫৫), সদও উপজেলার ঘোনা গ্রামের মৃত মানিক মোল্যার ছেলে হযরত মোল্যা (৫৪) ও আশাশুনি উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের গিরিনাথ কর্মকারের ছেলে বসন্ত কর্মকার (৮৫)।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে উল্লেখিতরা গত ১৬ জুন থেকে ৩০ জুনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্ণার ও করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১ জুলাই সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাদের মৃত্যু হয়।