রফিকুল ইসলামঃজনপ্রশাসন পদকে ভূষিত হয়েছে সাতক্ষীরার বৈচিত্রময় রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র। এবছর জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবসে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র সহ জাতীয় পর্যায়ের ১১ ব্যাক্তি, জেলা পর্যায়ের ৩৪ ব্যাক্তি এবং উভয় পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক ২০১৯ প্রদান করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ জনসেবায় আস্থা অর্জনকারী সকল কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে জনপ্রশাসন পদক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দোদুল’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আশিকুর রহমান চৌধুরী ও জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহাম্মদ। এসময় সাধারন ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শ্রেনীতে সাতক্ষীরার সীমান্ত ইছামতি নদীর কোঁল ঘেষে বৈচিত্রময় রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টিতে অনন্য অবদানের জন্য জনপ্রশাসন পদকে মনোনীত দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসের পক্ষে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ (বর্তমানে খুলনার দীঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার) রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের নিকট থেকে পদকটি গ্রহন করেন। উল্লেখ্য যে, সাতক্ষীরার ইছামতি নদীর সীমান্তে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম ম্যানগ্রোভ বনটি ধীরে ধীরে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সাতক্ষীরাবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পাশাপাশি ইতোমধ্যেই জেলার বাইরেও পরিচিতি লাভ করতে শুরু করলে এবছর জনপ্রশাসন পদকে মনোনীতের উদ্যোগ নেয়া হয়। মাত্র কয়েক বছরেই গড়ে ওঠা বনটি নদী ভাঙন রোধ করে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার সাথে সাথে বিনোদনের খোরাক জোগাতে শুরু করে। দুই বাংলার আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদীর ভাঙন রোধকল্পের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম তরিকুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যড সম গোলাম মোস্তফার উদ্যোগে দেবহাটার সীমান্তবর্তী শিবনগর এলাকায় ইছামতির তীর ঘেষে সরকারী সম্পত্তি দখলমুক্ত করে ০৭ একর আয়তনের একটি সুন্দর লেকসহ ৩১.৪৬ একর জমিতে লবনাক্ততা সহনশীল বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের সারিবদ্ধ কয়েক হাজার চারা রোপনের মাধ্যমে সুন্দরবনের আদলে সৃষ্টি করা হয় রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই রোপনকৃত এসব কেওড়া, গোলপাতা, গেওয়া, গরান সহ অন্যান্য বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা গুলি আয়তনে এবং উচ্চতায় বৃদ্ধি হয়ে প্রাকৃতিক সৃষ্ট বনাঞ্চলের মতো রুপ নিলে মানুষের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম স্থান হিসেবে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে সাতক্ষীরা জেলা ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ ন ম তরিকুল ইসলামের তত্বাবধায়নে সুসজ্জিত রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। উদ্বোধন পরবর্তী সাতক্ষীরার অপর জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন পর্যটন কেন্দ্রটির উন্নয়নে। একে একে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যেসকল কর্মকর্তারা পদায়ন করেছেন তাদের প্রত্যেকেই আপ্রান চেষ্টা করেছেন স্থানটিকে একটি নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে বৈচিত্রময় ও সৌন্দর্য মন্ডিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছেন সাবেক দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ (বর্তমানে খুলনার দীঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে থাকছে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটক কেন্দ্রটি। শুধু পর্যটকদের পদচারনায় নয়, সন্ধ্যা আগত হওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সুমধুর কলরবেও মুখরিত হয়ে ওঠে স্থানটি। দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় রোপন করা হয়েছে আরো বেশ কিছু প্রজাতির গাছের চারা, নির্মান করা হয়েছে মূল প্রবেশের গেট,পর্যটকদের ভ্রমনের ট্রেইল, আধুনিকায়ন করা হয়েছে লেক ও রেস্ট হাউজ। শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে দোলানা, স্লিপিং ট্রেইল ও বিভিন্ন প্রকারের কৃত্রিম জীবযন্তু। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজ আল আসাদ দায়িত্বরত থাকাকালীন তারই গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূখী পদক্ষেপে ক্রমশই বদলে যেতে থাকে ম্যানগ্রোভ বনের দৃশ্য। পরবর্তীতে বিনোদন কেন্দ্রটিকে আরো নান্দনিক ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তা নির্মানের পাশাপাশি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইকবাল হোসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের তত্বাবধায়নে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে উন্নয়ন কার্যক্রম। সম্প্রতি পর্যটন কেন্দ্রটিকে আধুনিকায়ন ও পুর্নাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।