December 21, 2024, 4:50 pm
বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৭ হাজার ২৩০ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে হাসপাতালে গিয়েছেন ছয় হাজার ১৩৩ ডেঙ্গু রোগী। গত মাসে এই সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমলেও এখনও শঙ্কামুক্ত নন সংশ্লিষ্টরা। চিকিৎসকরা বলছেন- ডেঙ্গু যেখানে একবার ঢোকে, সেখান থেকে আর বের হয় না। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কেবল এডিসের মৌসুমে নয়, বছরব্যাপী কাজ করতে হবে। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ৩৬৫ দিনের জাতীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়াও বছরের শুরুতে একটি ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির সংযুক্তিও বাড়ানো হবে।জানা গেছে, এতদিন ডেঙ্গু শুধু রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বছরজুড়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা একটি জাতীয় কর্মকৌশল তৈরি করবো, এই মাসেই যার কাজ শুরু হবে। একইসঙ্গে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের জন্য যে ন্যাশনাল গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে গত বছরের অক্টোবরে, সেখানে এবারের অভিজ্ঞতা থেকে আরও কিছু যোগ করা যায় কিনা তা নিয়েও কাজ করা হবে। তবে ইতোমধ্যেই শিশুদের চিকিৎসার বিষয়টি আলাদা করা হয়েছে। আর চিকিৎসকদের জন্য যে প্রশিক্ষণ চলছে, সেটা আরও বাড়ানো হবে।’ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে অক্টোবরে আরেকটি বিশেষ জরিপ করা হবে জানিয়ে ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘ঢাকার বাইরে কেন এই অবস্থা হলো সে বিষয়টিও খুঁজতে হবে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর ইতোমধ্যে যেসব জরিপ করেছে, সেগুলো নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে টাইম টু টাইম যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে হবে।’স্বাস্থ্য অধিদফতর তিনটি জরিপ করেছে জানিয়ে ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, ‘এর মধ্যে একটি স্পেশাল জরিপ ছিল। এটা কীভাবে পুরো দেশে করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এছাড়াও এবারে ডেঙ্গুর ধরনে বেশ বড় পরিবর্তন এসেছে। এসব ধরন শনাক্ত করার জন্য গবেষণা করা হবে।’সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ঢাকাতে রোগীর সংখ্যা কমলেও অন্য বছরের তুলনায় এখনও রোগীর সংখ্যা অনেক। তবে আশা করছি আর বাড়বে না। আমাদের কন্ট্রোল মেজারগুলো স্ট্রং রাখতে হবে এবং এটা ৩৬৫ দিনব্যাপী চালাতে হবে।’আবহাওয়ার সঙ্গে ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আবহাওয়ার ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই আমাদেরই কাজ করতে হবে। আবহাওয়া এরকমই থাকবে ধরে নিয়ে কন্ট্রোল মেজারগুলো জোরদার রাখতে হবে।’এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কাজ করেছেন আইসিডিডিআর’বির সাবেক গবেষক আতিক আহসান। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজন। ডেঙ্গু এখন আর এপিডেমিক নয়, এনডেমিক হয়ে গেছে; সারা বছর ধরেই এতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। প্রতি মাসেই কোথাও না কোথাও মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এই বছরে।’আতিক হাসানের পরামর্শ, একটি ইফেক্টিভ সার্ভিলেন্স সিস্টেম তৈরি করতে হবে। যাতে একজন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেই তিনি সরকারের তালিকাতে অন্তুর্ভুক্ত হয়ে যান। একটি কল সেন্টার বা হটলাইন নম্বর থাকতে পারে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্ত্বশাসিত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এনএসওয়ান পজিটিভ হওয়া মাত্রই স্বাস্থ্য অধিদফতরকে তথ্য জানানো হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে অধিদফতর। আর সবাইকে নিয়ে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিলিন্স সিস্টেম তৈরি করা গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।আতিক আহসান আরও বলেন, ‘যেখানে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে, সেখানেই মশা নিধনের ব্যবস্থা নিতে হবে, আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোথায় বেশি বা কম সেই বিষয়টি সবার আগে জানা প্রয়োজন। কারণ, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জানা গেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
Comments are closed.