November 2, 2024, 9:42 pm
সাতক্ষীরা প্রবাহ রিপোর্ট: শহরের মুনজিতপুরে সদর এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির মামাতো ভাই সৈয়দ হায়দার আলী তোতার বসত বাড়িতে গড়ে তোলা জুয়ার আসরে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে চলতো মদ, জুয়া ও নারীদের নিয়ে জমজমাট আসর। জেলা ও জেলার বাইরের জুয়াড়ীরা রংমহল হিসেবে ব্যবহার করতো হায়দার আলী তোতার ওই বাড়িটি। ফুফাতো ভাই এমপি হওয়ায় এমপির সম্মান রক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ যাবৎ কোন অভিযান পরিচালনা করেনি বলে ধারণা করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হলো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সারা দেশে মদ, জুয়ার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় পুলিশ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হায়দার আলি তোতার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৪৯ হাজার টাকাসহ ৯ জুয়াড়িকে আটক করেছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে জুয়া খেলার সরঞ্জাম।বুধবার সন্ধ্যায় গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে শহরের মুনজিতপুরে হায়দার আলি তোতার বাড়িতে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারান চন্দ্র পাল জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎমিশের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়।এদিকে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশের নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখ তারিখ সন্ধ্যা ৬.১৫ টার সময় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে শহরের মুনজিতপুর গ্রামস্থ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের দক্ষিণ পাশে মৃত মোকছেদ আলীর পুত্র সৈয়দ হায়দার আলী ওরফে তোতার বসত বাড়িতে অবৈধ জুয়া খেলা অবস্থায় ৯ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন শহরের দক্ষিণ পলাশপোলের আবুল কাশেমের ছেলে মো. শরীফুল ইসলাম (৪২), কলারোয়ার মৃত আবুল ফজলের ছেলে মো. শাহীন হোসেন (৩৫), মধ্যকাটিয়ার মৃত কফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক সরদার (৪৯), শহরের লস্করপাড়ার মৃত মাসুদুল হকের ছেলে মো. মাহমুদুল হক (৫৪), কলারোয়ার মৃত সামছুদ্দিন সরদারের ছেলে মো. আলাউদ্দিন সরদার (৫৮), পুরাতন সাতক্ষীরার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মো. কামরুজ্জামান (৫৪), আশাশুনির মৃত ছামাদ সরদারের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম (৪০), কালিগঞ্জের মৃত গনি সরদারের ছেলে মো. জালাল সরদার (৩৪) এবং শহরের মধ্যকাটিয়ার মো. ইরফান আলী মোল্যার ছেলে মো. গোলাম রব্বানী (৪০)। এসময় অবৈধজুয়া খেলার আসর হতে ৪৯ হাজার টাকা, ১০ (দশ) জোড়া তাস (কার্ড), ১টি জুয়ার বোর্ড (স্কয়ারিং), ১টি জুয়া খেলার গোল টেবিল উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বর্ণিত সৈয়দ হায়দার আলী ওরফে তোতা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তক আহম্মেদ রবি’র মামাতো ভাই। সন্ধ্যা অনুমান ৭টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়।এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সৈয়দ হায়দার আলী ওরফে তোতার ভাইপো সৈয়দ সাদিকুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে পুলিশের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে অভিযান পরিচালনার জন্য পুলিশকে অভিনন্দন জানান বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা অভিযান অব্যাহত রাখারও দাবি জানান। অভিযানের পর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়। জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। অনেকেই খবরটি শোনার পর সত্যতা যাচাই করতে পত্রিকা অফিসে ফোন করতে থাকে। এসময় তারা খবরের সত্যতা শুনে পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রশংসা সূচক দোয়া পড়েছে।এদিকে এলাকাবাসি জানান, দীর্ঘদিন এ বাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হতো। সুন্দরী নারীদের এনে বাড়িতে দেহব্যবসা করানো হতো। মদ ও জুয়ার আসরে বসতেন কথিত ভিআইপিরা। এলাকাবাসি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব অপকর্মের খবর ছাপানোর অনুরোধ করলেও জীবনের ভয়ে কোনো সাংবাদিক লেখার সাহস পায়নি। সূত্র জানায়, ওই বাড়িতে এমন অসামাজিক কার্যক্রম হতো যে, বাড়ি থেকে পাশে ফেলা হতো জন্মনিয়ন্ত্রণ কনডমের বস্তা বস্তা খোলা প্যাকেট। শতশত ফেন্সিডিলের বোতল ফেলে দূষিত করা হতো এলাকার পরিবেশ। তার ভাই এমপি, তাই মানুষ মুখ খুলতে সাহস পেতো না।
Comments are closed.