July 27, 2024, 4:12 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে দুর্গোৎসব ও বাংলাদেশ সম্প্রীতির সেতুবন্ধন

অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার: সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে দুর্গোৎসব ও বাংলাদেশ সম্প্রীতির সেতুবন্ধন

হাসান : শরতের আলো-ছায়ার খেলার মাঝে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘দুর্গোৎসব ও বাংলাদেশ সম্প্রীতির সেতুবন্ধন’ অনুষ্ঠান। শারদীয় দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন সোমবার মহা-নবমীতে সাতক্ষীরা পৌরদিঘির পাড়ে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বসেছিল এ সম্প্রীতির মেলা। সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে মিলেছিলেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীর সঞ্চালনায় সম্প্রীতির সেতুবন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল, জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, ৩৩ বিজিবির কমান্ডার লে. কর্নেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক জাকির হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক সুধাংশ শেখর সরকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সিএন্ডএফ সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ প্রমুখ।অনুষ্ঠানে বক্তারা সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের সৈনিক হিসেবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন চিরকাল অটুট রেখে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সকলকে এক কাতারে থাকতে হবে। কোন অশুভ শক্তি যেন আমাদের শান্তি ও সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে না পারে-সেদিকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। উন্নয়নের ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে পরস্পরের ভ্রাতৃত্বের এ মধুর বন্ধন যেন চিরকাল অটুট থাকে।বক্তারা আরো বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ সব ধর্ম ও মতের মানুষের বাস্তুভিটা। এখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের ধারাকে অব্যাহত রাখতে গণতন্ত্রের সাবলীল চর্চা করতে হবে। এজন্য সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখতে হবে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা। আমরা সবাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছি। আমাদের সংগ্রাম চলছে ও চলবে উল্লেখ করে তারা বলেন, সমাজের একটি অপশক্তি আবারও বাংলাদেশকে পেছনে ফিরিয়ে নিতে চায়। তারা গণতন্ত্রের শত্রু, উন্নয়নের শত্রু। তাদের প্রতিহত করার অঙ্গিকার করতে হবে। বক্তারা বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতির অনন্য এদেশে সব ধর্মের মানুষ মুক্তমনে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে। সম্প্রীতি কী তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. আ ফ ম রুহুল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সেদিন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাঙ্গালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। রচিত হয়েছিল এক অসাম্প্রদায়িক সংবিধান। সেদিনের সেই সম্প্রীতির সেতুবন্ধন আজও অম্লান। আগামিতেও তা অটুট থাকবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, রেল লাইনসহ জেলার উন্নয়নে অনেক কাজ বাকী আছে। সাতক্ষীরাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, জাতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় দিয়েছে ৫২ তে, ৭১ এ । ৭৫ এ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা ছিল সাম্প্রদায়িক শক্তি। এই শক্তিকে আর বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিতে দেওয়া হবে না। সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য এর পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবে মন্দিরে মন্দিরে উপহার স্বরূপ অনুদান দেয়। প্রতিবেশি ভারত সরকারও সেদেশে পূজা উপলক্ষে কোন অনুদান দেয় না। তিনি বলেন, এটাই আমাদের সম্প্রীতি। দেশ বিভক্তির আগে আমাদের শিক্ষা, ব্যবসা, বাণিজ্য সবই ছিলো কলকাতা কেন্দ্রিক। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর আমাদের মাঝে একটি ছেদ পড়ে। দেশটিকে যদি আমার দেশ ভাবি তাহলে সাম্প্রদায়িক শক্তি উৎখাত হবে।জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান বলেন, সনাতন ধর্ম অনেক প্রচীন ধর্ম। এ ধর্মে নারীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। যে কারণে অনেক দেবীর নাম নারীর নামে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছি। তিনি কাব্যিক ভাষায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের ভূয়শী প্রশংসা করেন।জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, আমাদের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক বন্ধন আরও দৃঢ় করে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশকে উদ্ভাসিত করতে হবে। আমাদের সম্প্রীতি আছে। সেতুবন্ধনে সম্প্রীতি যুক্ত হলেই এগিয়ে যাবে দেশ। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট থেকে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সম্প্রীতি প্রতিটি গ্রামে রক্ষা করতে হবে। সম্প্রীতির জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা বাংলাদেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। জেলায় প্রতিটি ম-পে শান্তিময় ও উসবমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব।


জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, অপশক্তিকে উৎখাত করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সবাই কাজ করছি। আমাদের এ বন্ধন চিরকাল অটুট থাকবে।জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কলঙ্ক থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। জেলার সর্বস্তরের মানুষ আজ এ মিলন মেলায় উপস্থিত হয়েছি। এটাই আমাদের সম্প্রীতি, এটাই আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ। সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়তে আমরা সবাই একই ছাদের তলে রয়েছি।
বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার বলেন, দেশের মানুষ আনন্দমূখর পরিবেশে স্ব স্ব ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করছে। কারণ আমরা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করিনা।জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করে থাকে। তারা ধর্মীয় উৎসবকে ভাগাভাগি করে নেয়। এখানে মসজিদে আজানের ধ্বনি ওঠে। আর পাশেই মন্দিরে হয় পূজা অর্চনা। সম্প্রীতির এই সেতুবন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তুলতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. সৈয়দ ইফতেখার আলী বলেন, বিগত দিনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন গ্রাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হলে তিনি তা প্রতিহত করার উদ্যোগ নেন। শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। কোন অপশক্তি আমাদের শান্তি বিনষ্ট করতে পারবে না।সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা এক ও অভিন্ন পথে চলছি। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। দেশকে ভালোবাসবে।জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, আমরা পুর্ণ মর্যাদা ও নিরাত্তার মধ্যে সাতক্ষীরায় ৫৮৪ টি ম-পে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে প্রমান করেছি আমরা বাংলাদেশিরা অসাম্প্রদায়িক।স্বাগত বক্তব্যে প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, এদেশ আমাদের সবার। সবাই মিলে এ দেশকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে গড়ে তুলছি। আলোচনা সভা শেষে মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন অতিথিগণ।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com