October 23, 2024, 7:08 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা: শিশু মারিয়ার দায়িত্ব নিলেন ডিসি

একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা: শিশু মারিয়ার দায়িত্ব নিলেন ডিসি

আব্দুর রহমান: সাতক্ষীরা-যশোর মহাসড়কের কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামের নিহত শাহিনুরদের প্রতিবেশি ও সাধারণ মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। তাদের চোখের সামনে একই পরিবারের চারটি তরতাজা মানব জবাই করা লাশ দেখে তারা এখন হতভম্ব। নিরীহ এই পরিবারের তো কোনো শত্রু ছিল না বলে জানান তারা। এই হত্যাকান্ডকে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে তুলনা করে ঘাতকদের ফাঁসি চান। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে সহ চার জনকে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যার আগে অথবা পরে তারা পরিবার প্রধান শাহিনুরের হাত পার রগ কেটে বেধে রেখে যায়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে কোন একসময় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মাছের ঘের ব্যবসায়ী শাহীনুর রহমান (৪০) তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী (৯) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানা (৬)। হত্যাকারীরা ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়া সুলতানাকে না মেরে জীবিত অবস্থায় দোলনার মধ্যে রেখে যায়। প্রতিবেশীরা জানান ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যান। পরে দরজা খুলে দেখতে পান সাবিনা খাতুন ও তার দুই শিশু তাসমিন ও মাহী একঘরে এবং আরেক ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ পড়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে শাহীনুরের পা রশি দিয়ে বাাঁধা। তার পা ও হাতের রগ কাটা। একই পরিবারে থাকা শাহীনুরের ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম জানান তিনি গোঙানির শব্দ শুনে ছুটে যান। পরে সবাইকে খবর দেন। তিনি জানান হত্যাকারীরা ছাদে উঠে সিড়ির ঘর দিয়ে ঢুকে তাদের খুন করে দরজায় শিকল দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত লাশগুলি ঘরেই ছিল। সেখানে পুলিশের ক্রাইম সেকশন ও সিআইডর ফরেনসিক বিভাগ কাজ করছে বলে সংবাদকর্মী ও অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মোয়াজ্জেম হোসেন, কলারোয়া হেলাতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তিনি এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, পরিবারটি ছিল অত্যন্ত নিরীহ। তারা কোন দল করতো না। কারো সাথে তাদের বিরোধও ছিল না। ভাই রায়হানুল ইসলাম আরও জানান তার বড়ভাই শাহীনুর ইসলাম নিজস্ব ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙাস মাছ চাষ করতেন। গত ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক জমি নিয়ে নিকট প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সাথে মামলা চলছিল। এই মামলা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারনা। পুলিশ রায়হানুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে। নিহত শাহীনুরের খালাতো ভাই মো. হাসানুর রহমান জানান, তার ভাইয়ের সাথে কোন শত্রুতা ছিল না। কেবলমাত্র জমিজমা নিয়ে আকবরের সাথে ২২ বছর মামলা চলছিল। আমি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের ফাসি চাই। পরিবারের স্বজন ও প্রতিবেশিরা জানান কলারোয়ার দামোদরকাটী গ্রামের নূর আলীর ছেলে জনৈক আকবর হোসেনের কাছ থেকে ৩৪ শতক জমি ক্রয় করেন প্রতিবেশি ওয়াজেদ আলির ছেলে আকবর আলি। এর মধ্যে কিছু জমি নিয়ে আকবরের সাথে শাহিনুরের মামলা চলছিল। এই বিরোধ ছাড়া শাহিনুর পরিবারের রসাথে কারও কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। তাদের ধারনা জমির কারণেই তাকে সপরিবারে খুন হতে হয়েছে।
ঘটনাস্থলে এসে জানা গেছে জীবিত থাকা একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানা (৪মাস) কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন নিরাপত্তার জন্য নিয়ে যান। পরে তিনি তাকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেন। তাদের একমাত্র বোন আছিয়া খাতুন বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। তিনি বলছেন, আমার মা ও আরেকটা ভাই এখানে থাকলে তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে যায় সন্ত্রাসীরা। বিদেশে থাকায় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রানে বেঁচে যান। তিনি এই নৃশংস হত্যাকান্ডকে সেই ঘটনার সাথে তুলনা করেন। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারান চন্দ্র পাল জানান, পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সাল্হাউদ্দিনসহ আমরা সকলেই ঘটনাস্থলে রয়েছি। হত্যার প্রাথমিক কোন কারনও জানা যায়নি।

ঘটনাস্থলে সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র‌্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারেই অবস্থিত এই বাড়িতে এখন শত শত লোক ভিড় করছেন। ময়না তদন্তের জন্য লাশগুলি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই দুঃখজনক ঘটনার তদন্তে নেমেছি আমরা। হত্যাকরীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ঘাতক যেই হোক তারা রক্ষা পাবে না। এদিকে ৪ মাস বয়সী শিশুটির দায়িত্ব গ্রহন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি শিশু মারিয়া সুলতানাকে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে জিম্মায় রেখেছেন। এখন থেকে তার চিকিৎসা এবং জীবন গড়ার যাবতীয় দায়িত্ব জেলা প্রশাসক গ্রহন করেছেন বলে ঘটনাস্থলে যেয়ে তিনি ঘোষনা দেন। নিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন (৬০) আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন। শাহীনুরদের তিন ভাইয়ের একভাই আশরাফুল মালয়েশিয়া থাকেন। অপরজন রায়হানুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com