December 22, 2024, 5:30 am
সম্পাদকীয়
: পুরো পৃথিবীর মানুষ একটি টিকার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছে। যে গতিতে করোনায় সংক্রমণ হচ্ছে, সে গতিতে টিকার অগ্রগতি হচ্ছে না। ফলে টিকা এলেই কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। সবার কাছে টিকা পৌঁছানোও হবে একটি চ্যালেঞ্জ। আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়ার আগেই অনেক দেশ টিকা উৎপাদনে যুক্ত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি করে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো ও জনগোষ্ঠী টিকা সংগ্রহে পিছিয়ে পড়বে।
কারণ টিকার সংখ্যা আক্রান্তদের চেয়ে অনেক কম। আবার উচ্চমূল্যের কারণে অনেক দেশের টিকা কেনার সামর্থ্যও নেই। প্রশ্ন হচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন সবাই পাবে কি? নাকি ধনী দেশগুলোর কব্জায় চলে যাবে? কীভাবে বিতরণ হবে এই টিকা, এর মূল্য কী হবে এবং এই বৈশ্বিক সংকটে কোনো দেশকে যে অবহেলা করা হচ্ছে না, সেটাই বা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে? প্রশ্ন থাকলেও সঠিক উত্তর মিলছে না।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটি। প্রত্যেককে করোনা ভ্যাকসিন দিতে হলে অন্তত এক হাজার ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কবে নাগাদ বিশ্বের সব মানুষের কাছে করোনা ভ্যাকসিন পৌঁছানো সম্ভব হবে সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। চাহিদার আকাশচুম্বী অবস্থায় উৎপাদন কম হওয়াতে তৃতীয় বিশ্বের মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার করে রাখাতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সম্প্রতি অক্সফাম এক প্রতিবেদনে বলছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো মোট উৎপাদিত ভ্যাকসিনের ৫১ ভাগ কিনে রেখেছে।
উদাহরণস্বরূপ, সফল হোক বা না হোক তা চ‚ড়ান্ত হওয়ার আগেই ৬টি সংস্থা থেকে করোনার টিকা কেনার জন্য বড় অঙ্কের ক্রয় চুক্তি করে ফেলেছে ব্রিটেন। আমেরিকা দ্রুত সফল টিকা উৎপাদনে অর্থ বিনিয়োগ করে ৩০ কোটি টিকা কেনার আশা করছে। তবে আশার কথা, ধনী দেশগুলোর সঙ্গে যেন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোও ভ্যাকসিন পায় সেটি নিশ্চিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে কোভ্যাক্স করোনার ভ্যাকসিন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সাল শেষ হওয়ার আগেই বিশ্বজুড়ে নিরাপদ ও কার্যকর ২০০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশ অনেকটা স্টাডি অবস্থানে রয়েছে।
ধনী ও গরিব রাষ্ট্রের পরিসংখ্যান না দেখে ভ্যাকসিনের সুষম বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারলে হয়তো পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। আর যদি এই ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে ভ‚-রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে তাহলে তো ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিয়ে অনেক দেশকেই ভুগতে হবে। পৃথিবীর এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বিশ্ব রাজনীতির শিকার হোক মানুষ এমন অবস্থা যেন দেখতে না হয়। অন্যদিকে দলমত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষ যাতে নিরাপদে, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা পেতে পারে, সরকার সে ব্যবস্থা নেবে। বিশ্বের অনেক দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা বিনামূল্যে টিকা পাবে।
আমাদের দেশের মানুষ যাতে সাশ্রয়ী দামে টিকা কিনতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুযোগ-সন্ধানীরা যাতে টিকা নিয়ে কারসাজি করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। মানবিক এই বিপর্যয়ে করোনার ভ্যাকসিন যেন সবাই পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনার ভ্যাকসিন বিতরণে ন্যায্যতা নিশ্চিতে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেই সবার প্রত্যাশা।
Comments are closed.