October 31, 2024, 3:12 am
আশাশুনি প্রতিনিধিঃআশাশুনির গদাইপুরের যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী বহুল আলোচিত প্রয়াত মোজাহার সরদারকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারি দীনেশ চন্দ্র ম-লের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন।স্থানীয়রা বলেন, আশাশুনি উপজেলার তালিকাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী গদাইপুরের মোজাহার সরদার। এ ঘটনায় মাজাহার সরদারের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে ৯৪ নং যুদ্ধপরাধী মামলা হয়। দুর্ভাগ্য জনগণ বিচারের রায় দেখার আগেই কয়েক বছর আগে মারা যান মোজাহার। তার পরিবারের দু’ছেলে নাশকতা মামলার আসামী, এক ছেলে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ও এক ছেলে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে মোজাহারের ছেলে শাহানেওয়াজ ডালিম এলাকায় আওয়ামী লীগ করেছে এটা কারো জানা নেই। এখন তিনি হাইব্রীড আওয়ামী লীগার হয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের শায়েস্তা করতে দীনেশ ম-লের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের তুরুপের তাস বানিয়েছেন।মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান, আব্দুর রহমান, আব্দুল মান্নান, এমএ সাঈদ, মহিরুদ্দিন ও আবুল খায়ের সরদার বলেন, মোজাহার রাজাকারকে সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে দরগাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ চন্দ্র ম-ল বৃহস্পতিবার সাংাদিকদের কাছে এক ব্রিফিং এ উল্লে¬খ করেছেন যে, মোজাহার ১৯৭১ সালে খুলনার সেক্টর কমান্ডার রহমাতুল¬া দাদুর সাথে তিন মাস থেকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এ মিথ্যাচারের জন্য দীনেশকে জবাবদিহীতা করতে হবে। তাছাড়া কোন ব্যক্তিকে যদি রাজাকার বলা হয় সেক্ষেত্রে তার প্রতিবাদ করবে তার স্বজনরা। হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তির জমি জবরদখল, লুটপাট ও নির্যাতনকারিরাই তারা আইনী প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ করবে। এর দায় কেন দীনেশ ম-ল নিজের কাঁধে তুলে নেবেন ? বংশ পরম্পরায় আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য সাজিদা খাতুন ৪ সেপ্টেম্বর যে সংবাদ সস্মেলন করেছে তাতে মোজাহার সরদার, ডালিম, তার ভাইদের ও ডালিম বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে মামলার বিবরণ তুলে ধরেছেন। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মোজাহার পরিবারের সদস্যরা সুনীল মুহুরী, রবিন মুহুরীসহ হিন্দুদের শতাধিক বিঘা জমি জবরদখল করে খাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে যেয়ে তাদের অনেককে এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। যুবলীগ নেতা রমজানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা থাকার কথা অস্বীকার না করেই ওইসব মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ডালিমের মত প্রতিপক্ষ থাকলে বছরে একডজন মামলা হওয়া কোন ব্যাপার নয়। তবে ৪০ মামলার রেকর্ড দীনেশ ম-ল দেখাতে পারবেন কি? ২ সেপ্টেম্বর সাজিদা খাতুন কি আদৌ সংবাদ সস্মেলন করেছিল?সংবাদ সম্মেলনে সাজিদা ডালিমের বিরুদ্ধে টুম্পা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা, ইউপি সদস্য নাছিমা ধর্ষণ চেষ্টা মামলা , ঠিকাদার শফিউর রহমানের চাঁদাবাজি মামলা, আফছার আলীর বাড়িতে চুরির মামলা, ইসমাইল হোসেনর বাড়িতে ডাকাতি মামলা, রাহাজান মাষ্টারের দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা, আনোয়ারুল মেম্বরের দায়েরকৃত চাঁদাবাজি মামলা, ভাই রমজান আলীর দায়েরকৃত দুদকে মামলা, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনসহ তিনজনের যৌথভাবে দায়েরকৃত দুদকের মামলাসহ এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে বলে উলে¬খ করেন। ডালিমের বাহিনী প্রধান মঈনুল বোমা হামালাসহ কমপক্ষে ৫টি মামলার আসামী ও বনদস্যুদের আশ্রয়দাতা।ডালিম বাহিনীর অপর সদস্য কবীর হোসেন তারামনী ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামী, টুম্পা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা ও কয়রা থানার ধর্ষণ মামলার আসামী। ডালিমের দক্ষিণহস্ত বিএনপি নেতা সাত্তার গাজী মনিপুর গ্রামের রফিকুল হত্যা, ডাকাতি ও নাশকতাসহ কমপক্ষে ৩০ মামলার আসামী। ডালিম বাহিনী সদস্য আনিছুর রহমান জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর আমানউল¬াহ আমান হত্যা মামলার আসামী। এ ছাড়া নাশকতাসহ কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে আনিছুরের বিরুদ্ধে। সদস্য আজিজুল ইসলাম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নাশকতা, মাদক ও চুরিসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা রয়েছে। সদস্য লিটুর বিরুদ্ধে কমপক্ষে পাঁচটি চুরি, নাশকতা ও মাদক মামলা রয়েছে। ডালিম বাহিনীর সদস্য চেউটিয়া গ্রামের মিলন সরদার ডালিমের ছত্রছায়ায় থেকে রমরমা মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কমপেক্ষ ১০টি মামলা রয়েছে। ডালিম ও তার বাহিনীর অত্যাচারে প্রতিবাদ করতে যেয়ে কেউ বা হাত, কেউ বা পা হারিয়েছেন। আবার অনেকে মিথ্যা মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে সাজিদা সংবাদ সম্মেলনে উলে¬খ করেন। এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিতউদ্দিন তদন্ত শুরু করলে ডালিম ও তার বাহিনীর সদস্যদের আসল চেহারার উন্মোচন হবে।সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সচিব মাহাবুবর রহমান বলেন, সানজিদা খাতুন নামের কোন মহিলা গত ২ সেপ্টেম্বর সংবাদ সস্মেলন করেননি।তবে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ ম-লের মোবাইল নম্বরে বার বার যোগাযোগরে চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।