October 23, 2024, 7:08 pm
প্রথমে প্রেম ভালবাসা। তারপর পরকীয়া। আর এই সূত্র ধরেই পুলিশ সদস্য আবদুল আলিমের হাতে খুন হয়েছে আমার মেয়ে রিপনা ও নাতনি মুন্নী খাতুন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে একথা বলেই মেহেরুননেছা বলেন আলিম আমার পরিবারের মোট তিনজনকে খুন করেছে। এখন সে ও তার সহযোগীরা আমাকেও খুন করতে চায়। অথচ এ খুনের কোনো বিাচার হলো না এতোদিনেও।শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে একথা বলেন ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের মেহেরুননেছা। তিনি বলেন সাতক্ষীরায় এসেছি অনেক ভয়ে ভয়ে কারণ আলিমের লোকজন আমাদের অনুসরণ করছে।মেহেরুন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন আমার মেয়ে রিপনার সাথে বিবাহপূর্ব ভালবাসা ছিল একই গ্রামের আলিমের। একদিন আমার মেয়েকে কৌশলে ডেকে নিয়ে আলিম তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হলে আমরা তার ওপর চাপ দেই রিপনাকে বিয়ে করার। সে রাজী না হওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতেও ব্যর্থ হই গ্রাম মোড়লদের চাপের মুখে। এরপরই আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেই আমার ভাতিজা আবু মুসার সাথে। তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে, নাম মুন্নী খাতুন। তিনি বলেন আবদুল আলিম সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানায় চাকুরিরত অবস্থায় শ্যামনগর উপজেলার খানপুরে বিয়ে করে। বিয়ের পরও আলিম আমার মেয়ের সাথে মোবাইলে পরকীয়া প্রেমজ সম্পর্ক রাখতো। এক মাসের মোবাইল কললিস্টে দেখা গেছে আলিম তার স্ত্রীর সাথে ৩৩ বার আর আমার মেয়ের সাথে ৩২৪ বার কথা বলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন ২০১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আমার মেয়ে নাতনিকে নিয়ে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাতে যায়। এরপর থেকে সে ছিল নিখোঁজ। এ বিষয়ে স্বামী আবু মুসা মহেশপুর থানায় একটি জিডি করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি তারা জানতে পারেন যাদবপুর গ্রামের শালি খাতুন ও রোকেয়া তাকে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে আবদুল আলিমের কাছে তুলে দিয়েছে।কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি আরও বলেন হঠাৎ আমরা জানতে পারি সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ছুটিপুর গ্রামে ইছামতি নদীর চরে মাটিতে পুঁতে রাখা নাতনি মুন্নী খাতুনের (৫) লাশ এবং এর তিনদিন পর কালিগঞ্জ উপজেলার হাড়দ্দহা গ্রাম সংলগ্ন কালিন্দি নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রিপনার (২২) পচা গলা লাশ। এ ঘটনায় কালিগঞ্জ থানা ও দেবহাটা থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। নিহতদের সাতক্ষীরা সরকারি গোরস্থানে দাফন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন এই দুই হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আব্দুল আলিমকে গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। কিছুদিন পর সে জামিনে ফিরে আসে। আবদুল আলিম এখন সাসপেন্ড অবস্থায় রয়েছে। একদিকে সে বারবার সে মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বলছে মামলা থেকে সরে না এলে আরও খুন হবে।মেহেরুননেছা বলেন গত ৩ অক্টোবর আমি আমার ভাতিজা শাকিলকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরার আদালতে এসেছিলাম। এ সময় আলিম ও তার সহযোগীরা আমাদের ওপর হামলা করে। স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা পালিয়ে আসি। এ বিষয়ে গত ৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা থানায় আমি একটি এজাহার দেই। এ খবর জানাজানি হতেই ১৫ অক্টোবর আলিম ও তার সহযোগীরা মেহেরুনকে হত্যার উদ্দেশ্য তার বাড়িতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। এতে প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনা ব্যবস্থা নিতে সাহস করেন নি তিনি।আমি আমার মেয়ে রিপনা ও নাতনি মুন্নী হত্যার বিচার চাই জানিয়ে মেহেরুন বলেন পুলিশ সদস্য আলিমের বাবা আবদুল খালেক আমার ভাই হযরত আলিকে খুন করে বাড়ির বারান্দায় পুঁতে রাখে। পরে পাশের একটি বাগানে বস্তায় পুরে লাশটি দ্বিতীয় দফায় পুঁতে রখে। এ ঘটনায় খালেক গ্রেফতার হয়। সাজাও হয় তার। এই আলিম পরিবার আমার পরিবারের তিনজনকে হত্যার পর এবার আমাকেও খুন করতে চায় অভিযোগ করে তিনি বলেন আমি এর বিচার দেখে যেতে চাই। মেহেরুননেছা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য আলিমের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
Comments are closed.