October 9, 2024, 3:17 am
মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদুল আকসার পর ইসলামের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ মসজিদে কুবা। এই মসজিদে নামাজ আদায় করলে ওমরাহ সমপরিমাণ সওয়াব হওয়ার কথা হাদিসে বলা হয়েছে। নবুয়তপ্রাপ্তির পর এটিই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম নির্মিত মসজিদ। রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম প্রতি শনিবার এই মসজিদে দু-রাকাত নামাজ আদায় করতে গমন করতেন। পবিত্র মক্কা নগরী থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই মসজিদ কুবা নামক গ্রামে অবস্থিত। মদিনার মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।
মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় কোনো মসজিদ নির্মিত হয়নি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সা.) অংশগ্রহণ করেন।
পবিত্র কোরআনে কুবার অধিবাসী ও মসজিদে কুবার প্রশংসা করেন আল্লাহতায়ালা। তিনি বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত, সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সংগত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১০৮)
মসজিদে কুবায় নামাজ পড়ার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) অশ্বারোহণ করে কিংবা হেঁটে মসজিদে কুবায় আগমন করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৫১) আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরাহর সমপরিমাণ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৪)
প্রতিষ্ঠার পর উসমান বিন আফফান (রা.), ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তার ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কার কাজ করেন। বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সংস্কার করা হয়। তখন ব্যাপক সৌন্দর্যায়ন ও সম্প্রসারণ হয় মসজিদটির।
মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি।
তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোনায় চারটি সুউচ্চ মিনার। ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনর্র্নির্মাণ ও সংস্কারকালে ব্যাপকভাবে সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়। মসজিদের চতুর্দিকের সবুজ পামগাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে মর্যাদাবান ও ঐতিহাসিক স্থান হওয়ায় মসজিদে কুবা মুসলিম পর্যটক ও হজযাত্রীদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান।
Comments are closed.