October 31, 2024, 3:11 am
উপকুলীয় জনপদ শ্যামনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন অংশে ১০ নভেম্বর আঘাত হানা ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ তান্ডবের শিকার মোঃ আবিয়ার রহমান পরিবার নিয়ে চরম অসহায়ত্বের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। একমাত্র শোবার ঘর মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় দুই সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে।
এলাকায় কাজ না থাকায় আয় রোজগারহীন আবিয়ার এলাকা ছাড়ার কথা চিন্তা করলেও দুই শিশু সন্তানসহ স্ত্রী আর বৃদ্ধ পিতার কথা ভাবনায় নিয়ে সে কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারছে না। লোকালয়ের কর্মহীনতার পাশাপাশি পাশের নদীতে মাছের পোনা ধরায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তার দুঃসময়কে আরও যন্ত্রণাদায়ক করে তুলেছে।
সরেজমিনে বুলবুল তান্ডবে বিধ্বস্ত জনপদ শ্যামনগরের গাবুরা পরিদর্শনে দেখা যায় প্রায় অসংখ্য বাড়ি বুলবুল আঘাতের পনের দিন পরেও মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে আছে। অনেকে প্রতিবেশী আর নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশ কয়েকটি পরিবার ধসে পড়া ঘরের চালের এক পাশে ‘ঠেকা’ দিয়ে উঁচু করে কোন রকমে দিন পার করছে।তার উপর হঠাৎ করে শীত চলে আসায় নিরাশ্রয় হয়ে পড়া পরিবারগুলোর দুর্ভোগ কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারিভাবে চাল সহায়তা পেলেও অর্থ কিংবা উপকরণের সংস্থান করতে না পারায় আরও কয়েক জনের মত আবিয়ার রহমান বিধ্বস্ত বাড়িঘর মেরামত পর্যন্ত করতে পারছে না।সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে দৌড়ে প্রতিবেদকের কাছে এসে আবিয়ার অনুরোধ জানায় বিশাল জলাকারের মাঝে নুইয়ে থাকা তার বসতবাড়ি একবারের জন্য পরিদর্শনের। চিংড়ি ঘেরের সরু আইল ধরে প্রায় তিনশত গজ হেটে আবিয়ারের ভিটায় পৌছে দেখা যায় চৌ-চালা তার ঘরটি মাটির সাথে মিশে রয়েছে। দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করার তথ্য দিয়ে আবিয়ার রহমান জানায় ইতিপুর্বে তাদের বাড়িঘর পাশের খোলপেটুয়া নদী গিলে ফেলায় তারা নিজেদের শেষ সম্বল ১৫ শতকের কৃষি জমিতে ঘর তোলে।দাদা দাদিরসহ পারিবারিক কবরস্থানটি একইসাথে খোলপেটুয়ার দখলে যাওয়ার কারনে মা’সহ ইন্তেকাল করা পরিবারের অন্য সদস্যদের বসত ঘরের পাশে দাফন করা হয়েছে। ফলে বসতঘর ও সামান্য ভিটাবাড়ির বাইরে আর কোন সহায় সম্পত্তি না থাকায় পাশের নদীতে জাল টেনে ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন।কিন্তু ১০ নভেম্বরের ঘুর্নিঝড় বুলবুল বসত ঘরের সাথে তাকেও মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, হাতে নগদ টাকা না থাকার কারনে ঘরটি তুলতে পারছে না। পুর্ব থেকে কাজের তীব্র সংকট থাকা এলাকাটিতে বুলবুল তান্ডবের পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ফলে আয় রোজগারহীন থাকা আবিয়ারকে দুই সন্তানসহ সহধর্মীনিকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। আবিয়ার জানায় এলাকার অনেকের মত সেও কোন ত্রাণ চান না। বরং একটু কাজের সংস্থান হলে অর্জিত মজুরী দিয়ে সে তার বিধ্বস্ত বসত ঘরটি পুনরায় তৈরী করতেন বলেও জানায়।আবিয়ার জানায় বসত ঘর ধ্বংস হওয়ায় দিনে কোন রকমে লাঠির উপর কাপড় বেঁধে ছায়ায় থাকার সুযোগ মিললেও রাতে শীতের সন্তানরা তীব্র কষ্ট পাচ্ছে।
Comments are closed.