January 15, 2025, 2:37 pm
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রথম ঢেউ শেষে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনিতেও থেমে নেই জীবনের গতি। থেমে নেই রাজনীতি। নির্বাচনে ভোট দেওয়াও বন্ধ নেই। সদ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হলো। ভারতেও করোনার মধ্যে বিধান সভার নির্বাচন হয়েছে বিহার রাজ্যে। বাংলাদেশের নানা নির্বাচন, উপ-নির্বাচন হচ্ছে। সামনে আছে দেশব্যাপী পৌরসভাগুলোর নির্বাচন।
বাংলাদেশে বর্তমানে তিনশ পৌরসভা আছে, যার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একযোগে দেশের ২৩৪টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিতগণ পরের বছর (২০১৬) জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। সে হিসাবে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবে।
পৌরসভা আইন মতে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে ডিসেম্বর ২০২০ সালে পৌরসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এ লক্ষ্যে কাজ করছেন। আর দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রার্থীরা প্রচারণার অংশ হিসেবে মাঠে-ময়দানে নেমে গেছেন।
করোনাকালে বিশ্বের বিভিন্ন নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পটভূমিতে বাংলাদেশের পৌর নির্বাচনগুলোতেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষত স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের টক্কর হওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলো অতীতে ভোটযুদ্ধের আবহে জমজমাট ছিল।
তবে, এবার করোনাকালে নির্বাচনের পরিবেশ ও ভোটের চিত্র কেমন হবে, তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। কারণ, করোনাকালের নির্বাচনগুলো অন্য সময়ের ভোটের চেয়ে আলাদা হয়েছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তীব্র ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেন-কমলা জুটির ক্ষমতায় আসার পুরোটা পথই ছিল চ্যালেঞ্জে ভরপুর। মার্কিন দেশের শত বছরের ইতিহাসে এমন নাটকীয় ও উত্তেজক নির্বাচন আরেকটিও হয়নি। নির্বাচন-পরবর্তী বাহাত্তর ঘণ্টা ধরেই চলেছে টানটান উদ্বেগ। তিন দিনে ফলাফল নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বারবার বদলেছে তথ্য, পরিসংখ্যানের ভোটচিত্র।
রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। করোনার কারণে মানুষ বুথে এসেছেন কম। পোস্টাল ভোট দিয়েছেন বেশি। আগাম ভোট সংগ্রহে ডেমোক্র্যাটদের কৃতিত্ব নির্বাচনে জিততে সহায়ক হয়েছে। ভোট গণনার সময় পরিস্থিতি এমনও হয়েছে যে, মনে হচ্ছিল, হয়ত ট্রাম্পই জিতে যাচ্ছেন। এতোটাই কামড়াকামড়ি ভোটযুদ্ধ হয়েছে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
একই চিত্র দেখা গেছে ভারতের বিহারের নির্বাচনের সময়। করোনাকালের ভোটচিত্রে তীব্র লড়াইয়ের যে নজির দেখা গেছে, তা অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের মতোই। এনডিএ-ইউপিএ-র আসন সংখ্যায় শুধু নয়, বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বহু কেন্দ্রে লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি। এতটাই কান ঘেঁষা পরিস্থিতি যে একটি আসনে মাত্র ১২ ভোটে নির্ধারিত হয়েছে জয়-পরাজয়। করোনায় ভোটের রঙ্গ ছিল সত্যিই অতি উত্তেজক ও উদ্বেগজনক।
করোনাকালে সম্পন্ন নির্বাচনগুলোর ভোটচিত্র সত্যিই উল্লেখ্য করার মতো। প্রচণ্ড লড়াই ও হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা করোনাকালীন ভোটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশেও যে পৌরসভার নির্বাচন আসছে, তা সম্পন্ন হবে ঘোরতর করোনাকালে। সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গরোধ ইত্যাদি মান্য করে নির্বাচনে অতীতের মতো বিপুল ভোটারের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের সম্ভাবনাও এবার কম। ফলে বিজয়ের জন্য প্রার্থীদের অনেক কৌশলী, পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও পূর্ণ সজাগ থাকতে হবে।
Comments are closed.