October 31, 2024, 3:12 am
ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা কল্পনা কিন্তু সাতক্ষীরার আশাশুনির মুরগি খামারি মরিয়মের বেঁচে থাকার অবলম্বনটাও ধ্বংস হয়ে গেল, এ নিয়ে হয়তো কখনও কেউ খোঁজ খবর নেবে না। কিস্তির টাকা শোধ না করলে সাতক্ষীরার মরিয়মকে আত্মহত্যাও করতে দেবে না এনজিও’রা। এরকমই এক নিষ্ঠুর করুণ চিত্র ঘটে চলেছে দেশের দক্ষিণের এ জেলায়।ঘুর্ণিঝড় বুলবুলে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেছে কতজনের কতকিছু, কিন্তু হয়তো কেউ কোনদিন খোঁজ নেবে না সাতক্ষীরার মুরগীখামারী মরিয়মদের দুঃখ দুর্দশার এ কথা। এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে আশাশুনি উপজেলার সবথেকে সফল ও বৃহৎ খামার গড়ে তোলে মরিয়ম। সফলও হয়। ভাল লাভের মুখও দেখছিল অতিদরিদ্র থেকে উঠে আসা সাধারণ শিক্ষার আলোহীন মরিয়ম। কিন্তু বুলবুলের দমকা হাওয়াতে সম্ভাবনার সেই প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে গেছে।মরিয়ম বলেন, ‘সকালে উঠে দেখছি প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে। দুর্বল ঘরবাড়িগুলো পড়ে যেতে দেখেছি। ভেবিছি শক্তপোক্ত ভাবে বানানো এ ফার্ম কিছু হবে না। তারপরও আমাদের কারো মন মানলো না। এদিকে বুলবুলের বেপরোয়া ঝড়ও শুরু হয়েছে। কেবল মুরগিগুলো এক জায়গায় করছি। অন্য জায়গায় নেবো। আর এক মাস হলেই সোনালী মুরগি বিক্রি করলে দামও ভাল পাওয়া যাবে। ঋণ শোধ করে লাভের মুখও দেখা যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। আমাদের ঘাড়ের উপরে পড়লো। হাজার হাজার মুরগি মরলো। আমাদেরও মেরে গেলো। ওই ্আমরা সবাই মরে গেলে হয়তো এ যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো না। প্রতিবেশী সবাই এসে আমাদের উদ্ধার করলো তখন আমরা সবাই জ্ঞান হারা। জ্ঞান ফিরে হাসপাতাল থেকে ছুটে এসেছি আমার মুরগিরা কেমন আছে। কিন্তু এসে দেখি আমার ফার্ম শ্মশান হয়ে গেছে। মরে গেছে হাজার হাজার মুরগি’ মরিয়ম এসব কথা বলতে বলতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। প্রতিবেশীরাও কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।মরিয়মের ছোট মেয়ে নাজমা খাতুন বলেন, তার মা মরিয়ম প্রথমে নিজের অসুস্থতার জন্য ঋণ নেয়। চিকিৎসা করে সুস্থও হয় মরিয়ম। এরপর সেই ঋণ শোধ করতে বক্কার মরিয়ম দম্পতি আরেকটি এনজিও থেকে ঋণ নেয়। উদ্যোগ নেয় সোনালী মুরগির ফার্ম করবে। বাড়ির পাশে ২বিঘা জমি হারি নিয়ে শুরু করে ফার্ম। সেখানে জমির মালিকও একলাখ টাকা সুদের ঋণ দেয়। এভাবে সাত লাখটাকা বিনিয়োগ করে। পুকুরও লিজ নেয় মাছের চাষের জন্য। আশা ছিল ছেলেকে লেখাপড়া করে বড় করবে। ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সুখের মুখ দেখাবে। কিন্তু বুলবুলের ঝড়ের সকালে প্রথমে ভেসে গেল পুকুর এরপর হঠাৎ ভেঙে পড়ল উপজেলার সবথেকে বড় মুরগির খামার। খামারের মধ্যে থাকা মরিয়ম বক্কার ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কোনরকমে বাঁচিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। জ্ঞান ফিরে দেখে ফার্মের সহ¯্রাধিক মুরগি সব মরে শেষ। এখন তাদের বেঁেচ থাকারও সব আশা শেষ। এ অবস্থায় তারা যাতে আত্মহত্যাও করতে না পারে তার জন্য খোঁজে রাখছে পাওনাদার ও এনজিওরা।এমুহুর্তে যদি রাষ্ট্রের জরুরী হস্তক্ষেপ না থাকে তবে নিঃশেষ হয়ে যাবে মরিয়মের পরিবার। একথা জানালেন ওই এলাকার প্রতিটি মানুষ। এখন সাধারণ মানুষ দুটো খাওয়ার ব্যবস্থা করেদিলে তাদের খাওয়া হয় নইলে নয়।স্থানীয় আশাশুনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজা মিলন বলেন, এমুহুর্তে সরকার মরিয়মদের মুখের দিকে না তাকালে ঝড়ে শেষ হয়ে যাওয়া মুরগিগুলোর মতো মরিয়মের পরিবারটাও শেষ হয়ে যাবে বলে জানায়, মরিয়মের পাশের বাড়ির প্রতিবেশী হাফিজা খাতুন।মরিয়ম বক্কার’রা এখন তাকিয়ে আছে সরকারের সহানুভুতির ওপরে। তা নাহলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলেও মনে করে আরেক প্রতিবেশী মর্জিনা খাতুন।মরিয়মের অসহায় স্বামী আবু বক্কার গাজী বলেন, ফার্মের লিজদাতা এখন পাহারা দিচ্ছে যেন টাকা পরিশোধ না করে আত্মহত্যা না করে। সাস, ব্র্যাক, বিআরডিবি, পল্লী দারিদ্র্য, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সবাই কিস্তির টাকা পরিশোধের অমানবিক চাপ দিচ্ছে। কেউ নেই আমাদের এই দুঃখ দুর্দশার কথা বুঝবে।
প্রতিবেশী রহিম সরদার বলেন, গ্রামটি গরীব এলাকা তারপরও প্রতিবেশীরা তাদের জন্য দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু বেশীদিন এভাবে চলবে না। আমাদের প্রত্যাশা এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে না মরিয়মের বেঁচে থাকার আশা। নিশ্চয়ই কোন না কোন প্রতিকার হবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা বলেন, আশাশুনির ক্ষয়ক্ষতির চিত্র অনেক। গণমাধ্যমে তা ঠিকমতো উঠে আসছে না। মরিয়মের যে ক্ষতি হয়েছে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। ক্ষয়ক্ষতির পুরোতথ্য উঠে আসার পরে পুণর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে।
Comments are closed.