October 31, 2024, 3:13 am
ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ২০১৯ এর তৃতীয় পরীক্ষায় জালিয়াতি করে পরীক্ষা দেওয়ার সময় হাতেনাতে ৪ শিক্ষার্থীসহ এক দালালকে আটক করেছে শ্যামনগর উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার নাহিদ হাসান খান। ১৯ নভেম্বর সোমবার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া নাগবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটে। আটক হওয়া চার শিক্ষার্থী শ্যামনগর উপজেলার ৬৯ নম্বর বংশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মডেল একাডেমী এবং সাতক্ষীরার তাব ইবনে মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। এসময় হাবিবুল্লাহ গাজী নামের ১ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী ব্রম্যশাসন ইবতেদায়ী মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। আটককৃত ছাত্রছাত্রীরা যথাক্রমে বুশরা আক্তার মিম, সুমাইয়া পারভীন, আতিক হাসান ও মোহাম্মদ আহমদ উল্লাহ। তারা যথাক্রমে খাদিজা আক্তার, নাসিমা খাতুন, সাগর রহমান ও ফারুক হোসেন নামে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন। আটককৃত ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে দালাল হাবিবুল্লা গাজীকে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০ এর নয় এর ধারা অনুযায়ী দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার নাহিদ হাসান খানের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত। একই সাথে উক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক এবং এই জালিয়াত চক্রের মূল হোতা ভুরুলিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মাহাতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে নিয়মিত মামলা করার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি এর নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট সূত্রে আরও জানানো হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে তদন্ত টিম পুরো ঘটনার তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র আরও জানিয়েছে যেসব শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে আটককৃত ৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন তাদের এ বছর আর সংশ্লিষ্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। উল্লেখ্য বুশরা আক্তার ৬৯ নম্বর বংশীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয এর তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। একইভাবে সুমাইয়া পারভীন ঐ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে, আতিক হাসান জোবেদা সোহরাব মডেল একাডেমীর ষষ্ঠ শ্রেণীতে এবং মোহাম্মদ আহমাদুল্লাহ সাতক্ষীরা এর তাব ইবনে মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেন। সুত্রমতে ব্রম্যশাসন ইফতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান মহাতাব উদ্দিন দৈনিক ৫০০ টাকার বিনিময়ে এসব শিক্ষার্থীদের জালিয়াতি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ঠিক করেন। হাবিবুল্লা গাজী জানান তিনি এসব বাচ্চাদের প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাকে দিয়েই মাহাতাব উদ্দিন পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি নাহিদ হাসান খান জানান অন্যের পক্ষে পরীক্ষা দিতে আসা চার শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে পরবর্তীতে পরিবারের অভিবাবকের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুদের আনন্দ আর কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে হাবিবুল্লাহ দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এছাড়া ব্রম্য শাসন ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক মাতাব উদ্দিন এর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের উপর দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য হাবিবুল্লাহ গাজী শ্যামনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের মোহাম্মদ ইউসুফ আলী গাজীর ছেলে এবং মাহাতাব উদ্দিন ভুরুলিয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি আরো জানান পাঁচশত টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে এসব শিশুকে অন্যের জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মাহাতাব উদ্দিন সম্মত করিয়াছিলেন।
Comments are closed.