October 23, 2024, 7:07 pm
সাতক্ষীরায় চায়ের দোকানে ছাত্রলীগ নেতাদের খাওয়ার বিল ২০টাকা দেওয়ার পরেও মুজাহিদুর রহমান (অন্ত) নামে এক যুবকলীগ নেতার উপরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে তার বা-হাতের চারটি আঙুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত বুধবার (১৬’ই সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরা পৌর অঞ্চলের ইটাগাছা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত যুবলীগ নেতা মুজাহিদুর রহমান (অন্ত) সাতক্ষীরা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ-সম্পাদক ও ইটাগাছা এলাকার আবুল হাসানের ছেলে। এঘটনায় অন্ত’র পিতা আবুল হাসান বাদি হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে মুজাহিদুর রহমান অন্ত’র পিতা আবুল হাসান জানান, গত বুধবার (১৬ই সেপ্টেম্বর) সকালে সাতক্ষীরা পৌর অঞ্চলের বাকাঁল এলাকায় অবস্থিত রোজ মার্কেটের এক চায়ের দোকানের বিল পরিশোধের জন্য আমার ছেলে মুজাহিদুর রহমান অন্ত’র নিকট হতে ২০ টাকা গ্রহণ করে সাতক্ষীরা পৌর অঞ্চলের ইটাগাছা এলাকার মৃত্য গিয়াজউদ্দীনের ছেলে ও ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ হোসেন, একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে ও ৭নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক জাহিদ হোসেন এবং পুরাতন সাতক্ষীরার বাবু তালুকদারের ছেলে সোহেল রানা।
তাদের দাবিকৃত ২০টাকা দেওয়ার পরেও ছাত্রলীগের নাহিদ হোসেন, জাহিদ হোসেন ও সোহেল রানার সাথে আমার ছেলের মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এর একপর্যায়ে ঘটনার দিন দুপুরে মুজাহিদুর রহমান অন্ত প্রয়োজনীয় কাছে শহরের উদ্দেশ্য রওনা দিলে ছাত্রলীগের নাহিদ, জাহিদ, রানাসহ অজ্ঞাত ৪/৫জন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্রহাতে অন্তর পথরোধ করে তাকে এলোপাথাড়ি ভাবে মারপিট করতে থাকে।
একপর্যায়ে তাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মুজাহিদুর রহমান অন্তর বা-হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে যেয়ে চামড়ার সাথে ঝুলে থাকে। এসময় অন্তর আত্মচিৎকারে তার (অন্তর) স্ত্রী সানজিদা খাতুন ছুটে এলে তারা তাকেও মারপিট করতে থাকে। তবে স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এলে ছাত্রলীগের নাহিদসহ তার সন্ত্রাসীবাহিনী পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা গুরুত্বর আহত অবস্থায় মুজাহিদুর রহমান অন্তকে দ্রুত উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তবে হাত থেকে আঙুলের হাড় পুরোপুরি ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এসময় তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা, চি›িহত সন্ত্রাসী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক সাদিকুর রহমানের দেহরক্ষী হিসেবে জেলাব্যাপী পরিচিত নাহিদ হোসেন ও জাহিদ হোসেন। বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা সাদেকের ছত্রছায়ায় থেকে তারা (নাহিদ-জাহিদ বাহিনী) বিভিন্ন সময় জেলার বিভিন্ন জায়গায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন মহলের সার্পোট থাকাই তাদের এসমস্ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদ করতে ভয় পেতো তাদের নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার পরিবারগুলো। অভিযোগ রয়েছে সাদেকের নেতৃত্বে বিকাশ এজেন্টের যে টাকা ছিনতাই করা হয়েছিলো সেটাতে জড়িত ছিলো নাহিদ ও জাহিদ।
এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও সাতক্ষীরার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে পার পেয়ে যায় তারা। তবে বিতর্কিত নানা কর্মকান্ডে ছাত্রলীগ নেতা সাদিকুর রহমান দল থেকে বহিঃস্কার হওয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার হলে দীর্ঘদিনযাবৎ আত্মগোপনে ছিলেন অভিযুক্ত এসমস্ত ছাত্রলীগের নেতারা।
তবে সময়ের পরিক্রমায় পুনরায় তারা পৌর অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসতো। তবে যুবলীগ নেতা মুজাহিদুর রহমান অন্ত তাদের এসমস্ত অপর্কমের প্রতিবাদ করতো। এনিয়ে উভয়পক্ষের ভিতরে দীর্ঘদিনধরে মনোমালিন্য চলে আসতেছিলো। আর এঘটনার সূত্রধরে মুজাহিদুর রহমান অন্তর হাতের আঙুল কেটে নেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছাদুজ্জামান বলেন, যুবলীগ নেতার বা-হাতের আঙুল কেটে নেওয়ার ঘটনায় একটি এজাহার দায়ের হয়েছে। দ্রুত সময়ের ভিতরে আসামীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।
Comments are closed.