October 22, 2024, 2:01 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
ফেসবুকে আকুতির পরেও বাঁচানো গেল না গাজী আসাদের মাকে: সদর হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

ফেসবুকে আকুতির পরেও বাঁচানো গেল না গাজী আসাদের মাকে: সদর হাসপাতালে অবহেলায় রোগীর মৃত্যু

‘আমার মায়ের কিছু হলে দায় কে নেবে? বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমার মা অসুস্থ। শুক্রবার সকালে সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি। অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে জরুরি বিভাগে গিয়েছি। ডক্টর ইমার্জেন্সি ইসিজি করতে বলেছেন। আমার মা অজ্ঞান। হসপিটালে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কয়েকবার গিয়েছি, বার বার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তাদের ইসিজি মেশিন থাকা সত্ত্বেও ইসিজি করিয়ে দিলো না। অযুহাত অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে ইসিজি করার নিয়ম নেই নাকি। তাহলে কি আমার মা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মরবে! আমার প্রশ্ন-এই ইসিজি মেশিন কাদের জন্য? আমার মায়ের অবস্থা ভাল না। প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাবো সে অবস্থায় নেই। প্লিজ কেউ একটু ইসিজি করানো ব্যবস্থা করেন।’

এভাবেই মায়ের চিকিৎসার জন্য আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সন্তান গাজী আসাদ। কিন্তু সন্তানের সেই আকুতি জেলার সর্বোচ্চ অভিভাবক শুনলেও শুনতে পায়নি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত অযত্ন, অবহেলা আর এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ৫৫ বছর বয়সী মঞ্জুয়ারা খাতুন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)।

গাজী আসাদ জানান, তার মা মঞ্জুয়ারা খাতুন বৃহস্পতিবার রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ডাক্তারদের অবহেলা ও বিনা চিকিৎসায় রাত ৮টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন মঞ্জুয়ারা খাতুন। এর আগে তিনি মায়ের চিকিৎসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি পোস্ট করার পরপরই বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের পরামর্শ ও মন্তব্য ব্যক্ত করেন।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকও বিষয়টি জানা মাত্রই গাজী আসাদের মায়ের চিকিৎসার জন্য সিভিল সার্জনকে বলেন। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে লোক পাঠানো হয়েছে বলে জানান গাজী আসাদ। লোক এসে তার মাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা করেন। খুলনায় নিয়ে গেলে সেখানে তার মা মারা যায়। আজ শনিবার বেলা ১০টায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মসজিদের সামনে মরহুমার জানাজা শেষে রসুলপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাশীষ চৌধুরী বারবার খোঁজ খবর নিয়েছেন।

গাজী আসাদ বলেন, সঠিক সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাকে মা-হারা হতে হতো না।
ফেসবুক কমেন্ট থেকে পাওয়া মন্তব্য থেকে জানা যায়, উনি মারা গিয়েও বেঁচে গিয়েছেন। কারণ উনি বেঁচে থাকলে এর প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের কর্তব্যরত মানুষরূপি জানোয়ারগুলো উনাকে পুলিশে দিতো এবং ডোপ টেস্ট করে মাদকসেবী বানিয়ে দিতো। কারণ ওই মানুষরুপি জানোয়ারগুলোর কাছে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে জিম্মি হয়ে যায়। এছাড়াও আরো মন্তব্য উল্লেখ করা হলো- এটা খুবই দু:খজনক। এটা গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই না। কিছু উৎকোচ পেলে সাথে সাথে কাজ করবে। হারামিরা নিয়ম দেখাচ্ছে। জীবনের চেয়ে নিয়ম আগে ওদের এখন। এভাবেই চলছে। রূঢ় সত্য হচ্ছে, গণস্বাস্থ্য সেবা বলতে আদতে কিছু নেই। ধর্ষণের বিচার পেতে যেমন ভাইরাল হতে হয় তেমনি সরকারি স্বাস্থ্য সেবা পেতে প্রভাবশালী হতে হয়।

তথাপি কর্তৃপক্ষের আশু সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি। কিছু নার্স আছে তাদের ব্যবহার এতো খারাপ যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। হাজারো মানুষ এসব হয়রানির শিকার হয়। কিছু বলার নেই। এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলেই কিছু নামি-দামিদের গায়ে পড়বে। অথচ একজন সন্তান তার মায়ের সু-চিকিৎসার জন্য হাহাকার করছে এটি তাদের কানে লাগে না। সবাই পকেট ভারি করতে ব্যস্ত। এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com