March 17, 2025, 11:53 pm
এসএম বাচ্চু,তালা(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি:
তালার কৃত্বি সন্তান ,একুশে পদক প্রাপ্ত খ্যাতনামা চিত্র শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর’র প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে । মৃত্যু বার্ষিকীতে উপল্যক্ষে প্রয়াত চিত্র শিল্পীকে যথাযথ ভাবে স্মরণ করার জন্য তালা সহ একাধিক স্থানে নানাবিধ কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়েছে।
প্রয়াত চিত্র শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর’র ভ্রাতুষ্পুত্র সাংবাদিক সৈয়দ জুনায়েদ আকবর জানান, মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে রোববার বিকালে তালার তেঁতুলিয়া গ্রামে শিল্পীর পৈত্রিক নিবাসে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাকার বাসভবনে দোয়া মাহফিল সহ কানাডার টরন্টো শহরের বাংলাদেশ সেন্টারে দোয়া ও আলোচনা সভা সহ নানাবিধ কর্মসূচী পালিত হবে। সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফাউন্ডেশন, কানাডা চাপ্টারের আয়োজনে উক্ত কর্মসূচী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন, বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে কবি, সাহিত্যিক, চিত্র শিল্পী ও সঙ্গীত শিল্পী সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া তাঁর চাচা প্রয়াত সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তালায় একটি আর্ট ইনস্টিটিউট স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ১৯৩৫ সালের ৪ নভেম্বর (প্রকৃত জন্ম তারিখ- ২ জানুয়ারী ১৯৩৫) তালার তেঁতুলিয়া গ্রামের সমভ্রান্ত হাশেমী পরিবারের নিজ বাড়িতে সৈয়দ জাহাঙ্গীর জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মইনুদ্দীন হাশেমী। তালা বি. দে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’র ছাত্র ছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর। এখান থেকে মেট্রিক পাশ করার পর তিনি ঢাকায় লেখাপড়া করেন। সেখানে আই.এ পাশ করার পর ১৯৫৫ সালে ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে সফলতার সাথে চারুকলার উপর গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি ওই কলেজের তৎকালীন শিক্ষক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের প্রিয় ছাত্রও ছিলেন।মুলত তিনি বড় ভাই একুশে পদক ও স্বাধিনতা পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নাট্যকার সিকান্দার আবু জাফর এর অনুপ্রেরনাতে সৈয়দ জাহাঙ্গীর আট কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। আর্ট কলেজে লেখাপড়া করাকালে সৈয়দ জাহাঙ্গীর পেশাগত ভাবে চিত্র অংকন শুরু করেন। তার আঁকা চিত্র নিয়ে আমেরিকা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত স্থানে একক প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চায়না, জাপান, ভুটান, হংকং, ইতালী, জিম্বাবুয়ে, ফ্রান্স ও আমেরিকা সহ ১৬টি দেশে তার চিত্র নিয়ে শতাধিক গ্রুপ প্রদর্শনী করা হয়। এরফলে তিনি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন এবং ১৯৮৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়া দেশ ও বিদেশ থেকে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন তিনি।খুলনা আর্ট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর বাংলা অ্যাকাডেমির আজীবন সদস্য ছিলেন। তাকে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০জন চিত্র শিল্পির মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে গন্য করা হয়। তিনি সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিক তৎকালিন সাপ্তাহিক সমকাল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ তৈরি করতেন।চিত্র শিল্পির পাশাপাশি তিনি তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানের টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপন করতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নেয়া হলে সৈয়দ জাহাঙ্গীর ক্ষুব্ধ হয়ে টেলিভিশনে বাংলায় সংবাদ উপস্থাপন করেন। এতে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলে তিনি করাচি শহরের ৩টি বাড়ি সহ সকল সম্পদ ফেলে এদেশে পালিয়ে আসেন।মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন ও রোহিঙ্গাদের এদেশে পালিয়ে আসার উপর তিনি একটি ঐতিহাসিক চিত্র অংকন করেন। যা ৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলে সমূদয় টাকা তিনি রোহিঙ্গাদের মাঝে দান করে দেন। বরেন্য চিত্র শিল্পি সৈয়দ জাহাঙ্গীর ৮৩ বছর বয়সে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। তাকে তালার তেঁতুলিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
Comments are closed.