খুলনা জেলা পরিষদের কোটি টাকার ৪০টি প্রকল্পের অধিকাংশই অস্তিত্বহীন হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় এগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে এসব প্রকল্পে বরাদ্দও এসেছে। তবে এর কয়েকটিতে সিন্ডিকেট করে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে টাকা তোলার চেষ্টাও হয়েছে। বিলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদের স্বাক্ষর ছিল না, ছিল তার গাড়িচালকের সই। এজন্য চেক আটকে দেওয়ায় জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহাবুবুর রহমানের ওপর হামলা চালানো এবং লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে বিল ও প্রকল্পের ফাইল ছেড়ে দিতে চেয়ারম্যানের গাড়িচালক শহীদুল্লাহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুবকে চাপ দেন। তিনি এ কাজ করতে রাজি না হওয়ায় দু’জন লাঠি ও কোদাল নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তার ওপর হামলা চালান। এ সময় অফিসের কর্মচারী ও কয়েকজন ঠিকাদার তাদের ধরে ফেলেন। পরে তাদের অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়।জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডুমুরিয়া উপজেলার বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের উন্নয়ন, রূপসা উপজেলার আলাইপুর উত্তর শেখপড়া হযরত আবু বক্কার (রা.) মসজিদের উন্নয়ন, চুকনগর মাদ্রাসা জামে মসজিদের উন্নয়ন, চুকনগর হাসানিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের উন্নয়ন ও চুকনগর হাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসার উন্নয়নসহ ৪০টির বেশি প্রকল্পে প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। যাচাই বাছাইয়ের পরে নানা অনিয়মের কারণে এসব প্রকল্প আটকে দেওয়া হয়।জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, ‘সম্প্রতি ৪০টির বেশি প্রকল্পে প্রায় কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও প্রকল্পগুলোর অধিকাংশেরই অস্তিত্ব নেই। এছাড়া দুস্থদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা এবারের ভ্যানগুলো খুবই নিম্নমানের। এসব ভ্যান গ্রহণ না করতে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি।’জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম্যানের গাড়িচালক শহীদুল্লাহ কিছু দিন আগে গাড়ির ক্যামেরা কেনার কথা বলে ২৪ হাজার ৯৭০ টাকার একটি বিল জমা দেন। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেন ওই ক্যামেরার দাম ৫ হাজার টাকা। বিলটি আটকে দিয়ে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। একই ব্যক্তি রূপসার আলাইপুর উত্তর শেখপড়া হযরত আবু বক্কার (রা.) মসজিদের উন্নয়নের নামে ১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প দাখিল করেন। এই প্রকল্প নিয়ে সন্দেহ হলে সেটি আটকে দেওয়া হয়। গাড়িচালক শহীদুল্লাহ ওই প্রকল্পের চুক্তিতে সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।চেয়ারম্যানের গাড়িচালক শহীদুল্লাহ বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা তার ব্যবহৃত গাড়িতে ১২ হাজার টাকার মালামাল সংযোজন করলেও তার বিল পরিশোধ করেনি। এছাড়া তার গাড়ির জন্য চারটি টায়ার দাবি করেছেন। কিন্তু অবৈধ সুবিধা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, রূপসায় তার নানাবাড়ির কাছে মসজিদের উন্নয়নের একটি প্রকল্পের ব্যাপারে তিনি ফাইল ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এ নিয়ে কিছুটা কথাকাটাকাটি হয়েছে। তবে হামলার ঘটনা ঘটেনি।জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, তিনি ঢাকায় একটি প্রোগ্রামে রয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত হয়েছেন। রবিবার (২১ জুলাই) অফিসে এসে এ বিষয়ে আইনগত এবং বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি এখনও হামলা, লাঞ্ছিত করা কিংবা অন্য কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’