March 27, 2025, 4:20 pm
সাহিত্য চর্চ্চায় লিটল ম্যাগাজিন বা সাহিত্য সাময়িকীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে যার ব্যাপ্তি শত বছর অতিক্রম করেছে। আমাদের দেশে লিটল ম্যাগাজিনের বয়স শত বৎসর অতিক্রম করলেও লিটল ম্যাগাজিন মেলার প্রচলন খুব একটা চোখে পড়ে না। এর আয়োজন খুবই অপ্রতুল।বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলাম বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজন করতে। আমার প্রস্তাবে তারা সাড়া দিয়েছিলেন মহান একুশের বইমেলাতে লিটল ম্যাগাজিন কর্নার সৃষ্টি করে। কিন্তু আমার প্রস্তাব ছিল আলাদা সময়ে স্বতন্ত্রভাবে মেলার আয়োজন করা। যেমনটা করে থাকে রাজশাহি চিহ্নমেলা। আজিজ সুপার মার্কেটে জাতীয় লিটল ম্যাগাজিন মেলা। এ রকম স্বাতন্ত্র না থাকলে পরিপূর্ণ মর্যাদা আসে না।অথচ আমরা যদি ওপার বাংলার দিকে লক্ষ করি, সেখানে আলাদা চিত্র। প্রায় প্রতিটি জেলাতে এমনকি বেশ কিছু মহকুমাতেও নিয়মিত ভাবে তিন দিনের লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। সেই ত্রিপুরা-আসাম থেকে শুরু করে পশ্চিমবাংলা পর্যন্ত। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রতি বছর লিটল ম্যাগাজিন মেলার আয়োজন করে থাকে।২০০৩ সালে কলকাতার বাগুইআটি লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে আমি ঈক্ষণ পত্রিকা নিয়ে আর অধ্যাপক গাজী আজিজুর রহমান নদী পত্রিকা নিয়ে অংশগ্রহণ করি। এরপর মুর্শিদাবাদ সারা বাংলা লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলতিবছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হুগলি জেলার তারকেশ্বর লিটলম্যাগাজিন মেলাতে ঈক্ষণ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। গতবছর এবং এবার ২২-২৪ নভেম্বর ২০১৯ বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আমার ঈক্ষণ, আমিরুল বাসারের সাম্প্রতিক ও রমজান বিন মোজাম্মেল এর পুরাতনপাতা পত্রিকা।
এই লিটল ম্যাগাজিন মেলাগুলোতে আয়োজকদের যেমন আন্তরিকতা দেখেছি তেমনি পাঠক সমাজও সচেতন। তারকেশ্বর মেলাটি আমাকে দারুণ ভাবে আলোড়িত করেছে। ৮ নভেম্বর ২০১৯ মেলা শুরু। দুপুর থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি। আবহাওয়া- দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত চলছে। আয়োজকদের সাথে আমরা অংশগ্রহণকারীরাও উদ্বিগ্ন সময় পার করছি। বিকেল শেষ করে সন্ধ্যা এসে গেল। খুবই অনিশ্চয়তার মধ্যে আমরা। সন্ধ্যার বেশ কিছুটা পর হঠাৎ দেখলাম মানস চক্রবর্তী, পল্টু গুছাইৎ (আয়োজকবৃন্দ) সবাইকে একত্রিত করছেন। বৃষ্টি একটু ধরেছে কেবল। আমরা আবাসন থেকে বেরিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে পৌঁছলাম। ঘাসে ঢাকা একটি চত্বর। সুন্দর ডেকরেশন। রঙিন কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে। ঘাসেদের মাথায় বৃষ্টির ফোটারা বৈদ্যুতিক আলোর রোশনাইয়ে জ্বল জ্বল করছে। তাড়াতাড়ি ’ঈক্ষণ-বাংলাদেশ’ লেখা ব্যানারটি পিছনের কাপড়ে লাগিয়ে দিলাম। টেবিলে পত্রিকা সাজাতে ব্যাস্ত সবাই। আমিও। অল্পক্ষণের মধ্যে রেইনকোট পরে, ছাতা মাথায় দিয়ে পাঠক-ক্রেতা এসে গেলেন। তখনও বৃষ্টির ছোট ছোট ফোটা অব্যহত আছে। এরই মধ্যে আমার ’ঈক্ষণ’ বিক্রি হলো বেশ কয়েকটা। ওরা দাম নিয়ে বেশি দরাদরিও করে না। পত্রিকা-শরীরে যে দাম লেখা আছে সে দামেই কিনে নিলো। আমি অল্পতেই তুষ্ট। মনে মনে খুিশ হয়ে গেলাম।বৃষ্টি হলে আমরা যেখানে ঘর ছাড়তে চাই না। সেখানে তারা পত্রিকা কিনতে এসেছে। দশ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত মাথায় নিয়ে। আমি অবাক হয়ে গেলাম।বর্ধমানে পরিচয় হ’ল আসাম গৌহাটির কয়েকজন তরুণের সাথে। প্রায় ১৮ থেকে ২০ ঘন্টা জার্নি করে তারা এখানে এসেছে। কলেজের অধ্যাপক থেকে শুরু করে নাম করা সম্পাদক পর্যন্ত গণরুমে মেঝের উপর রাত্রিযাপন করছেন অনায়াসে। তারকেশ্বর মেলার অনেকের সাথে দেখা হ’ল বর্ধমান মেলাতে এসে, খুব ভাল লাগলো।
বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলাতে একদিকে মেলা অন্য দিকে চমৎকার একটি মঞ্চে সাহিত্য আলোচনা, আড্ডা, সংগীত, উপহার প্রদান চলতে থাকে।
বড্ড ইচ্ছে জাগে সাতক্ষীরায় একটা লিটল ম্যাগাজিন মেলা করতে। যেখানে দুইবাংলার লিটল ম্যাগাজিন শোভা পাবে। অনেক পত্রিকা কিনবে সাতক্ষীরার মানুষ।
Comments are closed.