October 31, 2024, 3:11 am
একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার প্রায় ১০ বছর পর মুক্তি পেয়েছেন জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার স্কুলশিক্ষক আজমত আলী (৭৪)।মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আজমত আলীকে জামালপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।স্কুলশিক্ষক আজমত আলীর বাড়ি সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে।তার মুক্তির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর জেলা কারাগারের সুপার মো. মকলেছুর রহমান মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আজমত আলীকে মুক্তি দিয়ে তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।এ সময় পরিবারের সদস্যদের মাঝে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যাবজ্জীবন সাজার রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আজমত আলীর করা আবেদন নিষ্পত্তি করে গত ২৭ জুন এক রায়ে তাকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।ওই আদেশে আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেয়ার পরও তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক।প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে মুক্তির নির্দেশ দিলেও সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে এই রায়ের কপি প্রকাশিত হয়।জরুরি ডাকযোগে পাঠানো সেই রায়ের কপি মঙ্গলবার সকালে হাতে পান জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মকলেছুর রহমান। এরপরই তিনি আজমত আলীকে দ্রুত কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আজমত আলী মুক্তি পেয়ে কারাগারের বাইরে বের হয়ে আসলে তার বড় মেয়ে বিউটি খাতুন বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।বিউটি খাতুন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না যে কেমন লাগছে। আমার বাবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পরও সম্পূর্ণ মিথ্যাভাবে তাকে প্রায় ১০ বছর জেল খাটতে হলো।‘বাবার মুক্তির জন্য আইনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের অর্থসহ অনেক ক্ষতি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড শাখার আইনজীবীরা আমাদের পাশে না দাঁড়ালে হয়তো আমার বাবাকে জীবিতই দেখতে পেতাম না।’ আজমত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার জীবনটা তো জেলেই কাটলো। কেন আমার জীবন থেকে ১০টি বছর হারিয়ে গেল? জেলখানার কর্তৃপক্ষসহ অনেকেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তা নাহলে হয়তো আমি জেলেই মারা যেতাম। আমাকে যারা চক্রান্ত করে জেল খাটাইলো তাদের বিচার দাবি করছি।’জেল সুপার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার পর আমরাই তার মুক্তির ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট শাখা লিগ্যাল এইডে পাঠাই আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুনকে। বিউটি খাতুন সেই লিগ্যাল এইড কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেয়েছে বলেই আজ তিনি মুক্তি পেলেন।‘মঙ্গলবার সকালে তার মুক্তির রায়ের কপি হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে মুক্তি দিয়ে পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি।’মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচার শেষে ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এক রায়ে আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।আজমত আলী সে সময় টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী।এদিকে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতির দেয়া এক বিশেষ আদেশের পর ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এর কয়েক বছর পর ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন।হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগ ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমত আলীকে গ্রেফতার করা হয়।সেই থেকে আজমত আলী কারাবন্দি ছিলেন।২০১০ সালের ১১ আগস্ট আপিল বিভাগ আজমত আলীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। এ অবস্থায় রিভিউ আবেদন করেন তিনি।সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয় তাকে আইনি সহায়তা দেয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।ওই রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ জুন আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
Comments are closed.