July 27, 2024, 6:57 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
বাংলাদেশ-ভারত থেকে করোনা ছড়ানোর খবরকে ‘ভুয়া’ বলছে চীন

বাংলাদেশ-ভারত থেকে করোনা ছড়ানোর খবরকে ‘ভুয়া’ বলছে চীন

নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তির জন্য কয়েকজন চীনা বিজ্ঞানীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশকে দায়ী করার যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে তাকে ভুয়া বলেছে চীন।

ঢাকায় চীনের উপরাষ্ট্রদূত ইয়ান হুয়ালং রবিবার তার ফেইসবুক পেজে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের এমন একটি লিংক শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ফেইক নিউজ!’

হুয়ালংয়ের কমেন্টে কয়েকজন ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এ ধরনের নিউজ ভারতের মিডিয়া ছড়াচ্ছে। তাই চীনের উচিত একটা বিবৃতি দেয়া।’

কিন্তু মূল ব্যাপার হলো, খবরটি প্রথম এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম থেকে। হংকং-ভিত্তিক গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টেও এই খবর এসেছে।

নামকরা প্রকাশনা সংস্থা এলসিভিয়ারের মালিকানাধীন প্রি-প্রিন্ট সার্ভার সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্ক (এসএসআরএন)-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধে চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে প্রথম যে সংক্রামক করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়, তার মিউটেশন বেশি ছিল। ওই নমুনার চেয়েও কম মিউটেশনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে আটটি দেশে: বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, চেক রিপাবলিক, রাশিয়া এবং সার্বিয়া।

সর্বকোষীয় ভাইরাস পুনরুৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিকভাবে নিজেদের পরিবর্তন করে। এর অর্থ তাদের ডিএনএ’তে প্রতিবার ছোট ছোট যে পরিবর্তন হয়, তার মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করে।

এই যুক্তিকে সামনে এনে চীনা বিজ্ঞানীরা বলেন, সবচেয়ে কম পরিবর্তন বা মিউটেশনের নমুনা শনাক্ত করে ভাইরাসের ‘আসল ভার্সন’ পাওয়া যাবে।

তাদের দাবি, ভারত এবং বাংলাদেশে যে স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, তাতে অনেক কম মিউটেশন। মানে সেখান থেকে আগে ছড়িয়ে থাকতে পারে। দুটি দেশ যেহেতু ভৌগোলিকভাবে পাশাপাশি তাই এই মহাদেশে সম্ভাবনা বেশি দেখছেন তারা।

বিজ্ঞানীরা নিবন্ধে লিখেছেন, ‘উহান শহরে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের যে স্ট্রেইন শনাক্ত হয়, তা সব সার্স-কভ-২ ভাইরাসের পূর্বপুরুষ হওয়া অত্যন্ত অসম্ভব। কম মিউটেশনের স্ট্রেইন যে আটটি দেশে পাওয়া গেছে, তার যেকোনোটিতে নতুন করোনাভাইরাসের জন্ম হতে পারে।’

যে আটটি দেশের কথা বলা হচ্ছে, এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ-ভারতকে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হচ্ছে।

এই অঞ্চল থেকেই যদি ভাইরাসটি ছড়াবে, তাহলে কেন এখানে আগে শনাক্ত হলো না? বিজ্ঞানীরা নিজেরাই এই প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, ‘এই অঞ্চল সাধারণত গ্রীষ্ম প্রধান। কম বয়সী অর্থাৎ তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি। পাবলিক হেলথ কেয়ার সিস্টেমও দুর্বল। যার কারণে মাঝারি উপসর্গের রোগীদের আগে শনাক্ত করা যায়নি।’

ঘটনা কি আসলেই এমন: চীনা বিজ্ঞানীদের এমন দাবি মূলত নতুন কিছু নয়। করোনার জন্য অন্য দেশকে দায়ী তারা অনেক আগে থেকেই করছে।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ ডেভিড রবার্টসন ডেইলি মেইলকে বলেছেন, ‘এই পেপার খুবই ত্রুটিপূর্ণ। করোনা নিয়ে আমাদের ধারণার সঙ্গে এটি নতুন কিছুই যোগ করতে পারেনি।’

মেইল অনলাইনের কাছে পাঠানো বিবৃতিতে প্রফেসর রবার্টসন বলেছেন, ‘তুলনামূলক কম মিউটেশনের ভাইরাস সিকোয়েন্স শনাক্ত করতে লেখকদের যে প্রচেষ্টা দেখা গেছে, সেটি স্পষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট।’

‘এই গবেষকেরা ব্যাপক মহামারীর ডেটা এড়িয়ে গেছেন। বিস্তৃত মহামারীর তথ্য থেকে খুব সহজে বোঝা যায় রোগটি চীন থেকেই ছড়িয়েছে।’

এই নিবন্ধের মূল্য কতটুকু: এলসিভিয়ারের যে সার্ভারে এটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি মূলত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের প্রিপ্রিন্টস। অর্থাৎ ল্যানসেটে প্রকাশিত হওয়ার আগে এখানে বিজ্ঞানীরা তাদের ফলাফল প্রকাশ করেন। এটি পিয়ার রিভিউড জার্নাল নয়।

যেকোনো গবেষণার জন্য পিয়ার রিভিউড (স্কলারলি বা রেফারিড) জার্নাল খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে বিশেষজ্ঞদের যেসব আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়, তা প্রকাশিত হওয়ার আগে এই বিষয়ের একাধিক বিশেষজ্ঞ (রেফারি হিসেবে যারা কাজ করেন) বার বার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এই ধরনের জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলকে ‘সর্বোচ্চ’ মানের ধরা হয়।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com