October 3, 2024, 10:29 pm
৭১ এর মানবতা বিরোধী ও রাষ্ট্রোদ্রহীসহ প্রায় অর্ধশত মামলা কাঁধে নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে অর্থাৎ ৬ বছরের আধিক সময়ে আত্মগোপনে আছেন সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতার ইন্দ্রনগর গ্রামের মৃত শেখ জবেদ আলীর ছেলে রাজাকার আকবর আলি।
রাজাকার আকবর আলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্থানি মিলিটারি বাহিনীদের বিশেষ সহযোগী হিসেবে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ওৎপ্রতভাবে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন সময়ে পাক বাহিনীদের সহযোগীতা করা ছাড়াও সে এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে তার দলবল নিয়ে খুন, লুন্ঠন, লুটতরাজ করেছিলো বলেও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবারে কাালিগঞ্জ উপজেলার নলতা হাটখোলায় বাজার করতে আসা ছেলে গোলাম মোস্তফার সামনেই পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের রহমাতুল্যাহকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল এই কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আকবর আলী। এব্যাপারে নিহতের ছেলে গোলাম মোস্তফা তার পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে রাজাকার আকবর আলিকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নাম্বার জি.আর-৯২/৯, কালিগঞ্জ।
কিন্তু সম্প্রতি এই রাজাকার আকবর আলীর তৎকালিন সময়ের নৃশংসতার আমলনামা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তার বড় ছেলে মহিবুল্লাহ পালাতক বাবাকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে “ প্রকৃত পক্ষে আকবর আলি মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পরামর্শে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন” এমন মনগড়া একটি প্রতিবাদ বিবৃতি প্রকাশিত করে।
কিন্তু ছেলে মহিবুল্লাহ কর্তৃক এমন প্রতিবাদ বিবৃতির সত্যতা কতটুকু তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের থেকে জানা যায়, রাজাকার আকবর আলি মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, পাকিস্থানি মিলিটারীদের সহযোগী হিসেবে তার দলবল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিলো।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল কঠর।এ ব্যাপারে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ইন্দ্রনগর গ্রামের আনসার বিশ্বাষ ঘটনার সত্যতা স্বাীকার করে বলেন, আমরা যখন দেশকে স্বাধীন করার জন্য মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্থানী মিলিটারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম তখন রাজাকার আকবর আলি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে গিয়ে পাকিস্থানি বাহিনীর সাথে থেকে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করতো। সে একজন রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিল। আমরা সবাই জানি মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় রাজাকার আকবর আলি ৬ বছরের মত পালিয়ে আছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল হাকিম রাজাকার পুত্রের দেওয়া এমন মিথ্যা বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি দেখেছি রাজাকার আকবর আলি ৭১ এ যুদ্ধবিরোধী সকল প্রকার অপরাধ কর্মকান্ডে নিয়োজিত ছিলো। আকবর আলি এলাকায় রাজাকার কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করাকালে এলাকায় বিভিন্ন নেক্কারজন কাজে তার দলবল নিয়ে লিপ্ত থাকতো। সে কখনই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করেনি।
এছাড়াও পালাতক রাজাকার আকবর আলী ২০১৩ সালে ৪ দলীয় ঐক্যজোটের ডাকা সারাদেশব্যাপী সরকার পতন আন্দোলনের নলতা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি এবং দেবহাটাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ কাটা, বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগানো, যৌথ বাহিনীর উপরে হামলাসহ একাধীক নাশকতার নেতৃত্ব এবং দেবহাটার সখিপুর মোড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাল্পনিক কবর রচনা করে তার উপরে দাড়িয়ে উল্ল্যাসে মেতে উঠেন পালাতক রাজাকার আকবর আলি।
২০১৩ সালের নাশকতার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন থানায় আকবর আলির বিরুদ্ধে ৪০ টিরও বেশি মামলায় হওয়ার পরে নিজেকে রক্ষা করতে সে তখনই আত্মগোপনে চলে যায়। তবে সে আত্মগোপনে থেকেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অলৌকিকভাবে ৩৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫০৫ টাকা কল্যান ট্রাস্ট ও অবসর ভাতা উত্তোলন করছে বলে জানা যায়।তবে জানাযায় রাজাকার আকবর আলী এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিশ^াষ করেনা। সে প্রকাশ্য স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভন্ডামি বলে আখ্যায়িত করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নানা রকম অশ্লিল বাক্য ব্যবহারও করেন তিনি।
Comments are closed.