উধাও হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র পুলিশ কনস্টেবলের ছেলে মো. মোহাইমিনুল ইসলাম মোমিন (১৪) চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুইদিন অনেক খোজা খুজির পর শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বন্দর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।‘আমি গৃহপলায়ন করি নাই। গৃহত্যাগ করিলাম। সত্যের সন্ধানে যাচ্ছি। আমাকে খোঁজাখুঁজি করে লাভ নেই। সত্যের মধ্যে সত্য আছে। কাজের ভেতরে কাজ আছে।’-রহস্যময় এমন সব কথা চিরকুটে লিখে বাড়ি থেকে চলে যায় সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মোহায়মিনুল ইসলাম মোমিন (১৪)।সাতক্ষীরা প্রবাহ পত্রিকার অনলাইনে মোমিনের নিখোজ সংবাদ প্রকাশ করলে মুহূর্তের মধ্যেই সংবাদটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সংবাদটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হতে লাগলে প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। মোমিনের উদ্ধারে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়।সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শনিবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বন্দর থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে সাতক্ষীরায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। কী কারণে বা কাদের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে সেখানে গিয়েছিল সেসব বিষয়ে এখনো জানা যায়নি। জিজ্ঞাসবাদ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।সে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। শুক্রবার রাতে মোহায়মিনুল এশার নামাজ পড়ার কথা বলে তাদের ভাড়া বাড়ি শহরের মনজিতপুর থেকে বেরিয়ে যায়। এর পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।নিজ হাতে লেখা দীর্ঘ চিঠিতে মোহায়মিনুল আরও লিখেছে, ‘দীর্ঘকালে আমাকে কেহ চিনে নাই, জানে নাই আমার কাজকে। আজ হয়তো প্রভুর অনুমতিক্রমে আমার সময় শেষ। তাই চলিলাম। ইহা স্বাভাবিক। অন্তত মুসলিমের পক্ষে। আমি সত্য লইয়াই আঁধার রাতে বাহির হইয়াছি।’মোহায়মিনুলের বড় ভাই আবদুল আহাদ জানান, সে অত্যন্ত চুপচাপ স্বভাবের ছেলে। তার কোনো বন্ধুও নেই। দুই-একটি ছেলের সঙ্গে সে স্কুলে যেত।তিনি বলেন, সে লেখাপড়ার পাশাপাশি সবসময় আল্লাহর পথ নিয়ে ভাবত। কথা বলত এবং কবিতা লিখত। গোপালগঞ্জ সদরে তাদের বাড়ি উল্লেখ করে আবদুল আহাদ বলেন, ক্লাসে তার রোল ১। সে রহস্যময় কথাবার্তা লিখে গেছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে, যার নম্বর ৮৯৯।মোহায়মিনুলের বাবা পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আমার ছেলে ন¤্রভদ্র স্বভাবের। সে কোনো চক্রের খপ্পরে পড়ে থাকতে পারে। জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে আমরা খুঁজে পেয়েছি।সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমরেশ সরকার জানান, শনিবার সকালে বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরই মোহায়মিনুলের বাবা পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান তার কাছে এসে জানান তার ছেলের গৃহত্যাগের কথা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।প্রধান শিক্ষক জানান, ছেলেটি অত্যন্ত বিনয়ী, শান্ত স্বভাবের। তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। তার লেখাপড়া, আচরণ ও শৃঙ্খলা- সব দিকই ছিল প্রশংসনীয়। তবে গৃহত্যাগের কারণ কী তা তিনি বলতে পারেননি।