October 31, 2024, 3:13 am
শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ তা’আলা নবী রাসুল পিতা মাতার পরে শিক্ষকদের স্থান দিয়েছেন। শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। একটি দেশ তথা একটি জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে গুণগত শিক্ষা বা মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। আর শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করণের জন্য দরকার গুণগত শিক্ষক। শিক্ষার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। শিক্ষার অন্যান্য স্তর গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সর্বপ্রথম প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার ভীত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। আর তাই প্রাথমিক শিক্ষার উপর সরকারকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষ তার শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে মৌলিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করে থাকে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। কিন্তু বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এটা লক্ষ্য করা যায় সেই আসল কারিগরদের নেই কোন মূল্য, নেই কোন সামাজিক পদ-মর্যাদা ও সম্মান। শিখন-শেখানো ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক রয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে সব থেকে অবহেলিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের এমন কোন কাজ নেই যেটি তাদেরকে করতে হয়না। জুতা সেলাই থেকে শুরু করে চন্ডীপাঠ সকল কর্মকান্ড করতে হয়। পাঠদানের পাশাপাশি শিশু জরিপ, ভোটার হালনাগাদ করণ, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন অন্যান্য শুমারীসহ দাপ্তরিক সকল কাজ সম্পাদন করতে হয়। অথচ বাস্তবে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষকরা বিভিন্ন সমস্যা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সামাজিক পদমর্যাদা ও স্বীকৃতি না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় তাদের অবহেলার চোখে বিবেচনা করা হয়। যদি প্রাথমিক শিক্ষকদের যোগ্য সম্মান সামাজিক পদমর্যাদা স্বীকৃতি এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া হয় তাহলে মহান এ পেশায় দক্ষ, যোগ্য, মেধাবীরা কখনো এ পেশায় আসবে না। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ভিতকে সবচেয়ে বেশি মজবুত ও শক্তিশালী করতে হলে মেধাবীদের এ পেশায় নিয়োজিত করতে হবে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি সোনার বাংলার কারিগর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়তে হলে এবং ২০৪১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত দেশ গড়তে হলে এবং প্রাথমিক শিক্ষা গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ, যোগ্য, পরিশ্রমী, মেধাবী শিক্ষকদের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজনের মতে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষক এই খাতকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা করেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রধান শিক্ষকরা ১১তম ও ১২তম গ্রেডে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ১০ম গ্রেডের ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করলেও অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম তম গ্রেড ও গেজেটেড পদ-মর্যাদাসহ সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য মহামান্য হাইকোর্ট প্রধান শিক্ষকদের পক্ষে রায় দেন। এমনকি psc থেকে non-cadre হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত অন্যান্য পদে দশম গ্রেড দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ কাজ করছে। সরকারি শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ১১তম গ্রেড কিন্তু সম্প্রতি এক গেজেটে সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড দেয়া হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে শিখন-শেখানো সহ সকল কর্মকা-ে সহ শিক্ষকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাদেরকে যদি আমরা সার্বিকভাবে মূল্যায়ন ও যোগ্য সম্মান ও বেতন-ভাতাদিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা না দিতে পারি তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কখনো নিশ্চিত হবে না। গ্রেড বৈষম্যে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের পদটি ব্লকপোস্ট। কোন প্রমোশন নেই। এই পদে প্রবেশ করে সারাজীবন চাকরি করে, আবার ওই পদেই অবসর। অথচ এই একই ডিপার্টমেন্টে লক্ষ করলে দেখতে পাই সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষক পদে AUEO iv UEO হচ্ছে। UEO থেকে ADPEO পদে, ADPEO থেকে DPEO পদে, DPEO থেকে উপপরিচালক/সহ-পরিচালক পদে প্রমোশন হচ্ছে। ফলে দেখা যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা, ক্ষোভ, অস্থিরতা ও অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সহকারী শিক্ষক থেকে যে প্রধান শিক্ষক পদে (চলতি দায়িত্ব) দেওয়া হচ্ছে, সেখানে লেখা আছে এটি প্রমোশন নয়। তাহলে তারা কি সহকারী শিক্ষক না প্রধান শিক্ষক? এটা নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করছে। বর্তমানে timescale/selection গ্রেট না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য বিরাজ করছে। আবার ১০/১৬ বছরে গ্রেড পরিবর্তন সেটাও বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। প্রাথমিক বিভাগকে Non-Vacational ডিপার্টমেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ কাজ করছে। বিভিন্ন দিবসে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অথচ দিবসগুলোকে কার্যদিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করায় শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে। নিয়োগবিধি যুগোপযোগী না হওয়ায় এবং সম্প্রতি স্ব স্ব বিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে সার্বিক নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিশেষে বলা যায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে ও শিক্ষক-বান্ধব সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে এবং প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে উল্লেখিত প্রাথমিক শিক্ষকদের সমসাময়িক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। ‘শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে, শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’