July 27, 2024, 4:14 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
দারিদ্র্য জয়ী হিরার সাফল্যগাঁথা!

দারিদ্র্য জয়ী হিরার সাফল্যগাঁথা!

‘হে দারিদ্র্য তুুমি মোরে করেছো মহান’ কবির এই উক্তিটি যুগে যুগে প্রেরণার বাণী হয়ে মানুষের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। জীবনে অভাব-অনটন-অপ্রাপ্তি থাকতে পারে। কিন্তু তাতে থেমে থাকে না জীবনের গতিধারা। প্রতিকূলতায় ভেঙে না পড়ে এগিয়ে চলাটাই জীবন। আর এই কথাগুলো যারা জীবনের ব্রত করে নিয়েছে বাস্তবতার সাথে-তারাই এগিয়ে যায়। তাদের জীবনে ধরা দেয় সাফল্য। যে চলার পথে খুলে যায় অপার সম্ভাবনার নব দিগন্ত।ইস্পাহানি হিরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের এক দরিদ্র ঘরের মেয়ে। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ হলেও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন ২০০৯ সালে আইলার পরবর্তী সময়ে স্ট্রোকজনিত কারণে তার বাবার মৃত্যু হলে তাদের দুই ভাইবোনকে নিয়ে মা একই গ্রামের নানার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ইস্পাহানি হিরার নানার বাড়িতে শুধুমাত্র নানি ছাড়া আর কেউ নেই। আর্থিক অনটনের কারণে ছোট ভাইটার পড়ালেখা হয়নি। সে এখন অন্যের বাড়িতে মজুরী খেটে সংসারের ভরণপোষণের চেষ্টা করছে। এদিকে শত কষ্ট দারিদ্র্যের মধ্য দিয়েও সে শিক্ষা জীবনের প্রতিটি স্তরে পেয়েছে নজর কাড়া সাফল্য।২০১১ সালে কালিগঞ্জের ৬৮নং পূর্ব কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ অর্জন করে। এরপর ২০১৪ সালে কালিকাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা হতে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন এ প্লাসসহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করে। ২০১৭ সালে একই মাদ্রাসা হতে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অর্জন করেন জিপিএ ৫।এরপর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে লেখাপড়া করার জন্য ভর্তি হয় শ্যামনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দপুর এ এইচ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে। শিক্ষকদের আন্তরিকতা, সহপাঠীদের সহযোগিতা এবং দারিদ্র্যতাকে জয় করে নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর স্বীয় প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে চলতি বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালে এই বিদ্যাপীঠ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মানবিক বিভাগ থেকে অর্জন করেন নজরকাড়া অভূতপূর্ব সাফল্য। এতেও সে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ ৫ অর্জন করে।
হিরা কালিগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মৃত ইসমাঈল হোসেন বিশ্বাস ও গৃহিনী মোছা. হাসিনা খাতুনের বড় মেয়ে। হিরার এনামুল হক নামে ছোট একজন ভাই আছে। যে অভাবের কারণে লেখাপড়া শিখতে না পেরে অন্যের বাড়িতে দিন মজুরির কাজ করে।
নানার বাড়িতে থেকে কেবলমাত্র নানীর সংসারে ছোট ভাই ও মাকে নিয়ে দারিদ্র্যের চরম কষাঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমানে তার উচ্চ শিক্ষার বাসনা নিরাশাতে পরিণত হতে বসেছে। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে গত দু’মাস আগে। কিন্তু অর্থের অভাবে এখনও সে উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
সে পূর্বের মত আবারও প্রমাণ করলো, আর্থিক অবস্থা ও প্রতিকূলতা সাফল্যের পথে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
ফলাফল জানার পর হিরা উল্লাস প্রকাশ করে। মহান আল¬াহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করে। খুব খুশি হন তার মা-ভাই ও নানীসহ প্রতিবেশিরা।
হিরার মা মোছা. হাসিনা খাতুন বলেন, কোনো প্রাইভেট টিচার হিরার ছিলোনা। তার যা যা প্রয়োজন পড়ে, তা তিনি দিতে পারতেন না বলে আক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, মেয়েকে আরও পড়াশোনা কীভাবে করাবেন-তা তাকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। উচ্চশিক্ষা চালিয়ে নেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।
কলেজ অধ্যক্ষ গাজী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে অনেক বিরূপ অবস্থার মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালাতে হয়। সেকারণে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করতে হলে অনেক বেশি অধ্যবসায় করতে হয়। তিনি বলেন, এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া ফতেমা এইচএসসিতে আরও বেশি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে। লেখাপড়াকে সে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে। তাই এইচএসসিতে সাফল্য আর দূরে থাকেনি, ধরা দিয়েছে তার কাছে এসে।
রোববার এই সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় মানবিক বিভাগের এই মেধাবী ছাত্রী ইস্পাহানি হিরা জানায়, সে ভবিষ্যতে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করতে চায়। চায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। তার মা- ছোট ভাই – নানীকে দেখভাল করতে। আর এটি তার জন্য কঠিন হলেও আর্থিক সাহায্য ও সহানুভূতি পেলে অসম্ভব নয় বলে তার দাবি।
গোবিন্দপুর এ এইচ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকমন্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ইস্পাহানি হিরা তার জীবনের কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের সহায়তা, দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেছে।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com