July 27, 2024, 12:11 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
গতি কমেছে মশক নিধন কার্যক্রমে

গতি কমেছে মশক নিধন কার্যক্রমে

জাতীয় ডেস্ক: ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে রাজধানীর প্রতিটি অলিগলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং বছরজুড়ে মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। রাজধানীতে ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল সে সময় নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে কাজের গতি কমেছে সংস্থা দুটির।রাজধানীবাসীর অভিযোগ, ডেঙ্গু যখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল সে সময় মশক নিধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পরিচালিত হলেও বর্তমানে তা ঝিমিয়ে পড়েছে। এখন আর আগের মতো মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদেরও মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না। অথচ সংস্থা দুটি ঘোষণা দিয়েছিল, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বছরজুড়ে কাজ করতে হবে। অথচ বর্তমানে তাদের কার্যক্রমে মন্থরভাব দেখা দিয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিশেষ মৌসুম বা নির্দিষ্ট সময়ে ডেঙ্গুবিরোধী তৎপরতা দেখালে হবে না। বরং বছরব্যাপী এ কার্যক্রম জোরদার রাখতে হবে।অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোস্তাফিজুর রহমানের বরাত দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসকরণ কার্যক্রমে গত ২২ জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের টিম মোট দুই লাখ ১৫ হাজার ৮৪৩ টি বাড়ি পরিদর্শন করে এক হাজার ৪৯৩টি বাড়িতে লার্ভার সন্ধান পায়। পাশাপাশি নির্মাণাধীন ভবনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার হাজার ৯০৩টি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শনের মাধ্যমে ২০৭টিতে লার্ভার সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে জরিমানা করা হয় ৩৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।অন্যদিকে মশা মারতে দ্বিতীয় দফায় চিরুনি অভিযানে মোট এক লাখ ৩০ হাজার ৪৮৮টি বাড়ি বা স্থাপনা পরিদর্শন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মশকনিধন সংশ্লিষ্ট টিম। এ বিষয়ে তাদের কার্যক্রমও অব্যাহত আছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।তাদের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় মোট ২৮৪টি বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। বাড়ি বা স্থাপনার মালিকদের সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও আদায় করেছে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ৭৫ হাজার ৩০৪টি বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় সেসব স্থানগুলো ধ্বংস করে লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জাগো নিউজকে এসব তথ্য জানান।এর আগে প্রথম দফায় চিরুনি অভিযান শুরু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সেই অভিযানে (১২ দিন) ৩৬টি ওয়ার্ডে সর্বমোট এক লাখ ২১ হাজার ৫৬০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে মোট এক হাজার ৯৫৭টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়া ৬৭ হাজার ৩০৬টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী স্থান (জমে থাকা পানি) চিহ্নিত করা হয়।রাজধানীর উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে জাগো নিউজকে জানান, কিছুদিন আগেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। সেসময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধনে ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে এ কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। কোনো কার্যক্রম এখন আর দেখা যায় না। আগে তারা বাসাবাড়ির পাশের ড্রেন ও আশপাশের এলাকায় সকাল-বিকাল ওষুধ স্প্রে করতো কিন্তু বর্তমানে তাদের দেখা মেলে না। কয়েকদিন আগেও বাসাবাড়িতে খুব বেশি মশা দেখা না গেলেও বর্তমানে মশার উপদ্রব বেড়েছে।অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা এরশাদ আলী বলেন, কিছুদিন আগেও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বাসায় বাসায় গিয়ে এডিসের লার্ভা ধ্বংস করা হতো, জরিমানা আদায় করা হতো। সেই সঙ্গে মশকনিধনকর্মীদের মনিটরিং করা হতো। সবমিলিয়ে ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়ত। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই তাদের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। এখন আর তাদের তৎপরতা চোখে পড়ে না। মশকনিধনকর্মীদেরও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। অথচ ডেঙ্গু মোকাবিলায় সারাবছর ধরে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা ছিল।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নেই পর্যাপ্ত লোকবল। পাশাপাশি ফগার ও হুইলব্যারোসহ অন্যান্য মেশিন-যন্ত্রপাতিতে সংকট থাকায় মশকনিধন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো কাঠামোর মাত্র ৪৮ শতাংশ জনবল নিয়ে সংস্থা দুটি তাদের দ্বিগুণ এলাকায় নাগরিকসেবা দিয়ে আসছে। এ কারণে প্রতিটি সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রমেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংস্থা দুটিকে।সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর নতুন করে ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় সংস্থা দুটির আয়তন বেড়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি বরং বিভক্ত হওয়ার সময় দুই ভাগ হয়েছে আগের জনবল। এজন্য যথাযথ নাগরিকসেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত বিভিন্ন রোগ মোকাবিলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ১২৯টি ওয়ার্ডের জন্য মশক নিধনকর্মী রয়েছেন মাত্র ৭০৯ জন। যে কারণে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় তারা হিমশিম খাচ্ছেন।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com