October 12, 2024, 3:09 pm
দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়া আদমজী ইপিজেড সংযোগ সড়কটি উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আদমজী এলাকার এই সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে বর্তমানে ইপিজেডে উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করা অনেকটাই কষ্টসাধ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটির উন্নয়ন হলে সহজে পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার অবহেলিত জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও উন্নতি হবে।জানা গেছে, সংযোগ সড়কের উন্নয়নে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ‘চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’ নামে এই প্রকল্পটির উদ্যোক্তা হচ্ছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। ১১৩ কোটি ৫১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড এলাকায় মোট ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হলে প্রকল্প এলাকার উৎপাদিত শিল্প পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এরইমধ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন হয়েছে।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২১ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে পুরো টাকা জোগান দেওয়া হবে। সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও কোনও অর্থ বরাদ্দ রাখা ছিল না। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আদমজী ইপিজেডের পাশে থাকা রেলওয়ের ৭ দশমিক ২৮৪ হেক্টর জমি লিজ নেওয়া হবে। সড়ক নির্মাণের আগে সড়ক বাঁধ প্রশস্ত করা হবে। মূল সড়কের জন্য ৭ দশমিক ৩০ মিটার প্রশস্ত ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। হার্ড শোল্ডার নির্মাণ করা হবে পুরো ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার। ৯০ দশমিক ৭৬ মিটার প্রশস্ত আরসিসি সেতু চারটি, আরসিসি বক্স কালভার্ট একটি, আরসিসি আন্ডার পাস একটি এবং ১ হাজার ৮শ’ মিটার আরসিসি ইউ ড্রেন নির্মাণ করা হবে।জানা গেছে, প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০২০) দ্বিতীয় অংশের ‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক ষষ্ঠ অধ্যায়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ।প্রকল্পটি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড মহাসড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হবে এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট কমবে। একই সঙ্গে আদমজী ইপিজেডের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীত হবে।’এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আদমজী ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আহসান কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে সড়কটি খুবই ভাঙাচোরা, অনেকটাই চলাচলের অনুপযোগী। সড়কটির উন্নয়ন হলে ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোতে উৎপাদিত পণ্য পরিবহন সমস্যার সমাধান হবে।’উল্লেখ্য, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আদমজী ইপিজেড ‘নারায়ণগঞ্জ ইপিজেড’ নামেও পরিচিত এবং রাজধানী ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জ শহরের অদূরে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। এটি ২০০৬ সালে স্থাপিত হয়। ২৪৫ দশমিক ১২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেড বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম ইপিজেড।আদমজী ইপিজেডটি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি একটি শুল্কমুক্ত এলাকা। সম্পূর্ণ শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে এখানকার উৎপাদিত পণ্য সম্পূর্ণ শুল্কমুক্তভাবে বিদেশে রফতানি করা যায়। এই ইপিজেডে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহের জন্য এখানে ‘বেপজা’ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও বিদ্যুতের জন্য নিজস্ব পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ১১ কেভির একটি সাবস্টেশন রয়েছে। এছাড়া এখানে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ করা হয়। এখানে স্থাপিত কলকারখানায় তিন ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। এগুলো হলো—১. শতভাগ বিদেশি পুঁজি ২. বিদেশি ও দেশি পুঁজির যৌথ বিনিয়োগ এবং ৩. শতভাগ দেশীয় পুঁজি। এই ইপিজেডে মোট ২২৯টি শিল্প প্লট রয়েছে। এখানে উৎপাদিত পণ্যগুলো হচ্ছ তৈরি পোশাক, সোয়েটার, কম্বল ও জ্যাকেট।
Comments are closed.