খোলা কলাম জিনের বাদশাহ হেরে গেল মেয়েটির কাছে
- Update Time :
Wednesday, July 17, 2019
-
170 দেখা হয়েছে
তিন গ্রামের মাতব্বর, এলাকার প্রভাবশালী গেরস্থ ক সরদারের বাড়িতে প্রতিদিন বহু চাকর-নওকরের কোলাহলময় কর্মব্যস্ততা। হঠাৎ একদিন সরদার সাহেবের স্ত্রী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। কারণ তার সোনাদানা-গহনাগাঁটি সব চুরি হয়ে গেছে। সকলের সন্দেহ হলো ঘ সেবাদাসীর উপর। ক সরদার তিন গ্রামের মাতব্বর, মানুষ চরায়ে খান, ভালমন্দ সব ধরনের মানুষের সাথে তার উঠাবসা, কিভাবে চোরাই মাল উদ্ধার করতে হয়, তা তার ভালই জানা। পাশের গ্রামের গ তুলোরেশে তার প্রজাবৎ হুকুমের দাস। ঘনিষ্ঠ সূত্রে শোনা গেল, সামনের অমাবস্যার রাতে সরদার সাহেবের বাড়িতে জিনের বাদশাহ কায়কোবাদ হাজির হবে। সেই বলে দিবে, মাল কে নিয়েছে। চোর মাল ফেরত না দিলে, জিনের বাদশাহ তাকে রাতারাতি তুলে নিয়ে যাবে অথবা সাংঘাতিকরকম ক্ষতি করে থুয়ে যাবে। যেমন Ñ জীবনে কখনো বিয়ে-থা হবে না, সন্তান হবে না, মুখ দিয়ে রক্ত উঠবে, রক্তবমি হবে, গায়ে জ্বালা উঠবে, ফোস্কা পড়বে, রক্তশূন্য হয়ে দেহ শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে যাবে, শেষ পর্যন্ত ‘জ্ঞান হারাবে, মরেই যাবে, বাঁচাতে পারবে না কেউ’ ইত্যাদি। নির্ধারিত অমাবস্যার রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও সরদার সাহেবের পাকা বাড়ির সামনের প্রশস্ত উঠান লোকে লোকারণ্য। তিনি কতক চামচা-চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে বসে আছেন। খ গুণিন ও গ তুলোরেশে আগেই হাজির। গুণিন হুজুর খুব আঁটসাঁট করে দেহ-গ-ী এঁকে তার মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালেন। ভাবখানা এমন যেন, ‘শুনে তোমার গায়ে দেবে কাঁটা।’ গ-ীর মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় পাঠ-উচ্চারণ শেষ করে ফুঁক মারার আগেই (হিসাবে একটু ভুল হয়ে গেল; নিয়ম হচ্ছে, ফুঁক মারার পরে) গ তুলোরেশে টিকটিকির মত হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে জমীনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর কশাকশি, খিঁচুনিমিচুনি, মাটি খামচাখামচি। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা আর কি! কিছু লোক, বিশেষ করে মহিলারা তো ভয় পেয়ে ভেগে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর জিনের বাদশাহ কায়কোবাদ হাজির হলো এবং বিকৃত নাকী সুরে সালাম দিল। গুণিন হুজুর উত্তর দিলেন। অতঃপর ক্রমাগত চার্জ করতে লাগলেন, ‘বল, হার, বালা, সোনার দুল কে নিয়েছে। বল, কে চুরি করেছে।’ গ তুলোরেশে প্রথমে ইশারা-ইঙ্গিতে, পরে স্পষ্টভাবে ঘ সেবাদাসীর নাম উল্লেখ করল। ভয়ে, দুঃখে, অপমানে অল্পবয়সী সেবাদাসী মেয়েটি সত্যিকারে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। তদুপরি কয়েকজন চেলা-চামচা তাকে নুন খেয়ে নিমকহারামি করার কারণে ছি-থু করতে লাগল। তবে সরদার সাহেব খুব বুদ্ধিমান লোক। তিনি মেয়েটির উপর মানসিকভাবে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করলেও, শারীরিকভাবে কোন রকম হেনস্তা করেননি। যেহেতু মাল সে নেয়নি, তাই উদ্ধার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আসল চোর ঙ সেবাদাস এই মজলিসেই উপস্থিত থেকে সরদার সাহেবের ফাই-ফরমাশ হুকুম তামিল করছিল। তার উপর সন্দেহ জোরদার হয়নি। কারণ সে ঘরের বাইরের কাজকর্ম করত। পরবর্তীকালে সবটা হজম করতে না পেরে সে-ই কিছু মাল ফেরত দিতে বাধ্য হয়। এদিকে সেবাদাসী কিশোরী মেয়েটি অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বিধ্বস্ত অবস্থায় ঐ রাতেই তার অসহায় পিতা-মাতার হাত ধরে নিজ গৃহে ফিরে যায়। ঐ সময় সে কোন দুর্ঘটনা ঘটায়নি, যেমনটি অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে অনেকেই করে বসে। এর কিছুদিন পর তার বিয়ে হয়, পরে সন্তান হয়। বাচ্চা বড় হয়েছে, মাদ্রাসায় যায়। এখন সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিকভাবেই চলছে। জিনের বাদশাহ তার কোন ক্ষতি করতে পারেনি।