October 9, 2024, 2:47 am
বেক্সিট সঙ্কটের জেরে প্রায় তিন বছর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের স্থলাভিষিক্ত থেরেসা মেকে সরিয়ে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বরিস জনসন। ইউরোপের অনেক নেতার মধ্যে অন্যতম নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে মার্কিন গণমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়। যাইহোক এবার তাদের মধ্যে এই মিলের খোঁজ চলছে।তাদের দুজনেরই উচ্চকিত হয়ে শিশুর মতো কথাবার্তা বলা, যৌনতা এবং নারীঘটিত স্ক্যান্ডালের ইতিহাস আছে। যাদের পেশাদার সাফল্যের ভিত্তি হলো বিশেষ অগ্রাধিকার, নীতিবিবর্জিত সুবিধাবাদ এবং ক্রমবর্ধমান আত্মপ্রচার। যা সুবিধাজনক গণমাধ্যম পরিবেশের কারণে সবসময় বেশ ভালোভাবে প্রচারিত হয়েছে।তারা রাজনীতিতে প্রচলিত নয় এমন সব দৃষ্টিভঙ্গির আমদানি করার মাধ্যমে যেটা যেমন সেটাকে তেমন করে বলার যোগযোগীয় কৌশলের অবতারণা করেছেন। তারা তাদের লাগামহীন সুবিধাবাদ কাজে লাগানোর জন্য গণমাধ্যমের সামনে সত্যিকার শব্দের পরিবের্তে অন্য শব্দের ব্যবহার করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো সমকামিতা, বর্ণবাদ এবং লিঙ্গবৈষম্য।ট্রাম্প মূলত তার নিজের সম্পর্কে বিশেষ করে তার সম্পদ নিয়ে মানুষের সামনে মিথ্যা বলেন এদিকে জনসনের বেশিরভাগ মিথ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে। প্রথমবার টাইমস (অব লন্ডন) থেকে বহিস্কার হওয়ার পর তিনি তার গডফাদারকে (ঐতিহাসিক কলিন লুকাস) নিয়ে একটি মন্তব্য করার পরপরই ডেইলি টেলিগ্রাফ তাকে ইইউ প্রতিবেদক হিসেবে নিয়োগ দেয়।ব্রাসেলসে যখন তার বাবা ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টের একজন সদস্য এবং ইউরোপীয়ান কমিশনের একজন শীর্ষ ইউরো কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন তখন জনসন ইইউয়ের রেগুলেশন এবং স্ক্যান্ডাল নিয়ে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করেন। যে অভিযোগগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা নেতা ও জনসাধারণের। কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে বিপুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য পত্রিকায় লেখার কারণে তিনি খুব সহজেই দলটিতে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করার সুযোগ পান যার মাধ্যমে ব্রাসেলস থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে থাকে দল। অক্সফোর্ডশায়ের হেনলির এই এমপি তার পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফের কলামকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক অবস্থান পোক্ত করার কাজটি করেন। তিনি এমন কিছু করা শুরু করেন যার মাধ্যমে দলের পরবর্তী নেতা হওয়ার পথে প্রচারণা শুরু করেন তিনি। সেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফল তিনিই এখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।ট্রাম্পের মতো জনসনও নিজের সুবিধার জন্য গণমাধ্যমকে যেভাবে ব্যবহার করেন তাতে করে শুধু উঁচু শ্রেণির শ্বেতাঙ্গদের অধিকারকেই সংরক্ষণ করে। যা করা হয় বর্ণবাদী, সমকামী এবং লিঙ্গবৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে। যেমন আফ্রিকানকে বলেন ‘মুখে লেবুর মতো হাসিওয়ালা ছোট্ট কালো শিশু’, যেসব মুসলিম নারী বোরকা পড়েন তাদেরকে বলেন ‘ব্যাংক ডাকাত’ এবং ‘চিঠির বক্স’ সমকামীদের বলেন, ‘নিতম্ব বালক’ এবং নারী লেবার এমপিদের বলেন ‘গরম মদ’।যাইহোক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পার্থক্যও রয়েছে। জনসনের তুলনায় ট্রাম্প তার দেশের জনগণের একটা বড় অংশের মানুষের সমর্থনের মাধ্যমে নির্বাচিত। যদিও পপুলার ভোটে হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরে গেলেও ট্রাম্প তার দেশের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের ভোটে নির্বাচিত। ঠিক বিপরীত দিক থেকে হিসাব করলে জনসন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত। ব্রিটিশ জনগণের সঙ্গে তুলনা করলে যা দেশটির মোট নাগরিকের মাত্র ০ দশমিক ০২ শতাংশ।
নীতিগত অবস্থানের ক্ষেত্রে এ দুই নেতাই উল্লেখ করার মতো নমনীয়, ট্রাম্প যতটা না রিপাবলিকান তার চেয়ে জনসন অনেক বেশি কনজারভেটিভ। রাজনৈতিক ও সামাজিক উভয় দিক থেকেই তিনি অভিজাত জায়গা তেকে উঠে আসা। সিমন কুপার মারাত্মক বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, জনসন হলো ‘পাবলিক স্কুলবয়ের’ এক মোক্ষম উদাহরণ যে আমাদেরকে ব্রেক্সিট এনে দেবে (যুক্তরাজ্যে প্রাইভেট স্কুলকে পাবলিক স্কুল বলা হয়)।এটা এই জন্য বলা হচ্ছে না যে ট্রাম্পের চেয়ে জনসনের কামান কোনো অংশের ট্রাম্পের কামানের চেয়ে কম শক্তিশালী কিন্তু তিনি একজন পেশাদার রাজনীতিবিদের চেয়েও বেশি। তিনি পেশাগত এবং সামাজিকভাবে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অভিজাত শ্রেনির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। তবে জনসন এবং ট্রাম্প কারো কাঁধেই অভিজাতের এমন কোনো চাপ নেই যা তাদের তাড়িত কিংবা প্রভাবিত করতে পারে।সংক্ষেপে বলা যায় বরিস জনসন সম্ভবত একজন ইউরোপীয়ান ট্রাম্প যদি আপনি তাদের মধ্যে সাদৃশ্যগুলো বিবেচনায় রাখেন। কিন্তু জনসন শেষ পর্যন্ত একজন ব্রিটিশ অপরদিকে ট্রাম্প মূলত একজন আমেরিকান। শেষ বিচারে তারা উভয়ই অভিজাত সংস্কৃতির তৈরি এক একটি পণ্য।যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যাস মুডির লেখা কলাম। তিনি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের মার্কিন কলাম লেখক। ইংরেজি থেকে অনূদিত।
Comments are closed.