February 5, 2025, 2:04 pm
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে একজন রোগীকে দিনে ৩বার ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। আর সেই কথা চিন্তা করেই ইনসুলিনের পরিবর্তে মাসে এক বার মুখে খাওয়ার ওষুধ বাজারে আনতে গবেষণার কাজ শুরু করেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়ার কৃতি সন্তান বিজ্ঞানী শাতিল শাহারিয়ার। ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণ, মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এ চিকিৎসাকে জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ করে তুলেছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে মুখে খাওয়ার ওষুধ আনতে একদল বিজ্ঞানী গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর এই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জটিলতা দূর করতে বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার একদল বিজ্ঞানী অনেক দিন থেকেই গ্লুকাগন-লাইক পেপটাইড-১ (জিএলপি-১) নামের একটি হরমোন নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন তারা। এ গবেষণা দক্ষিণ কোরিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ট্রান্সপোর্টেশন, কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটিতে পরিচালিত হয়।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা খোরদো গ্রামের কৃতি সন্তান তরুণ বিজ্ঞানী গবেষক শাতিল শাহারিয়ার। এই বিজ্ঞানী দলের মূল লক্ষ্য হলো-টাইপ-২ ডায়াবেটিসের এমন কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা। যা ইনজেকশনের মাধ্যমে না দিয়ে মুখে খাওয়ার বড়ি বা ক্যাপসুলের মতো সেবন করা যায়, এমন একটি ওষুধ আবিষ্কার করা, যা খুব অল্প মাত্রায় দীর্ঘ মেয়াদী কাজ করবে।
শাতিল শাহরিয়ার জানায়, তাঁরা গবেষণায় নতুন ‘ড্রাগ মলিকুল’ নিয়ে কাজ করার পরিবর্তে জিন থেরাপিতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। সাধারণভাবে একটি ওষুধ রক্তে যতটুকু মাত্রায় প্রবেশ করে, ঠিক ততটুকুই কাজ করতে পারে। কিন্তু জিএলপি-১ হরমোন শরীরের কোষগুলো থেকে প্রয়োজনমতো প্রতিষেধক তৈরি করে। সম্প্রতি শাতিল শাহরিয়ার ও তার দলের গবেষণাপত্রটি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানভিত্তিক একটি মাসিক গবেষণা ম্যাগাজিন ‘ন্যানো লেটার্স’ এ প্রকাশিত হয়েছে।
এতে শাতিল শাহরিয়ার বলেছেন, একজন সুস্থ মানুষের রক্তে যেভাবে ইনসুলিন তৈরি হয় এবং কাজ করে, এ ওষুধও একইভাবে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাই বারবার ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপসহ অগ্ন্যাশয়ের কোষগুলোকে ধ্বংস করে ডায়াবেটিস রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
এ ওষুধ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম বলে গবেষকেরা দাবি করেন। শাতিল শাহরিয়ারদের গবেষণা বলছে, প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে জিএলপি-১ আমেরিকার এফডিএ কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিষেধক ট্রুলিসিটির ইনজেকশনের চেয়ে সাত গুণ বেশি কার্যকর বলে দেখা গেছে। কারণ, একবার সেবনে ডায়াবেটিক বানরে জিএলপি-১ কমপক্ষে ১৪ দিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে ট্রুলিসিটি বানরের শরীরে স্থির থাকে দুই দিন। গবেষকদের দাবি, জিএলপি-১ মানুষের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এক মাস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ইঁদুর, বানর ও মানবদেহের বিভিন্ন কোষের ওপর গবেষণা করে জানা গেছে, এ ওষুধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। তাদের গবেষণায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে সেটা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এফডিএ) কর্তৃক স্বীকৃত। তাদের নতুন ফর্মুলেশনের ওষুধটিও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের জন্য এএফডিএ এর কাছে আবেদন করেছেন।
খুব শিগ্রহ অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে এই গবেষক দলটি। এএফডিএ অনুমোদন দিলে মানবদেহে এই ফর্মুলেশনের ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রাথমিক ভাবে শুরু হবে। এদিকে সরেজমিনে তরুন বিজ্ঞানী শাতিল শাহরিয়ার গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের খোরদো গ্রামে গিয়ে জানা যায়-তার পিতা শহিদুল ইসলাম এক জন শিক্ষক। তিনি খোরদ্ োসালেহা হক গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার মা একজন গৃহনী, তার মেঝ ভাই ঢাকায় পড়াশুনা করেন। এক মাত্র ছোট বোন ১০ শ্রেণীর ছাত্রী। সে ৩ ভাই বোনের মধ্যে বড় শাতিল শাহরিয়ার।
Comments are closed.