December 22, 2024, 6:17 am
মানুষের গোনাহ মাফ, বরকত লাভ, জান্নাতের সুসংবাদসহ অসংখ্য নেয়ামত লাভের দিন হচ্ছে জুমআ। এ দিনটি এক জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত পুরো সপ্তাহের গোনাহ থেকে মুমিন বান্দাকে মুক্তি দেয়। এসব নেয়ামত লাভে জুমআর দিন জুড়ে নামাজের আগে পরে রয়েছে বিশেষ আমল। হাদিসে বর্ণিত এ আমলগুলো তুলে ধরা হলো-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমআ এবং রমজানের মধ্যবর্তী সময় যে সব গোনাহ হয়ে থাকে তা পরবর্তী নামাজ, জুমআ এবং রমজান (পালনে) সে সব মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। যদি (সে) কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, তিরিমজি)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের নামাজ পড়ার পর পরদিন ফজরের নামাজ আদায় করে তবে এ সময়ে মধ্যে করা সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।
এভাবে এক জুমআ আদায় করার পর পরবর্তী জুমআ আসা পর্যন্ত, এক রমজানের রোজা আদায়ের পর পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
জুমআর দিনের বিশেষ ৩ আমল
মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমআ আদায় করা ছাড়াও নামাজের আগের পরের বিশেষ ৩টি আমল রয়েছে। আর সবের ফজিলত ও মর্যাদাও অনেক বেশি। তাহলো-
>> সুরা কাহফ তেলাওয়াত
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সুরা তেলাওয়াত করা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এটি কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা। সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারলেও প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত হলেও তেলাওয়াত করা উত্তম। আর তাতে মিলবে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত।
– যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।
– যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্ব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।
– এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত তার সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।
>> বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা
জুমআর দিন বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়।
আর যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর ৮০ বার এ দরুদ পড়ে; তার ৮০ বছরের গোনাহ্ মাফ হয়ে যায় এবং ৮০ বছর ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।
>> আসর থেকে মাগরিব আমল করা
জুমআর দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় নামাজে অতিবাহিত করা উত্তম। কিন্তু এ নামাজের অতিবাহিত করার অর্থ হলো- আসর নামাজ আদায় করে মাগরিব পড়ার নিয়তে বাকি সময় মসজিদে অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলিলে অতিবাহিত করা। দরূদ পড়া। বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আর তাতেই নামাজে অতিবাহিত করার সাওয়াব মিলবে। লাভ করবে অসংখ্য রহমত ও বরকত।
জুমআর নামাজ এবং জুমআর দিনের ইবাদত অনেক ফজিলতপূর্ণ হওয়ার কারণেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআ পরিত্যাগ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (ইচ্ছা করে) অলসতাবশত তিনটি জুমআ ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা তার হৃদয়ে মোহর মেরে দেন (নাউজুবিল্লাহ)।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালেক)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিন নামাজ ও ইবাদতে অতিবাহিত করা। সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। বেশি বেশি দরূদ পড়া। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও দরূদ-ইসতেগফারে অতিবাহিত করা। জুমআর দিনের রহমত বরকত ও মাগফেরাত লাভ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনের আমল ও করণীয়গুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনে মর্যাদা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে গোনাহমুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comments are closed.