কুমিল্লায় মা-ছেলেসহ প্রকাশ্যে তিনজনকে কু পি য়ে হ ত্যা য় জড়িত ও পরে গণপিটুনিতে নি হ ত রিকশাচালক মোখলেছুর রহমান মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক রোগী নয় বলে দাবি করেছেন স্ত্রী রাবেয়া বেগম।পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার স্বামী মাদকাসক্ত নয়। তবে মাঝে মধ্যে মাথাব্যথার ট্যাবলেট খেত। মোখলেছ খুব শান্ত স্বভাবের ছিল, কেন এমন করলো জানি না আমি।রাবেয়া বলেন, ‘আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘর থেকে ধারালো ছুরি নিয়ে বাইরে গিয়ে যাকে সামনে পেয়েছে তাকে কু পি য়েছে, আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে আমার দিকে এগিয়ে আসলে দৌড়ে পালিয়ে যাই।’বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের রাঁধানগর গ্রামে রিকশাচালক মোখলেছ একাই নারী, শিশুসহ অন্তত ৮-৯ জনকে কু পি য়ে আহত করে। এতে ঘটনাস্থলেই মা-ছেলেসহ তিনজনের মৃ ত্যু হয়। পরে আরও প্রাণহানি ঠেকাতে স্থানীয়রা গণপিটুনি দিলে ঘটনাস্থলে তার মৃ ত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে চারজনের ম র দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এদিকে আহত দুই নারীর মৃ ত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পরে হাসপাতাল ঘুরে এসে পুলিশ জানায়, কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারী, শিশুসহ পাঁচজন সুস্থ আছেন। এদিকে একই বাড়িতে চার হ ত্যা কাণ্ডের পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ঘটনার পর থেকে হাজার হাজার লোক ঘটনাস্থলে ভিড় করে।যেভাবে ঘটেছে রোমহর্ষক চার হ ত্যা কাণ্ড:- প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দেবিদ্বারের রাঁধানগর গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে মোখলেছুর রহমান (৩৫) পেশায় রিকশাচালক। বুধবার সকাল ১০টার দিকে রিকশা চালিয়ে বাড়ি এসে ধারালো ছুরি নিয়ে বাইরে যায়। প্রথমে প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী নাজমা বেগম ও মা মাজেদা বেগমকে কু পি য়ে মারাত্মক আহত করে মোখলেছ। এতে ঘটনাস্থলেই নাজমার মৃ ত্যু হয়। পরে ঘাতক একই বাড়ির মৃত শাহ আলমের শিশু ছেলে আবু হানিফকে (১০) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় হানিফের মা আনোয়ারা বেগম আনু ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে এলে ঘাতক মোখলেছ তাকেও কু পি য়ে হ ত্যা করে। মা ও ছেলের মৃ ত্যু নিশ্চিত করে ঘাতক মোখলেছ রক্তমাখা ধারালো ছুরি নিয়ে বাড়িতে ও রাস্তায় ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমসহ আরও চারজনকে কু পি য়ে আহত করে, যা বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হ ত্যা কাণ্ডে জড়িত নয়ন বন্ডকেও হার মানায়। অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় লোকজন ঘা ত ককে পিটিয়ে হ ত্যা করে। সেই সঙ্গে মারাত্মক আহত নুরুল ইসলাম, ফাহিমা, রাবেয়া বেগম, মাজেদা বেগম ও জাহানারা বেগমকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা। ঘা ত ক মোখলেছের স্ত্রী রাবেয়া বেগম ও ভাবি মরিয়ম আক্তারকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নি হ তের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, তার তিন মেয়ে এক ছেলে। তার স্বামী মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক সমস্যায় ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে তার মাথাব্যথা করতো।সে নিয়মিত মাথাব্যথার ট্যাবলেটও খেত। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরলেও বুধবার সকাল ১০টার দিকে বাসায় ফিরে ধারালো ছুরি নিয়ে বের হয়ে সামনে যাকে পেয়েছে তাকেই কু পি য়েছে। কিন্তু কি কারণে সে বাড়ির লোকজনকে কু পি য়ে হ ত্যা করেছে তা তিনি জানেন না। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) সাখাওয়াত হোসেনসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকার হাজার হাজার লোক ঘটনাস্থলে ভিড় করে। এমন হ ত্যা কাণ্ডে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ঘা ত কের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে তার স্বামীর মাথাব্যথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন সে ক্ষুব্ধ হয়ে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেবিদ্বার থানা পুলিশের ওসি জহিরুল আনোয়ার বলেন, ঘা ত ক এলোপাতাড়ি ৮-৯ জনকে কু পি য়ে ছিল। পরে তিনজনের মৃ ত্যু র পর এলাকার লোকজন ঘা ত ককে পিটিয়ে মেরেছে। এখন পর্যন্ত আমরা ঘা ত ক সহ চারজনের ম র দেহ উদ্ধার করেছি। হাসপাতালে আরও দুজনের মৃ ত্যু র গুজব থাকলেও বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন কারও মৃ ত্যু হয়নি। হ ত্যা কাণ্ডের কারণ এখনো অস্পষ্ট। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি হ ত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য চারজনের ম র দেহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।