February 5, 2025, 7:48 am
নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আবেদনকৃত বৈধ প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র না দেয়া, নির্দিষ্ট তারিখের পরে আবেদন করা প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়াসহ অন্যান্য অভিযোগ করেছেন কলেজের শিক্ষক ও বঞ্চিত প্রার্থীরা।শনিবার (৯নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে কলারোয়া সরকারি কলেজে ওই নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।সোনার বাংলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুন ও গভর্নিং বডির সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্ধে যোগসাজশে নিয়োগ বানিজ্যসহ দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়।এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধরা শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অফিস, দুদক ও বিভিন্ন প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন।অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে- কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুন চলতি বছরের ২জুলাই ছুটিতে গেলে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ওই কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক আরশাদ আলীকে লিখিতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন এবং ১০ আগস্ট তিনি যোগদান করেন।গভর্নিং বডির নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরশাদ আলী ১৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগের বার্তা পত্রিকায় কলেজের অতিরিক্ত সৃষ্ট ৫টি পদে যথাক্রমে ১.প্রদর্শক- ৪র্থ পদ, ২.অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ৩.ল্যাব সহকারী পদার্থবিদ্যা- ২য় পদ, ৪.ল্যাব সহকারী -৩য় পদ ও ৫.ল্যাব সহকারী-৪র্থ পদে ৫জনকে নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ১৯জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে’ যোগ্যতম প্রার্থীদের আবেদনের সময় নির্ধারিত ছিলো।পত্রিকায় ১৫দিনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত ০২আগস্ট তারিখের মধ্যে শুধুমাত্র ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদের বিপরীতে জেসমিন আরা, আল মামুন, সুরাইয়া ইয়াসমিন নামের ৩জন আবেদন জমা দেন।পরে ০৫ আগস্ট তারিখে জহুরুল ইসলাম নামের আরো একজন আবেদন জমা দেন। নির্ধারিত সময়ের পর আবেদন করায় তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরশাদ আলী প্রচলিত নিয়মে জহুরুল ইসলামের আবেদন পত্রটি ‘নির্ধারিত সময়ের পরে প্রাপ্তি’ হওয়ায় সেটা লিখিতভাবে বাতিল করে দেন।
১০ আগস্ট মূল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুনা কলেজে যোগদান করে দায়িত্ব বুঝে নিলে ওই একটি পদের বিপরীতে ৩টি (জেসমিন আরা, আল মামুন, সুরাইয়া ইয়াসমিন) আবেদনপত্র তুলে দেন প্রভাষক আরশাদ আলী। কিন্তু অদৃশ্য কারণে নির্ধারিত সময়ে গৃহীত বৈধ ওই ৩টি আবেদন বাতিল করে দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুন।
এদিকে, ওই পদে গত ৯ নভেম্বর শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র বিতরণে দেখা যায় চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি। সেখানে বৈধভাবে জমা দেয়া ৩জন আবেদনকারীর কাউকে প্রবেশপত্র না দিয়ে অদৃশ্য কারণে তাদের বাদ দেয়া হয়। অথচ গোপনে ব্যাকডেটে (পুরাতন তারিখ দেখিয়ে) নতুন করে নিজেদের মনোপুতো ৩জনের আবেদন জমা নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হয়।
এমনকি একই পদের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরে আবেদন দেয়ার জন্য লিখিতভাবে বাতিলকৃত জহুরুলের নিকট থেকেও নতুন করে আরো একটি আবেদন প্রহন করে তাকেও প্রবেশপ্রত্র বিতরণ করা হয়।
অভিযোগে আরো বলা হয়- সম্পূর্ণ অনিয়ম ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ৩নং এ উল্লেখিত ল্যাব সহকারী পদার্থ বিদ্যা ২য় পদের বিপরীতেও ৩টি আবেদন গ্রহণ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুন।
তবে নিয়োগ পরীক্ষায় ল্যাব সহকারী পদে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১জন অনুপস্থিত থাকায় শনিবারের নিয়োগ পরীক্ষায় কোরাম সংকটের কারণে ওই পদে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি কলারোয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু।
তিনি বলেন- ‘সোনারবাংলা কলেজের নিয়োগ সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটি বৈধ বলে যে কাগজপত্র আমার কাছে দাখিল করেছেন আমরা সেই আলোকেই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়েছি।’
এই অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সোনারবাংলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিককে বসিয়ে তার সামনেই কলেজের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের সাথে মোবাইলে কথা বলেন। মোবাইলে কথা শেষ হলে তিনি সাংবাদিককে বলেন- ‘আমার সভাপতি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে নিষেধ করছেন, তাই আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
এদিকে, সঠিক সময়ে আবেদন করেও নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশ পত্র না পাওয়া ৩জন চাকরীপ্রার্থী ইতোমধ্যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ এনে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও সভাপতির নামে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
আর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সময়কালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরশাদ আলী লিখিত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে, নিয়োগ বোর্ড সংশ্লিষ্ট সোনাবাড়িয়ায় অবস্থিত সোনারবাংলা ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কি কারণে কলারোয়া সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটিও অজানা।
Comments are closed.