November 11, 2024, 3:33 am
চার বছর আগে দুই ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের চাপায় ডান পা থেঁতলে যায় আয়েশা খাতুনের। চিকিৎসার পর ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। এরপর থেকেই ক্রাচ দিয়ে চলাফেরা করতে শুরু করে মেয়েটি। চিকিৎসকরা একটি কৃত্রিম পা লাগানোর পরামর্শ দেন। তবে অভাব-অনটনের কারণে একটি কৃত্রিম পা লাগানোর টাকা জোগাড় করতে পারেননি আয়েশার বাবা।সাতক্ষীরার তালা সদরের আগোলঝাড়া গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা খাতুন। বর্তমানে আগোলঝাড়া দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে সে। তার বাবা ওমর আলী শেখ দিনমজুর। একটি ধানের চাতালে কাজ করেন।মাদরাসাছাত্রী আয়েশা খাতুন জাগো নিউজকে জানায়, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া থানার চুকনগর এলাকায় দুটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের মাঝখানে চাপা পড়ে তার ডান পা থেঁতলে যায়। পরে চিকিৎসকরা পা কেটে ফেলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, একটি কৃত্রিম পা লাগালে সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে। তবে তার দিনমজুর বাবার পক্ষে আজও একটি পা লাগানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।আয়েশা বলে, আগোলঝাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৩৩ পেয়ে পাস করেছি। বর্তমানে আগোলঝাড়া দাখিল মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছি। ক্রাচ দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। এভাবে চলাফেরা করতে খুব কষ্ট হয়। আপনারা আমার একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করেন। খুব খুশি হবো।আয়েশার ফুপা মোড়ল শাহিন উদ্দীন বলেন, বিভিন্ন মানুষের কাছে সহযোগিতার জন্য গিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। সাভারের সিআরপি হাসপাতালে কথা বলেছি, সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম পা লাগাতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। টাকা জোগাড় না হওয়ায় এখনো পা লাগানো হয়নি।তিনি আরও বলেন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সহযোগিতার জন্য গিয়েছি। তারা জানিয়েছেন, দেড় থেকে দুই হাজার টাকা সহযোগিতা দেয়া হবে। তবে সেটিও মৌখিকভাবে বলেছেন। আবেদন করেও কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।আয়েশার বাবা ওমর আলী শেখ বলেন, আমি কখনো ধানের চাতাল আবার কখনো মানুষের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই। অভাবের সংসারে ৩০ হাজার টাকা একত্রে করা সম্ভব হয়নি আজও। হৃদয়বান কোনো মানুষ সহযোগিতা করলে আমার মেয়েটি আবার স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাওলানা আসাদুজ্জামান মোড়লের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।আয়েশার প্রতিবেশী আইনজীবীর সহায়ক বাবলুর রহমান জানান, পরিবারটি খুব অসহায়। টাকার অভাবে মেয়েটির একটি কৃত্রিম পা লাগাতে পারছেন না তার শ্রমিক বাবা।তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাজীব সরদার বলেন, কৃত্রিম পা কিনতে ২০-২৫ হাজার টাকা লাগতে পারে বা তার কমবেশিও হতে পারে। রাজধানীতে কৃত্রিম পা কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই কিনতে হবে। সেটি চিকিৎসকরাই প্রতিস্থাপন করবেন।আয়েশা খাতুনের সার্বিক বিষয় জেনে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, সহযোগিতা চেয়ে মেয়েটি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করলে তার স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।মাদরাসাছাত্রী আয়েশাকে সহযোগিতা করতে বাবা ওমর আলী শেখের সঙ্গে মোবাইলে (০১৯১৪৮২৭৫১৬) যোগাযোগ করতে পারেন।
Comments are closed.