October 23, 2024, 7:07 pm

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
মানুষ দানব হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফেরাতে হবে : রাষ্ট্রপতি

মানুষ দানব হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফেরাতে হবে : রাষ্ট্রপতি

ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে মানবসত্তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে সমাজের সব অন্ধকার দূর করতে রুয়েট গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।সনদপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, উচ্চশিক্ষা শেষে শুধু একটা ভালো চাকুরী পাওয়াই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হত পারে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজে শিক্ষিত হওয়া ও অন্যকে শিক্ষিত করা, বৃহৎ মানবতার কল্যাণ করা। তাই ব্যক্তি স্বর্থের উর্ধ্বে উঠে মানবসত্তা দিয়ে দেশকে আলোকিত করবে, বিশ^কেও সে আলোর আভায় রাঙিয়ে তুলবে।তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তাবায়নে প্রধান কারিগার হচ্ছে প্রকৌশলীরা। সুতরাং প্রকৌশলীদের স্ব স্ব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে।মাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, আমাদের বিপুল মানবসম্পদ থাকা সত্ত্বেও কারিগরী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা কাঙ্খিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ায় আমরা আশানরুভাবে এগোতে পারিনি। বর্তমান সরকার কারিগরী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্বারােপ করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে ।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এযাবতকালের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন বাজেট প্রদান ও গবেষণা বরাদ্দ প্রদান করা হচ্ছে । বিদ্যমান সুবিধাসমূহের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুণগত উচ্চশিক্ষা প্রদানে ব্রতী হবে বলে আমার বিশ্বাস।সার্টিফিকেট দেয়া এবং শিক্ষার প্রসারই শেষ কথা নয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের প্রয়োজন যুগোপযােগী শিক্ষা। বর্তমানে, প্রতিনিয়তই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাস্তব ভিত্তিক এবং প্রায়োগিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। গুণগত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সাথে ল্যাবরেটরির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি গবেষণা ও হাতে-কলমে শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয় । এ জন্য গবেষণা ও ল্যাবরেটরি কর্মের উপর অধিক মনোনিবেশ করা জরুরি।রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে ন্যানো টেকনোলোজি, রােবোটিক্স, ব্লক চেইন ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষা যাতে দেশের কল্যাণে, মানবতার কল্যাণে, ব্যবহৃত হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলে উদ্যোগী হবেন বলে আমার বিশ্বাস।’রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘কচু ছাড়া সব কিছুতেই ফরমালিন। নির্ভেজাল খাবার এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। খাদ্য ভেজালের কারণে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ হচ্ছে। এ থেকে মানুষকে ফেরাতে হবে। নইলে জাতি হিসেবে আমরা পঙ্গু হয়ে যাবো। এর হাত থেকে নিজেদেরকে বাচাতে হবে। নয়লে জাতী হিসেবে আমরা কখনই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো না।’তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ৮০-৮৫টি দেশে আমি ঘুরেছি। পৃথিবীর কোন দেশে খ্যাদ্যের মধ্যে এ ধরণের প্রতারণা কোথাও তারা করে না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত নেপালও খ্যাদ্যের মধ্যে তারা ভেজাল দেয় না। খ্যাদ্যে ভেজাল দেওয়ায় পৃথিবীর মধ্যে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে।’‘মানুষ মানুষের জন্য, একটু সহনভূতি কি পেতে পারে না’ ভূপেন হাজারিকার গানের উদ্ধুতি টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের অবস্থা মানুষই দানব হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে ফেরাতে হবে মানুষকে। এ ক্ষেত্রে গ্রাজুয়েটদের ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ তোমরা তাদের ভাল করে বোঝাতে পারবে। এদের জাগ্রত করতে হবে এ সব ব্যবহার না করার জন্য। তাদের ফেরাতে ক্যাম্পেইন করার আহবান জানান রাষ্ট্রপতি।সমাবর্তনে দেশের চিকিৎসক ও নার্সদের সমালচানা করেন রাষ্ট্রপ্রতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, পাশের দেশ ভারতের কোলকাতায় গিয়ে দেখা যাবে সেখানকার হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের ৮০ ভাগই বাংলাদেশের। সামান্য অসুখ হলেও তারা কোলকাতায় যায় চিকিৎসা করতে। কিন্তু কেন? আমাদের দেশেও তো চিকিৎসক কম নেয়।রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারতের চিকিৎসকরা রোগির পিছনে সে সময় দেয়, তাদের নার্সরা রোগির সাথে যে আচরণ করে সেটি আমাদের দেশের চিকিৎসক-নার্সরা করে না। এটা কেন হবে? এ থেকে আমাদের নিস্কৃতি পাওয়া প্রয়োজন। আমাদের রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও ছাত্রসমাজকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে বুঝাতে হবে।’রাষ্ট্রপতি ২ হাজার ৫১৬ জন স্নাতক ও পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৭০ জনকে ডিগ্রী প্রধান করে রাষ্ট্রপতি। অনুষ্টানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াটেক এডভান্সড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম শেখ।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com