July 27, 2024, 2:45 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
পবিত্র শব-ই-মিরাজ আজ

পবিত্র শব-ই-মিরাজ আজ

পবিত্র শব-ই-মিরাজ আজ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই পালিত হবে পবিত্র শব-ই-মিরাজ। এই রাতেই প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সা. সশরীরে এবং সজ্ঞানে উর্ধাকাশে ভ্রমণ করেছিলেন। মহান আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করে ইসলামের বিধি-বিধান সম্পর্কে বিশেষ নির্দেশনা বয়ে আনেন। ফেরেস্তা হযরত জিবরাইল (আ.) ও হযরত মিকাইলের (আ.) সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যান। সেখান থেকে প্রথম আসমান থেকে একে একে সপ্তম আসমান এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত যান। সেখান থেকে একাকী আরশে আজিম পর্যন্ত ভ্রমণ করে মহান রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ করেন। জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন করে রাতে তিনি ফিরে আসেন।

এ কারণে আরবী হিজরী রজব মাসের ২৬ তারিখ দিন শেষের রাত ইসলামে ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় এবং সম্মানিত রজনী। সারাদেশে যথাযথভাবে পবিত্র শব-ই- মিরাজ পালনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচী নেয়া হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে পালনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে মিলাদ, দোয়া, ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের মসজিদগুলোতে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলমানরা ইবাদত করবেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘মিরাজুন্নবী (সা.)’ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাত হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমান। আলোচনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সাবেক পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা রফিক আহমাদ ও জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ।

মিরাজ অর্থ উর্ধগমন। যাকে রাত্রিকালীন ভ্রমণও বলা হয়। মহানবী মিরাজ বা উর্ধকাশে ভ্রমণের বিষয়টি মহাগ্রন্থ কোরানে যেমন স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটা সহীহ হাদিস গ্রন্থেও এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মিরাজ বা উর্ধকাশে গমণের এই বিষয়টি কোরানের ১৭ নম্বর সূরা ইসরাইলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই সূরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা বলেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়ে ছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও সর্বদ্রষ্টা।

সূরা নজমের ১ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন, ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথী মুহম্মদ (সা.) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোন কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)। সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর উর্ধে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তার বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে; তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে; না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন; অবশ্যই তিনি দেখেছেন তার রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ।

আরবী হিজরী ৬১০ সালে নব্যুয়ত প্রাপ্তির পর মক্কার নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে ধর্ম প্রচারে হযরত মুহম্মদ (সা.) প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হন। কুরাইশ সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড অত্যাচারের কারণে নিজ জীবন অতিষ্ঠ হয়। এক পর্যায়ে কুরাইশরা ইসমলামের প্রচার ঠেকাতে বনি হাসেম গোত্রে ওপর অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধকালে মুহম্মদ (সা.) স্ত্রী ও পরিবারসহ পাহাড়ের উপত্যকায় আশ্রয় নেন। এই সময়কালে খাদ্য সঙ্কটসহ নানা দুঃখ কষ্টের মধ্যে অতিবাহিত হয় তাদের জীবন। খুব কম সময়ের ব্যবধানে প্রিয়তম স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.) এবং প্রিয় চাচা আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন। ফলে গোত্রে নিরপত্তার ছায়া তার ওপর থেকে উঠে যায়। তাঁর আরেকজন চাচা আবু লাহাব গোত্রে দায়িত্ব নিলে নবীর ওপর থেকে গোত্রীয নিরাপত্তা তুলে নেন। প্রিয়জন হারানোর পর নিরাপত্তহীন হয়ে পড়ায় তিনি অনেকটা একাকী এবং নিঃস্ব হয়ে যান। ঠিক এমনি সময়কালে তিনি ফেরেস্তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করেন।

হাদিস গ্রন্থ বোখারী শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী উর্ধাকাশে যাওয়ার পথে তিনি বিভিন্ন নবী রাসূলদের সঙ্গে সাক্ষাত লাভ বরেন। এরমধ্যে প্রথম আসমানে সাক্ষাত লাভ করেন প্রথম মানব এবং নবী আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে হযরত ঈসা (আ.) এবং ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আ.) চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আ.), পঞ্চম আসমানে দেখা পান হযরত হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে তিনি সাক্ষাত লাভ করেন হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সঙ্গে।

এই মিরাজের রাতেই মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদত করা যাবে না। উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। পিতামাতার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। নিকটাত্মীয় স্বজনের অধিকার দিতে হবে, মিসকিন ও পথশিশুদের অধিকার দিতে হবে। অপচয় করা যাবে না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। কার্পণ্য বা কৃপণতাও করা যাবে না। সন্তান হত্যা করা যাবে না। ব্যাভিচারের ধারের কাছেও যাওয়া যাবে না। মানব হত্যা করা যাবে না। এতিমের সম্পদ আত্মসাত করা যাবে না। প্রতিশ্রুত পালন বা ওয়াদাপূর্ণ করতে হবে। ওজন বা মাপে কম দেয়া যাবে না। অজ্ঞতার সঙ্গে কোন কিছু করা যাবে না। পৃথীবী বা জমিনের ওপর দম্ভভরে চলাফেরা করা যাবে না। এছাড়াও মুসলমানদের ইমানের পরেই নামাজ যা মিরাজের রাতেই আল্লহ্র কাছ থেকে উপহার হিসেবে লাভ করেন তিনি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com