January 15, 2025, 9:40 am
দেবহাটায় ভাড়াটে দলবল নিয়ে মহড়া দিয়ে রীতিমতো এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে সরকারি জমি দখলে নিয়েছেন দেবহাটা কলেজের বিএনপিপন্থী প্রভাষক জাফর ইকবাল ও শ্বশুর ইয়ামিন মোড়ল। অভিযুক্ত জাফর ইকবাল সখিপুর ইউনিয়নের কোঁড়া গ্রামের মৃত গফরান (বিডিআর)’র ছেলে এবং তার শ্বশুর নাজিরের ঘের এলাকার বাসিন্দা ইয়ামিন মোড়ল সাবেক ইউপি সদস্য ও সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এলাকাবাসির ঘুম ভাঙার আগেই ৭০/৮০জন ভাড়াটে লাঠিয়াল নিয়ে মহড়া দিয়ে এলাকায় রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেবহাটা সদরের বনবিবি বটতলা এলাকার ওই সরকারি জমি ঘেরাবেড়া দিয়ে দখলে নেন ইয়ামিন মোড়ল ও তার জামাতা জাফর ইকবাল। এঘটনায় রোববার দেবহাটা গ্রামের পুটে খাঁ’র পুত্র সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই শ্বশুর-জামাতা’র বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বাদীর দায়েরকৃত অভিযোগ ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, দেবহাটার কোঁড়া মৌজার বনবিবি বটতলার পাশ্ববর্তী সড়কের পাশে বাদি সাইফুল ইসলামের রেকর্ডীয় জমি ও একটি চায়ের দোকান রয়েছে।
কয়েকবছর পূর্বে উপজেলার অন্যতম বিনোদনের স্থান বনবিবি’র বটতলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের কোন রাস্তা ছিলনা। সেসময় তৎকালীন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কথামতো বনবিবি’র বটতলাগামী সরকারি রাস্তা নির্মানের জন্য মূল্যবান রেকর্ডিয় জমি দান করেন নগন্য চা দোকানী সাইফুল। একপর্যায়ে তার দেয়া জমির ওপর দিয়েই নির্মান করা হয় ইটসোলিং রাস্তা। এমন মহানুভবতা ও ত্যাগের বিনিময়ে তার চায়ের দোকানের সামনে থাকা ৪/৫ শতক সরকারি খাস জমি সাইফুলকে ভোগদখলের মৌখিক অনুমতি দেন তৎকালীন জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের নের্তৃবৃন্দরা। দীর্ঘদিন ধরে সেই জমিতে ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়ে ভোগদখলে ছিলেন চা দোকানী সাইফুল ইসলাম। সম্প্রতি সাইফুলের ভোগদখলীয় ওই খাস জমির পাশে জনৈক আবুল কালামের কাছ থেকে ৩২ শতক জমি ক্রয় করেন দেবহাটা কলেজের বিএনপিপন্থী প্রভাষক জাফর ইকবাল। এরপর থেকে ওই ৪/৫ শতক সরকারী খাস জমির ওপর কু-নজর পড়ে তার।
নিজের ক্রয়কৃত জমির সাথে সাথে চা দোকানী সাইফুলের ভোগদখলীয় ওই সরকারি খাস জমি দখলে নিতে মরিয়া প্রভাষক জাফর শ্মরনাপন্ন হন তার শ্বশুর পারুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা ইয়ামিন মোড়লের। জামাতা জাফরকে সরকারি জমি দখল করিয়ে দিতে সম্প্রতি শ্বশুর ইয়ামিন মোড়ল উপজেলার বিভিন্ন প্রশাসনে তদবির শুরু করেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ইয়ামিন মোড়ল তার বাড়ির এলাকা নাজিরের ঘের থেকে প্রায় ৭০/৮০ জনের ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে হামলে পড়েন ২০ কিলোমিটার দূরের সদর ইউনিয়নের চা দোকানী সাইফুলের ভোগদখলে থাকা ওই খাস জমিতে।
একপর্যায়ে রীতিমতো এলাকাজুড়ে আতংক সৃষ্টি করে প্রভাবশালী সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা ইয়ামিন মোড়ল ও তার জামাতা বিএনপিপন্থী জাফর ইকবাল জোরপূর্বক ঘেরাবেড়া দিয়ে সরকারি ওই ৪/৫ শতক খাস জমি জবরদখলে নিয়ে নেয়। এসময় বাঁধা দিতে গেলে জবরদখলকারীরা ভুক্তভোগী চা দোকানী সাইফুল ও তার পরিবারকে খুন-জখমের হুমকিও দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়রা।
দলবল নিয়ে মহড়া দিয়ে সরকারি জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করেন বিএনপিপন্থী কলেজ প্রভাষক জাফর ইকবল। তবে তার শ্বশুর সাবেক শ্রমিকলীগ নেতা ইয়ামিন মোড়ল বলেন, লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে যাইনি, একা একা জামাতার ক্রয়কৃত জমির মাপজরিপ কাজ দেখতে গিয়েছিলাম। সরকারি জমি ঘেরাবেড়া দিয়ে দখলে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যান তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, সরকারি জমি জবরদখলের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্তদের সরকারি জমি থেকে ঘেরাবেড়া তুলে নিতে বলা হয়েছে। তারা নিজেরা ঘেরাবেড়া তুলে না নিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘেরাবেড়া তুলে দিয়ে মাপজরিপ করে সরকারি জমি পুনরূদ্ধার করা হবে বলেও জানান ইউএনও।
Comments are closed.